কলকাতার আর জি কর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এক নারী চিকিৎসককে ধর্ষণ করে হত্যার ঘটনায় নাগরিক সমাজের প্রতিবাদ
কলকাতার আর জি কর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এক নারী চিকিৎসককে ধর্ষণ করে হত্যার ঘটনায় নাগরিক সমাজের প্রতিবাদ

কলকাতার আর জি কর–কাণ্ডে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ

কলকাতার আর জি কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে এক নারী চিকিৎসককে ধর্ষণ করে হত্যার প্রতিবাদে এখনো কলকাতাসহ দেশের বিভিন্ন রাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসকদের আন্দোলন চলছে। চলছে কর্মবিরতি। কলকাতা পুলিশ এ মামলার তদন্ত করলেও তাতে সন্তুষ্ট হননি মেডিকেলের আন্দোলনকারী চিকিৎসক ও পড়ুয়ারা। ফলে তাঁরা তাঁদের আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন। আর জি কর-কাণ্ডে গতকাল মঙ্গলবার সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। আজ বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার মধ্যে কলকাতা পুলিশের হাতে থাকা ওই মামলার সমস্ত নথি সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেওয়ার কথা।

কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানম ও বিচারপতি হিরণ্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চ পাঁচটি জনস্বার্থ মামলা একত্র করে এ ঘটনার তদন্তভার সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেন। জানিয়ে দেন, এ মামলার তদন্ত হবে হাইকোর্টের তত্ত্বাবধানে। তদন্ত হবে দ্রুত। প্রয়োজনে তদন্তের স্বার্থে অন্য রাজ্য থেকে আনা হবে সিবিআইয়ের তদন্তকারী কর্মকর্তাদের।

চিকিৎসক হত্যাকাণ্ডের সূত্রপাত গত শুক্রবার ভোরে; আর জি কর হাসপাতালের চারতলায় ডিউটি শেষ করে বিশ্রাম নেওয়া এক পোস্টগ্র্যাজুয়েট পড়ুয়া চিকিৎসক ছাত্রীর মৃতদেহ পাওয়া নিয়ে। মৃতদেহ সকালে পাওয়ার পর উত্তাল হয়ে ওঠে আর জি কর হাসপাতালসহ পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি।

পাশাপাশি আর জি কর হাসপাতালের অধ্যক্ষর পদত্যাগের দাবি উঠলে গত সোমবার পদত্যাগ করেন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ। কিন্তু তাঁর পদত্যাগপত্র রাজ্য সরকার গ্রহণ না করে বরং তাঁকে একই বেতনে, একই পদে কলকাতার ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে বদলি করে। আর এতে খেপে যান আন্দোলনকারীরা। গতকাল সঞ্জীব ঘোষ ন্যাশনাল হাসপাতালে গেলে বিক্ষোভের মুখে পড়েন। আটকে দেওয়া হয় হাসপাতালের ফটক। ওঠে ‘গো ব্যাক’ ধ্বনি। এ প্রসঙ্গে গতকাল হাইকোর্ট আদেশ দেন, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত তিনি কোনো মেডিকেল কলেজে যোগদান করতে পারবেন না। তিন সপ্তাহ পর এ মামলার পরবর্তী শুনানি।

এদিকে এই আদেশের পর রাজ্যের বিরোধীদলীয় নেতা শুভেন্দু অধিকারী দাবি তুলেছেন, এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে এসব ঘটনা ঘটছে। তিনি রাজ্যের স্বাস্থ্য দপ্তরও দেখেন। প্রথম তিনি সিবিআই তদন্তের কথা বললেও সোমবার জানিয়ে দেন, তিনি আগামী রোববার পর্যন্ত পুলিশকে ঘটনার তদন্তের জন্য দায়িত্বে রাখছেন। পুলিশ যদি এরই মধ্যে ঘটনার নেপথ্যে যারা জড়িত, তাদের খুঁজে বের করতে না পারে, তবে আগামী রোববার তিনিই সিবিআই তদন্তের কথা বলবেন। কিন্তু তার আগেই গতকাল কলকাতা হাইকোর্ট সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেন।

এদিকে আজও কলকাতার বিভিন্ন হাসপাতালসহ রাজ্যের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে জুনিয়র ও রেসিডেন্ট চিকিৎসকদের কর্মবিরতি চলছে। উঠেছে একটি স্লোগান—‘নো সেফটি নো ডিউটি’।

আন্দোলনকারীরা দাবি তুলেছেন, এই জঘন্য হত্যাকাণ্ড একজনের দ্বারা করা সম্ভব নয়। এর পেছনে যারা আছে, তাদের খুঁজে বের করে চরম শাস্তি দিতে হবে। যত দিন না এই মূল চক্রীদের খুঁজে বের করা হয়, তত দিন চিকিৎসকদের এই কর্মবিরতি চলবে।

নারী চিকিৎসককে ধর্ষণ করে হত্যা করার প্রতিবাদে আর জি কর হাসপাতালে বিক্ষোভ

এই বিক্ষোভ আরও ছড়িয়ে পড়েছে দিল্লিসহ দেশের বিভিন্ন রাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালে। এদিকে ধর্ষণ নিয়ে এক সিভিক পুলিশ সঞ্জয় রায়কে গ্রেপ্তার করা হলেও আন্দোলনকারীরা দাবি তুলেছেন, একজনের পক্ষে ধর্ষণ করে হত্যা করা সম্ভব নয়। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে সে কথাই স্পষ্ট হয়েছে। তাই এর পেছনে যারা জড়িত, তাদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছেন।

এদিকে গতকাল কলকাতার সিপিএমের অঙ্গসংগঠন এসএফআই ও ডিওয়াইএফআই এ হত্যার প্রতিবাদে প্রতিবাদ মিছিল করেছে।

কলকাতার রাস্তায় এ ঘটনার প্রতিবাদে সরব হয়েছে কলকাতার নাগরিক সমাজের একাংশ। তারা কলকাতার শ্যামবাজারের ৫ মাথার মোড় থেকে আর জি কর পর্যন্ত ধিক্কার মিছিল বের করে দাবি তোলে এই হত্যাকাণ্ডের দোষী ব্যক্তিদের খুঁজে বের করে অবিলম্বে শাস্তি প্রদানের। ধিক্কার মিছিলে অন্যদের সঙ্গে পা মেলান অভিনেত্রী অপর্ণা সেন, মানবাধিকারকর্মী সুজাত ভদ্র, সংগীতশিল্পী পল্লব কীর্তনীয়া, অধ্যাপক মীরাতুন নাহার ও সোহিনী সেনগুপ্ত।

গতকাল জাতীয় মহিলা কমিশনের একটি প্রতিনিধিদল খুন হওয়া ছাত্রীর বাড়িতে যায়। শোনে অভিযোগ।