অবশেষে আন্দোলনরত শিক্ষানবিশ চিকিৎসকদের দাবি মেনে কলকাতা পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলকে বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
গতকাল সোমবার বিক্ষোভকারীদের একটি প্রতিনিধিদল মুখ্যমন্ত্রী মমতার সঙ্গে বৈঠক করেন। মমতার বাসভবন ‘নবান্নে’ দীর্ঘ ছয় ঘণ্টা ধরে ওই বৈঠক চলে। বৈঠক শেষে ‘নবান্নে’ স্থানীয় সময় রাত ১২টার দিকে সংবাদ সম্মেলন করেন মুখ্যমন্ত্রী।
সেখানেই মুখ্যমন্ত্রী জানান, কলকাতা পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল, স্বাস্থ্য অধিকর্তা দেবাশিস হালদার এবং স্বাস্থ্য–শিক্ষা অধিকর্তা কৌস্তভ নায়েককে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। কলকাতা পুলিশের উপকমিশনার (নর্থ) অভিষেক গুপ্তাকেও সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
মমতা বলেন, ‘শুধু জুনিয়র চিকিৎসকদের নয়, বদলের দাবি উঠেছিল পুলিশ মহল থেকেও। মঙ্গলবার বিকেল চারটার পর নতুন পুলিশ কমিশনারের নাম ঘোষণা করা হবে।’
আর জি করের নারী চিকিৎসক ধর্ষণ ও হত্যার পর দীর্ঘদিন ধরে পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষানবিশ চিকিৎসকেরা পাঁচ দফা দাবিতে আন্দোলন করে যাচ্ছেন। তাঁদের অন্যতম দাবি ছিল কলকাতার পুলিশ কমিশনারকে সরিয়ে দেওয়া। মমতার ঘোষণাকে তাই আন্দোলনকারীরা নিজেদের বিজয় বলেই মনে করছেন।
এদিকে আজ মঙ্গলবার আর জি করের নারী চিকিৎসক ধর্ষণ ও হত্যার মামলার শুনানি রয়েছে। আর জি করের এ ঘটনার তদন্তভার এখন আর রাজ্যের হাতে নেই। আদালতের নির্দেশে পুরো দায়িত্বভার চলে গেছে ভারতের সেন্ট্রাল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন বা কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার (সিবিআই) হাতে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতার সঙ্গে আন্দোলনরত শিক্ষানবিশ চিকিৎসকদের বৈঠক নিয়ে গত বৃহস্পতিবার থেকে জটিলতা চলছিল। জটিলতার কারণ ছিল বৈঠকের সরাসরি (লাইভ) সম্প্রচার নিয়ে মতভেদ। জুনিয়র চিকিৎসকদের দাবি ছিল, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে যে বৈঠকটি হবে, তা সরাসরি (লাইভ) সম্প্রচার করতে হবে। কিন্তু এই দাবি মানেননি মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর মত ছিল, বৈঠক করতে তিনি রাজি। কিন্তু লাইভ করতে রাজি নন। যে কারণে ওই দিন বৈঠক না করেই নবান্নের সামনে থেকে ফিরে আসেন আন্দোলনকারীরা।
গতকাল দুপুরে রাজ্যের মুখ্যসচিব বৈঠকের জন্য শেষবারের মতো আন্দোলনরতদের ই–মেইল করেন। জবাবে আন্দোলনকারীরা দুই পক্ষই ভিডিও করুক এমন দাবি করেন। না হলে শুধু সরকারপক্ষ ভিডিও করুক এবং বৈঠক শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভিডিও তাদের হাতে তুলে দেওয়ার কথা বলে। সেটাও না হলে দুই পক্ষই বৈঠকের কার্যবিবরণী (মিনিটস) লিখবে। তাঁরা কার্যবিবরণী লেখার লোক নিয়ে যাচ্ছেন। সবাই সই করার পর সেটা তাঁদের হাতে তুলে দিতে হবে।
আন্দোলনকারীরা ই–মেইলে আরও লেখেন, পাঁচ দফা দাবির বাইরে আর কোনো বিষয় নিয়ে তাঁরা আলোচনা করতে চান না। তাঁদের শর্তে রাজি হলে সরকার যেন অবিলম্বে জবাব দেয়। তাঁরা বৈঠকে হাজির হওয়ার জন্য উদ্গ্রীব।
পরে চিকিৎসকদের ভিডিও এবং সরাসরি সম্প্রচারের দাবি বাদ দিয়ে বাকি সব শর্ত মেনে নেয় রাজ্য সরকার। ই–মেইল করে তাদের তা জানিয়ে দেওয়া হয়। ই–মেইল পাওয়ার পর চিকিৎসকেরা স্থানীয় সময় সোমবার সন্ধ্যা সাতটায় মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনের উপস্থিত হন। সেখানে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ছয় ঘণ্টা বৈঠক চলে। তারপরই রাত ১২টার সংবাদ সম্মেলন করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা।
আর শিক্ষানবিশ চিকিৎসকদের প্রতিনিধিদলটি মমতার বাসভবন থেকে স্বাস্থ্যভবনে সামনে চলে যায়। সেখানে ৩১টি মেডিকেল কলেজের শত শত শিক্ষানবিশ চিকিৎসক আন্দোলন করেছিলেন। তাঁরা বলেন, ৩৮ দিনে তাঁদের আন্দোলনের কাছে নতিস্বীকার করেছে রাজ্য সরকার। কিন্তু হাসপাতালে দুষ্টচক্র এবং যে দুর্নীতি চলছে, তা নিয়ে আলোচনা চলবে। বলেছেন, যতক্ষণ দুর্নীতি ও আমাদের ভয় দেখানো না বন্ধ হবে ততক্ষণ আমাদের আন্দোলন চলবে।’ সুপ্রিম কোর্টের শুনানি পর আন্দোলনের বিষয়ে তাঁরা সিদ্ধান্ত নেবেন।