আম আদমি পার্টি (আপ) আগেই জানিয়েছিল, প্রয়োজনে কারাগার থেকেই সরকার চালাবেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। সেই অনুযায়ী এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি) হেফাজত থেকেই সরকার চালানোর দ্বিতীয় নির্দেশ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী।
এদিকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাসভবন ঘেরাওয়ের আপের কর্মসূচি বানচাল করে দিয়েছে দিল্লি পুলিশ। এ ছাড়া বিক্ষোভের অনুমতি না দিয়ে বিক্ষোভ–সমাবেশের স্থানে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী সৌরভ ভরদ্বাজ আজ মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রীর দ্বিতীয় নির্দেশের কথা জানিয়ে বলেন, মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন মহল্লা ক্লিনিকগুলোয় বিনা মূল্যে দেওয়া ওষুধের জোগান ও রোগের পরীক্ষা যেন কোনোভাবে ব্যাহত না হয়। গরিব মানুষ যেন এই সরকারি পরিষেবা থেকে বঞ্চিত না হয়।
বন্দিদশা থেকে মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়ালের এটি দ্বিতীয় নির্দেশ। প্রথম নির্দেশ তিনি দিয়েছিলেন গত রোববার। মন্ত্রী আতিশীকে সেই নির্দেশে তিনি বলেছিলেন, দিল্লির কোনো কোনো এলাকায় পানীয় জলের অভাব দেখা দিয়েছে বলে খবর এসেছে। কোথাও কোথাও নিকাশিব্যবস্থা কাজ করছে না বলেও তিনি শুনেছেন। এই দুই সমস্যার দ্রুত সমাধান যেন করা হয়। মঙ্গলবার নির্দেশ দিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে।
গত বৃহস্পতিবার কেজরিওয়ালের বাড়ি গিয়েছিলেন ইডি কর্তারা তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে। সেই রাতেই তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর গ্রেপ্তারির প্রতিবাদে আজ মঙ্গলবার আপ নেতা, সমর্থক ও কর্মীরা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাসভবন ঘেরাওয়ের কর্মসূচি নিয়েছিল। কিন্তু সেই কর্মসূচি শুরুতেই বানচাল করে দেয় দিল্লি পুলিশ। বিক্ষোভ সমাবেশের জায়গায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। সমাবেশের অনুমতিও দেওয়া হয়নি। পুলিশের বক্তব্য, আপ ওই বিক্ষোভ কর্মসূচি জন্য অনুমতিও চায়নি। জায়গায় জায়গায় বিক্ষোভের জন্য জড় হওয়া আপ কর্মী–সমর্থকদের পুলিশ যখন গ্রেপ্তার করছে, সেই সময়েই সৌরভ ভরদ্বাজ সংবাদ সম্মেলন করে মুখ্যমন্ত্রীর দ্বিতীয় নির্দেশের কথা জানান।
সৌরভ বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী কারাগারে আছেন। কিন্তু তাঁর মন পড়ে আছে দিল্লির জনতার জন্য। গরিব মানুষের স্বাস্থ্য নিয়ে তিনি চিন্তিত। এই বিষয়ে তিনি আমাকে কিছু নির্দেশ দিয়েছেন। বলেছেন, কোনো কোনো হাসপাতাল ও মহল্লা ক্লিনিকে বিনা মূল্যে ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে না বলে শুনেছেন। স্বাস্থ্যের প্রয়োজনীয় পরীক্ষাও করা হচ্ছে না বলে খবর পেয়েছেন। আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন, খবর সত্যি হলে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়ার।’
মঙ্গলবার বিজেপিও এক বিক্ষোভ সমাবেশ করে। তাদের দাবি ছিল মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে কেজরিওয়ালকে ইস্তফা দিতে হবে। নিজে থেকে পদত্যাগ না করলে তাঁকে বরখাস্ত করার দাবিও বিজেপি জানিয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী থাকা অবস্থায় কেজরিওয়ালকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সংসদীয় ভারতের ইতিহাসে এমন ঘটনা কখনো ঘটেনি। ঝাড়খন্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সরেন গ্রেপ্তার হওয়ার আগে পদত্যাগ করেছিলেন ও চম্পাই সোরেনকে মুখ্যমন্ত্রী পদে বসিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু কেজরিওয়াল বলেছেন তিনি পদত্যাগ করবেন না। বরং জেলে বসে সরকার চালাবেন। সেটা সম্ভবপর কি না, তা নিয়ে চলছে জোর বিতর্ক। তারই ফাঁকে ইডি হেফাজত থেকে সরকার পরিচালনার গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ কেজরিওয়াল দিয়ে চলেছেন।
বিজেপি এ নিয়ে কিছুটা অস্বস্তিতে। বিজেপি নেতাদের মতে, দুর্নীতিগ্রস্ত কেজরিওয়াল এভাবে কাজ চালাতে পারেন না। তাঁদের কথায়, জেলে বসে মাফিয়ারা রাজত্ব চালাতে পারে। কিন্তু ওইভাবে সরকার চালানো যায় না। বিজেপি নেতা হরিশ খুরানার মতে, কেজরিওয়াল সহানুভূতি আদায় করতে চাইছেন। তাঁর মন গরিবদের জন্য কাঁদছে, এটা তিনি হঠাৎ করে উপলব্ধি করছেন। এটা নিছক নাটক ছাড়া অন্য কিছু নয়। দিল্লির মানুষ তাঁর চরিত্র জেনে গেছে।
বিজেপির লোকসভা সদস্য মনোজ তিওয়ারি বলেছেন, দিল্লির জনতা কেজরিওয়ালের সমর্থনে রাস্তায় নামেনি। সেটা দেখেই দিল্লিবাসীর জন্য তাঁর মন কাঁদার এই নাটকটা কেজরিওয়াল ফেঁদেছেন।
কেজরিওয়াল যে মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন, সেই মামলাতেই তাঁর আগে গ্রেপ্তার করা হয় তেলেঙ্গানার বিআরএস নেত্রী কে কবিতাকে। দিল্লির আদালত মঙ্গলবার তাঁর হেফাজতে থাকার মেয়াদ আরও বাড়িয়েছে। তবে ইডি হেফাজতে নয়, কবিতাকে এবার থাকতে হবে তিহার জেলে, ৯ এপ্রিল পর্যন্ত। সুপ্রিম কোর্ট থেকে আবেদন তুলে নেওয়ার পর কেজরিওয়ালের গ্রেপ্তার ও ইডির হেফাজতের নির্দেশ চ্যালেঞ্জ করে দিল্লি হাইকোর্টে আবেদন করেছে আপ। আগামী বুধবার সেই আবেদন শুনবেন হাইকোর্ট।