ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার আর জি কর হাসপাতালে শিক্ষানবিশ চিকিৎসককে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনার রেশ এখনো কাটেনি। এরই মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগরে নয় বছরের শিশুকে ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় রাজ্যে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে।
গত শুক্রবার বেলা আড়াইটায় কোচিং সেন্টারে পড়তে যায় চতুর্থ শ্রেণির ওই ছাত্রী। একাই বিকেল পাঁচটার দিকে কোচিং সেন্টার থেকে ফেরে সে। বাবার সঙ্গে নিজেদের দোকানে দেখা বাড়ির উদ্দেশে রওনা হয় ওই ছাত্রী। এরপর থেকে তার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না।
এরপর আত্মীয়-স্বজন হন্যে হয়ে ছোটে নিকটবর্তী পুলিশ ফাঁড়িতে। সেখান থেকে জয়নগর থানায় যেতে বলা হয়। সেখানে লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পর রাত ১২টার দিকে পুলিশ এফআইআর আর দায়ের করে। শেষ রাতে একটি জলাশয় থেকে উদ্ধার করা হয় ওই শিশুর ক্ষতবিক্ষত দেহ।
এরপর মরদেহ রাখা হয় পদ্মেরহাট গ্রামীণ হাসপাতালে। এ সময় হাসপাতালের সামনে ব্যাপক বিক্ষোভ করেন বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী ও সমর্থকেরা। একপর্যায়ে বিক্ষোভকারী ও পুলিশের সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। যদিও পুলিশ সন্দেহভাজন হিসেবে ১৯ বছরের এক তরুণকে গ্রেপ্তার করেছে।
এ ছাড়া দাবি ওঠে, ওই শিশুর ময়নাতদন্ত করতে হবে কেন্দ্রীয় সরকারের অধীন কোনো নামী হাসপাতালে। নইলে আর জি কর হাসপাতালের ঘটনার মতো সব তথ্য-প্রমাণ লোপাট হয়ে যাবে।
বিভিন্ন সংগঠনের দাবির মুখে কলকাতা হাইকোর্টে দায়ের হওয়া মামলায় রোববার বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ এক আদেশে বলেন, ওই শিশুর ময়নাতদন্ত হবে পশ্চিমবঙ্গের কল্যাণীর অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সেস-এইমস হাসপাতালে। অবশ্য ওই হাসপাতালে ময়নাতদন্তের সার্বিক অবকাঠামো না থাকায় তবে ময়নাতদন্ত হবে কল্যাণী জেএমএন হাসপাতালে। তবে ময়নাতদন্ত করবেন এইমস-এর চিকিৎসকেরা।
এ সময় জেএমএন হাসপাতালের কোনো চিকিৎসক, নার্স বা স্বাস্থ্যকর্মী উপস্থিত থাকতে পারবে না। ময়নাতদন্ত করার সময় উপস্থিত থাকবেন বারইপুরের এসিজেম বা অতিরিক্ত বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট। ময়নাতদন্ত হবে ভিডিওগ্রাফির মাধ্যমে। এ সময় শিশুর মা-বাবাকে উপস্থিত থাকার কথা বলা হয়েছে।
একই সঙ্গে বিচারপতি পুলিশকে প্রশ্ন করেন, কেন এই মামলায় শিশুদের যৌন নির্যাতনের আইন ‘পকসো’র ধারা যুক্ত করা হয়নি? বিচারপতি এই মামলা অবিলম্বে পকসো আদালতে স্থানান্তরেরও নির্দেশ দিয়েছেন।
এদিকে, এই ঘটনার প্রতিবাদে রোববার বিজেপির যুব মোর্চা কুলতলি থানা ঘেরাও করতে গেলে পুলিশের সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এ ছাড়া বিজেপির যুব মোর্চার নেতা-কর্মীরা বিকেলে রাজ্যের মন্ত্রী শশী পাঁজার বাসভবনের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছেন।
অন্যদিকে, আর জি কর হাসপাতালে শিক্ষানবিশ চিকিৎসককে ধর্ষণের পর হত্যার প্রতিবাদে এবং ১০ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে জুনিয়র চিকিৎসকদের শনিবার রাত থেকে শুরু হওয়া আমরণ অনশনের রোববার ছিল দ্বিতীয় দিন।
অবশ্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গতকাল কলকাতায় এক পূজামণ্ডপ উদ্বোধন করতে গিয়ে বলেন, ‘আমি চাই, তিন মাসের মধ্যে শিশুর হত্যাকারীর ফাঁসি হোক। এভাবে শিশুকে হত্যা মেনে নেওয়া যায় না।’
খুন হওয়া শিশুর মা-বাবা দাবি করেছেন, তাঁদের নাবালিকা শিশুর হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করুক কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা-সিবিআই। তাঁরা তদন্তের জন্য রাজ্য পুলিশের ওপর আস্থা রাখতে পারছেন না।