নরেন্দ্র মোদি ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
নরেন্দ্র মোদি ও  মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

লোকসভায় বড় বিজয়েও মমতার তৃণমূলে শঙ্কা

এবারের লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে মমতার তৃণমূল কংগ্রেস বিপুল ভোটে জিতলেও শান্তিতে নেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেস। কারণ, এবারের এই লোকসভা ভোটের ফলাফল পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, এই রাজ্যের শহরাঞ্চলে ভালোই ভোট পেয়েছে বিজেপি। বিজেপির আঁচড় লেগেছে খোদ কলকাতা পৌরসভাতেও।

রাজ্যের ৪২টি আসনের মধ্যে ২৯টিতে জয় পায় তৃণমূল কংগ্রেস। বিজেপি জিতেছে মাত্র ১২টিতে। খুইয়েছে ৬টি আসন। ২০১৯ সালে বিজেপি জিতেছিল ১৮টি আসন।

প্রথমত, লোকসভার ভোটে পৌর এলাকার ভোটের সঙ্গে তুলনা করে দেখা গেছে, কলকাতা পৌরসভার ১৪৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে বিজেপি জিতেছে ৪৭টি ওয়ার্ডে। রাজ্যের ১২১টি পৌরসভার ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে ৭৩টি পৌরসভায় এগিয়ে রয়েছে বিজেপি।

২০২৬ সালে এই রাজ্যের বিধানসভার ২৯৩ আসনে নির্বাচন। লোকসভা ও বিধানসভার নির্বাচন তত্ত্বাবধান করে ভারতের নির্বাচন কমিশন। সেখানে জোর করে ভোট নেওয়া সহজ নয়। কিন্তু পঞ্চায়েত ও পৌরসভা নির্বাচন যেহেতু রাজ্য নির্বাচন কমিশন নিয়ন্ত্রণ করে। তৃণমূল এর আগে কারচুপি করে এসব স্থানীয় সরকারে নিজেদের প্রার্থীদের জিতিয়েছে, এমন অভিযোগ আছে সব বিরোধী দলের।

কিন্তু এবারের এই লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলের মাধ্যমে একটি দিক স্পষ্ট হয়েছে, শহরাঞ্চলের মানুষ বিজেপির দিকে ঝুঁকেছে। আর গ্রামাঞ্চলের মানুষ তৃণমূলের দিকে ঝুঁকে আছে। গ্রামের মানুষ তৃণমূলের দিকে ঝুঁকে থাকার মূল কারণ লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্প। এ প্রকল্পের অধীন রাজ্যের নারীরা মাসে এক হাজার টাকা করে ভাতা পেয়ে থাকেন। সেই লক্ষ্মীর ভান্ডার বিজেপি বন্ধ করতে পারে, সেই আশঙ্কায় এবার গ্রামের অধিকাংশ ভোটার ভোট দিয়েছেন তৃণমূলকে।

বিধানসভাকেন্দ্রিক ভোটের হিসাবে দেখা গেছে, এই রাজ্যের বিধানসভার ২৯৪ আসনের মধ্যে ৯০ আসনে এগিয়ে রয়েছে বিজেপি। শুধু তা–ই নয়, এই রাজ্যের তৃণমূলের আট মন্ত্রীর এলাকাতেও জিতে গেছে বিজেপি।

এই আট মন্ত্রী ২০২১ সালের সর্বশেষ বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের টিকিটে বিজয়ী হয়ে রাজ্যের মন্ত্রী হয়েছিলেন।

এসব মন্ত্রীর মধ্যে আছেন রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী শশী পাঁজা। তাঁর আসন শ্যামপুকুর। রাজ্যের দমকলমন্ত্রী সুজিত বসুর বিধান নগর আসনেও এবার জিতেছে বিজেপি।  

শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সত্যজিৎ বর্মণের আসন হেমতাবাদ থেকে জিতে গেছে বিজেপি। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প দপ্তরের মন্ত্রী তাজমুল হোসেনের  হশ্চিন্দ্রপুর, উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী সাবিনা ইয়াসমীনের মোথাবাড়ি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাসের কৃষ্ণনগর দক্ষিণ, কারা প্রতিমন্ত্রী অখিল গিরির পূর্ব মেদিনীপুরের রামনগর, এই জেলার পাঁশকুড়া আসনে মৎস্য প্রতিমন্ত্রী বিপ্লব রায় চৌধুরীর আসনেও জয় পায় বিজেপি।
প্রতিটি লোকসভা আসনে রয়েছে সাতটি করে বিধানসভা আসন।

২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিধানসভাকেন্দ্রিক হিসাবে তৃণমূল জিতেছিল ১৬৪টি আসন। বিজেপি ১২১টি, কংগ্রেস ৯টি আসন । শূন্য ছিল বাম দলের আসন।

এর আগে ২০১৬ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিধানসভাকেন্দ্রিক হিসাবে দেখা গিয়েছিল, তৃণমূল জিতেছিল ২১১ আসন, কংগ্রেস ৪৪ আসন, বাম দল ৩২ আসন ও বিজেপি মাত্র ৩টি আসন। আর ২০২১ সালে রাজ্য বিধানসভার নির্বাচনে তৃণমূল পেয়েছিল ২১১টি আসন, বিজেপি ৭৭টি, আইএসএফ একটি ও নির্দল পেয়েছিল একটি আসন। বাম দল ও কংগ্রেসের ভাগ্যে কোনো আসন জোটেনি।

এবার বিজেপি মোট ভোটের ৩৮ শতাংশের বেশি ভোট পায়। গত লোকসভা ও বিধানসভার তুলনায় এবার বিজেপির ভোট কিছুটা কমলেও দলটির একটি নিজস্ব ভোটব্যাংক তৈরি হচ্ছে বলে ধরে নেওয়া যায়। তৃণমূলের শঙ্কা আছে তা নিয়েও।