রাষ্ট্রপতির দেওয়া নৈশভোজে কংগ্রেস সভাপতি খাড়গে বাদ

মল্লিকার্জুন খাড়গে
ছবি : রয়টার্স

সবচেয়ে পুরোনো ও প্রধান বিরোধী দলের সভাপতি হওয়া সত্ত্বেও প্রেসিডেন্ট দ্রৌপদী মুর্মুর নৈশভোজে আমন্ত্রণ পাননি কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে। তিনি রাজ্যসভারও বিরোধী নেতা। এ নিয়ে রাজনৈতিক আলোচনা শুরু হয়েছে।

জি–২০ শীর্ষ সম্মেলনে অতিথি–অভ্যাগতদের সম্মানে রাষ্ট্রপতি মুর্মু কাল শনিবার ভারত মণ্ডপমে নৈশভোজ দিচ্ছেন। সেখানে দেশের প্রধানমন্ত্রীসহ কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সদস্য, সব রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের রাজ্যপাল ও উপরাজ্যপাল, মুখ্যমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় সরকারের সব সচিবকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

গণতান্ত্রিক ভারতের প্রধান বিরোধী দলের সভাপতিকে কেন আমন্ত্রণ জানানো হয়নি, সে বিষয়ে সরকারি প্রতিক্রিয়া, কোনো রাজনৈতিক দলের সভাপতিকেই আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং ও এইচ ডি দেবগৌড়া অবশ্য আমন্ত্রিত; যদিও দেবগৌড়া জানিয়েছেন, শরীর ভালো নেই বলে তিনি নৈশভোজে যোগ দিতে পারবেন না।

‘স্বাস্থ্যগত’ কারণে বিরোধী দলের অনেক মুখ্যমন্ত্রীও নৈশভোজে থাকছেন না। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন কংগ্রেসের তিন মুখ্যমন্ত্রী—রাজস্থানের অশোক গেহলট, ছত্তিশগড়ের ভূপেশ বাঘেল ও কর্ণাটকের সিদ্দারামাইয়া। হিমাচল প্রদেশের কংগ্রেস মুখ্যমন্ত্রী সুখবিন্দর সিং সুখু অবশ্য উপস্থিত থাকবেন বলে জানিয়েছেন। কেরালার মুখ্যমন্ত্রী সিপিএম নেতা পিনারাই বিজয়নের না থাকার সম্ভাবনা প্রবল।

অন্ধ্র প্রদেশ, তেলেঙ্গানা ও ওডিশার মুখ্যমন্ত্রীরা বিজেপি জোটের যেমন শরিক নন, তেমনই বিরোধী ইন্ডিয়া জোটেও নেই। কিন্তু তাঁরাও সম্ভবত শনিবারের নৈশভোজে যোগ দিচ্ছেন না। অন্ধ্র প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী জগনমোহন সপরিবার স্কটল্যান্ড যাচ্ছেন। ফিরবেন আগামী মঙ্গলবার। তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাও ও ওডিশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েক কেন থাকবেন না, সে বিষয়ে স্পষ্ট করেননি। তাঁদের অফিস জানিয়েছে, না থাকার সম্ভাবনাই বেশি।

আম আদমি পার্টির দুই মুখ্যমন্ত্রী দিল্লির অরবিন্দ কেজরিওয়াল ও পাঞ্জাবের ভগবন্ত সিং মান যোগ দেবেন কি না, তা–ও নিশ্চিত নয়। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিল্লির নৈশভোজে দিল্লি আসার ঘোষণা আগেই করেছেন। নৈশভোজের আসরে তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানিয়েছেন। মমতা দিল্লি এলে কেজরিওয়াল তাঁর সঙ্গে দেখা করবেন।

ইন্ডিয়া জোটের অন্য দুই মুখ্যমন্ত্রী ঝাড়খন্ডের হেমন্ত সরেন ও তামিলনাড়ুর এম কে স্ট্যালিন নৈশভোজে যোগ দেওয়ার কথা জানিয়েছেন। বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার কী করবেন, তা নিয়ে কিছুটা অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছিল; যদিও এখন শোনা যাচ্ছে তিনি আসবেন।

মজার বিষয় এই যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রীসহ যাঁরাই এই নৈশভোজে আমন্ত্রিত, তাঁদের কেউই নিজস্ব বাহনে প্রগতি ময়দানে সম্মেলনস্থল ভারত মণ্ডপমে যেতে পারবেন না। প্রত্যেককেই শনিবার সন্ধ্যা সোয়া ছয়টার মধ্যে সংসদ ভবনে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। সেখান থেকে বিশেষ গাড়িতে তাঁদের ভারত মণ্ডপমে নিয়ে যাওয়া হবে। ফেরত আনাও হবে ওইভাবে।

জি–২০–র ‘অ্যাকশন এরিয়া’ নিউ দিল্লি জেলা আজ শুক্রবার সকাল থেকেই মানবশূন্য। দিল্লি বিমানবন্দর থেকে যে রাস্তা শহরে এসেছে, তাতে অতিথি ছাড়া আর কোনো গাড়ির প্রবেশ নিষেধ। দিল্লি পুলিশ ওই রাস্তার সংযোগকারী রাস্তাগুলো প্রয়োজনমতো বন্ধ করে দেবে বলে জানিয়ে দিয়েছে। সমগ্র দিল্লিতে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে যাতে বিনা প্রয়োজনে কাউকে রাস্তায় বেরোতে না হয়। আজ সকাল থেকেই দিল্লি সুনসান, যেন জারি হয়েছে অঘোষিত কারফিউ।

কাল সকালে শুরু শীর্ষ বৈঠক। ভারত মণ্ডপমে সব অতিথিকে ব্যক্তিগতভাবে স্বাগত জানাবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ওই দিন নৈশভোজের শুরুতে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। আয়োজকদের পক্ষে জানানো হয়েছে, ভারত মণ্ডপমে সব মিলিয়ে অন্তত ১০ হাজার জন সমবেত হবেন।