খালিস্তান আন্দোলনের নেতা হরদীপ সিং নিজ্জরের হত্যাকাণ্ড নিয়ে কানাডার অভিযোগের জবাবে ভারতের অসন্তুষ্টির স্পষ্ট বার্তা দিলেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। আজ মঙ্গলবার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশনে ভাষণে এ বিষয়ে কথা বলেন তিনি। জয়শঙ্কর বলেন, রাজনৈতিক স্বার্থে কখনো সন্ত্রাসবাদ, সহিংসতা ও উগ্রপন্থাকে সমর্থন করা উচিত নয়।
জয়শঙ্কর তাঁর ভাষণে কোনো দেশের নাম নেননি। তবু বুঝতে অসুবিধা হওয়ার নয়, কানাডার অভিযোগের জবাবে ভারত আনুষ্ঠানিক যে জবাব দিয়েছিল, হরদীপ সিং হত্যায় ভারতের হাত থাকার অভিযোগ নিতান্তই রাজনৈতিক স্বার্থের কারণে, সেটাই জাতিসংঘের আসরেও বলেছেন তিনি। ভাষণে জয়শঙ্কর বলেন, টিকার (কোভিড-১৯) ক্ষেত্রে বর্ণবাদের মতো অবিচারের পুনরাবৃত্তি হতে দেওয়া যায় না। জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালনকে এড়িয়ে যেতে দেওয়া যায় না। বাজার দখলের শক্তি খাটিয়ে দুর্বলদের অভুক্ত রাখা অনুচিত উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক স্বার্থকেও কখনো সন্ত্রাসবাদ, সহিংসতা ও উগ্রপন্থা মোকাবিলার বিষয়গুলো নির্ধারণ করতে দেওয়া যায় না।’
জয়শঙ্কর আরও বলেন, আঞ্চলিক অখণ্ডতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকা এবং কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ নিজেদের সুবিধা অনুযায়ী ব্যবহার করা যায় না। মুখে যা বলা হচ্ছে, তার সঙ্গে বাস্তবের অমিল দেখা দিলে তা দেখানোর মতো সৎসাহস থাকা দরকার।
গত জুনের মাঝামাঝিতে কানাডায় দেশটির নাগরিক হরদীপ সিং নিজ্জরকে গুলি করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। এ হত্যাকাণ্ড ঘিরে সম্প্রতি ভারত-কানাডা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অবনতিই শুধু ঘটেনি, বিশ্বাসের ঘাটতিও দেখা দিয়েছে। কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো সে দেশের সংসদে এক বিবৃতিতে ওই হত্যায় ভারতের হাত থাকার বিষয়ে ঘোরতর সন্দেহ প্রকাশ করেন। পশ্চিমা মিত্রদের কাছ থেকে ওই বিষয়ে তথ্য পাওয়ার কথাও তিনি স্বীকার করেছেন। সেই সঙ্গে তিনি আশা প্রকাশ করেন, প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটনে ভারত সহযোগিতা করবে।
ট্রুডোর অভিযোগ নাকচ করে একে ‘উদ্ভট ও রাজনৈতিক স্বার্থে পক্ষপাতদুষ্ট’ বলেছে ভারত সরকার। নয়াদিল্লির পক্ষ থেকে বলা হয়, কানাডার কাছে উপযুক্ত তথ্যপ্রমাণ থাকলে তা দেওয়া হোক। বিষয়টি নিয়ে পাল্টাপাল্টি বক্তব্যে দুই দেশের সম্পর্ক তলানিতে এসে ঠেকেছে। এ পরিস্থিতিতে ট্রুডোর উপস্থিতিতে জাতিসংঘের বার্ষিক আসরে জয়শঙ্কর কী বার্তা দেন, সেদিকে অনেকের নজর ছিল।
ভারত জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে স্থায়ী সদস্যপদের দাবিদার। এ পরিস্থিতিতে ভারতের বিরুদ্ধে ট্রুডোর অভিযোগ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। জয়শঙ্কর তাঁর ভাষণে কারও নাম উল্লেখ না করে সেই অভিযোগের জবাব দেওয়ার পাশাপাশি বর্তমান বিশ্বে ভারতের অবস্থানের গুরুত্ব তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘যখন আমরা এক বিশ্ব, এক পরিবার, এক ভবিষ্যতের কথা বলি, তখন তার লক্ষ্য থাকে গোটা পৃথিবী, সামান্য কয়েকজনের স্বার্থ নয়। প্রকৃত সংহতি ছাড়া বিশ্বাসের আধার তৈরি হয় না। এটাই দক্ষিণ গোলার্ধের অনুভূতি।’ বিশ্ব বর্তমানে ভারতকে সমস্যার সমাধানকারী দেশ হিসেবে গণ্য করছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।