ভারতের উত্তরাখন্ড রাজ্যের হলদোয়ানি শহরে বেআইনি স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযানকে কেন্দ্র করে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। আহতের সংখ্যা ২৫০। গোটা শহরে কারফিউ জারি করা হয়েছে। দুষ্কৃতদের উসকানি রুখতে দেখামাত্র গুলি চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ইন্টারনেট পরিষেবা।
ঘটনার সূত্রপাত গত বৃহস্পতিবার। হলদোয়ানি শহরের বনভুলপুরা এলাকায় একটি মাদ্রাসা ও মসজিদ ভাঙতে যান স্থানীয় সরকারি কর্মীরা। সরকারি ভাষ্যে, ওই মাদ্রাসা ও মসজিদ সরকারি জমিতে ‘বেআইনিভাবে তৈরি’। আদালতের নির্দেশ পেয়ে প্রশাসন তা ভাঙতে ও জবরদখলকারীদের উচ্ছেদ করতে গেলে উত্তেজনা দেখা দেয়। স্থানীয় জনতা প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। শুরু হয় দুই পক্ষে সংঘর্ষ।
সংঘর্ষে দুজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ২৫০ জন। দুই পক্ষের মধ্যে বহুক্ষণ ধরে ইট–বৃষ্টি চলে। জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশকেও বল প্রয়োগ করতে হয়। সেই সংঘর্ষে ৫০ জনের বেশি পুলিশ কর্মী আহত হন। আহতদের মধ্যে সরকারি কর্মী ও সাংবাদিকেরাও রয়েছেন।
স্থানীয় পুলিশ কর্তা গণমাধ্যমকে বলেন, কোর্টের আদেশ হাতে নিয়ে পুলিশি প্রহরায় স্থানীয় প্রশাসন বুলডোজার নিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু জনতার সক্রিয় প্রতিরোধে তা সম্ভবপর হয়নি। সংঘর্ষ চলাকালে নিরাপত্তারক্ষীদের বাসসহ ২০টির বেশি যানবাহন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কোনো কোনোটিতে আগুন ধরানো হয়েছে। একটি থানাও আক্রান্ত হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামি বলেছেন, সরকার আদালতের রায় কার্যকর করতে গিয়েছিল। কিন্তু দুষ্কৃতকারীরা তা হতে দেয়নি। তারা পুলিশের ওপর হামলা করেছে। পরিস্থিতির মোকাবিলায় বাড়তি বাহিনী পাঠানো হয়েছে।
এই উচ্ছেদ অভিযান রুখতে উত্তরাখন্ড হাইকোর্টে এক জনস্বার্থ মামলার শুনানি ছিল গতকাল বৃহস্পতিবারই। হাইকোর্ট শুনানি অব্যাহত রাখলেও উচ্ছেদ অভিযান স্থগিত রাখার নির্দেশ দেননি। পরবর্তী শুনানি ১৪ ফেব্রুয়ারি।
উত্তরাখন্ড রাজ্যের বিধানসভায় দুই দিন আগেই পাস হয়েছে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি বিল। সেই বিলে বিবাহ, বিবাহবিচ্ছেদ, দত্তক গ্রহণ, সম্পত্তির অধিকার জাত ও ধর্মনির্বিশেষে অভিন্ন করার কথা বলা হয়েছে। রাষ্ট্রপতির সম্মতি পেলেই তা আইনে পরিণত হবে। ওই আইনের বিরোধিতা করেছে মুসলিম সমাজ। ওই আইন নিয়ে মুসলমানদের মনে অসন্তোষ রয়েছে। এর মধ্যেই শুরু উচ্ছেদ অভিযানকে কেন্দ্র করে নতুন উত্তেজনা।