ওডিশার পুরীর ঐতিহাসিক জগন্নাথমন্দিরের রত্নভান্ডারের গোপন কুঠুরির দরজা গত রোববার দুপুরে খোলা হয়েছে। ৪৬ বছর পর ভারতের পুরাতত্ত্ব সংরক্ষণ বিভাগের পরামর্শে রোববার বেলা ১টা ২৮ মিনিটে ‘পবিত্র মুহূর্তে’ খোলা হয় গোপন কুঠুরির বহির্বিভাগের দরজা। আর চাবি পাওয়া না যাওয়ায় তালা ভেঙে অন্তর্বিভাগ বা অন্দরমহলের দরজাটি খোলা হয় বিকেলে।
অন্দরে সংস্কারকাজ ও রত্নভান্ডারের মণি-মুক্তা ও স্বর্ণালংকারের হিসাব-নিকাশ করার জন্য গোপন কুঠুরি দুটি খোলা হয়। রত্নভান্ডারের দরজা খোলার সঙ্গে সঙ্গে ঝাঁকে ঝাঁকে বাদুড় বেরিয়ে আসে। প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, সেখানে অনেক সাপ থাকার কথা থাকলেও কোনো সাপ ছিল না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
রত্নভান্ডারের গোপন কুঠুরির দরজা সর্বশেষ খোলা হয়েছিল ১৯৭৮ সালে। ওই সময় সব রত্নভান্ডার ঠিকঠাক আছে কি না, হিসাব করে দেখা হয়েছিল।
বিচারপতি বিশ্বনাথ রথকে চেয়ারম্যান করে রত্নভান্ডারের গোপন কুঠুরির দরজা খোলার জন্য ১১ সদস্যের একটি বিশেষ কমিটি গঠন করা হয়েছিল। কমিটিতে জগন্নাথমন্দির কমিটির মুখ্য প্রশাসক অরবিন্দ পাথি, পুরীর মহারাজা গজপতির প্রতিনিধিসহ অন্যরা রয়েছেন। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মোহন চরণ মাঝি ওডিশাবাসীর জন্য প্রভু জগন্নাথ দেবের আশীর্বাদ প্রার্থনা করেছেন।
পুরীর জগন্নাথমন্দিরের ধনরত্ন গচ্ছিত আছে এই দুই কুঠুরিতে। কথিত আছে, ওই গোপন কুঠুরিতে দ্বাদশ শতকের পুরীর মন্দিরের প্রচুর ধনরত্ন ও মণিমুক্তা সংরক্ষিত রয়েছে। রত্নভান্ডারের ধনরত্ন বের করে রাখার জন্য মন্দির প্রাঙ্গণে আনা হয়েছে ছয়টি বড় মাপের কাঠের সিন্দুক।
১৯৭৮ সালের তথ্য অনুযায়ী, বাইরের কুঠুরিতে সব মিলিয়ে সোনার ১৫০টি অলংকার, প্রভু জগন্নাথ, বলভদ্র ও সুভদ্রার তিনটি সোনার মুকুট, দেড় কেজি ওজনের তিনটি সোনার নেকলেস, ৯ দশমিক ৫৪ কেজি ওজনের জগন্নাথ দেবের হাত, ৮ দশমিক ২৮ কেজি ওজনের বলভদ্রের সোনার পা, ৭৩ দশমিক ৬৪ কেজি ওজনের রুপার অলংকারসহ অনেক রত্ন-মাণিক্য ছিল।
ভেতরের ভান্ডারে ছিল ১৮০টি অলংকার, প্রতিটি সোনার অলংকারের গড় ওজন ১ কেজির বেশি। এ ছাড়া ছিল তিন দেব-দেবীর সোনার বাসন, মুক্তা, হীরা। এখন সুবিধামতো সময়ে সব ধনরত্ন গুণে দেখা হবে। তালিকা ধরে মিলিয়ে দেখা হবে সব ঠিকঠাক আছে কি না।