অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণের ওপর ক্রমেই চাপ বাড়িয়ে চলেছে কংগ্রেস। তাঁর পদত্যাগের দাবিতে সরব হওয়ার পাশাপাশি কংগ্রেস বলেছে, সুপ্রিম কোর্টের নজরদারিতে বিশেষ দল গড়ে এ বিষয়ে তদন্ত করার নির্দেশ দেওয়া দরকার। তা হলে চক্রান্তের চরিত্র স্পষ্ট হবে।
সীতারমণের বিরুদ্ধে অভিযোগ, নির্বাচনী বন্ড চালু করে তাঁর দল ও সরকার নির্ভেজাল চাঁদাবাজি চালিয়েছে। হাজার হাজার কোটি টাকা জোগাড় করেছে। সুপ্রিম কোর্ট ওই ব্যবস্থা ‘অসাংবিধানিক’ বলে বাতিল করে দিয়েছেন। শুধু তা–ই নয়, ওই ব্যবস্থা ‘ক্যুইড প্রো কো’ বলেও মন্তব্য করেছিলেন, যার অর্থ কাউকে কোনো কিছুর বিনিময়ে সুবিধা পাইয়ে দেওয়া।
সুপ্রিম কোর্টের ওই রায়ের পর কর্ণাটকের ‘জনাধিকার সংঘর্ষ সংগঠন’ বেঙ্গালুরুর এক আদালতে নির্মলা ও অন্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনে। নির্মলা ছাড়াও ওই অভিযোগে নাম রয়েছে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডা, কর্ণাটকে দলের সভাপতি বি ওয়াই বিজয়েন্দ্র, বিজেপি নেতা নলীন কুমার কাতিল এবং ইডির বেশ কয়েকজন কর্তার। তাঁদের নাম গোপন রাখা হয়েছে। বিশেষ জনপ্রতিনিধি আদালতের দ্বারস্থ হয়ে ওই সংগঠন বলেছে, সুপ্রিম কোর্ট যাকে বিশেষ সুবিধা বলেছেন, তা আসলে চাঁদাবাজি। সেই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ওই আদালত গত শনিবার কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর বিরুদ্ধে এফআইআর দায়েরের নির্দেশ দেন।
আদালত বলেন, দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ১৭ (ক) ধারায় এফআইআর রুজু করে তিন মাসের মধ্যে নির্মলা ও অন্যদের বিরুদ্ধে তদন্তের রিপোর্ট জমা দিতে হবে। সেই নির্দেশের সঙ্গে সঙ্গেই কর্ণাটকের কংগ্রেসি মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া অর্থমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেছিলেন। গত রোববার কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব একই দাবি জানিয়ে বলে, সুপ্রিম কোর্টের তদারকিতে বিশেষ দল ওই অভিযোগের তদন্ত করুক।
কংগ্রেস মুখপাত্র জয়রাম রমেশ ও আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভি সংবাদ সম্মেলনে ওই দাবি জানিয়ে বলেন, বিজেপি দল ও সরকারের এক ও দুই নম্বরের চরিত্র এই অভিযোগ বেআবরু করে দিয়েছে। এফআইআর দায়েরের নির্দেশ নিয়ে কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রণালয় এখনো কোনো মন্তব্য করেনি। বিজেপিও চুপ। সেই অবসরে কংগ্রেস চাপ বাড়িয়ে চলেছে।
নির্বাচনী তহবিল গড়ে তোলার জন্য নরেন্দ্র মোদির সরকার এই বন্ড ব্যবস্থা চালু করেছিল। উদ্দেশ্য হিসেবে বলা হয়েছিল, এর ফলে নির্বাচনে কালোটাকার ঝনঝনানি কমবে। যেকোনো মানুষ অথবা সংস্থা সাদা টাকায় নির্বাচনী বন্ড কিনে পছন্দের রাজনৈতিক দলকে দিতে পারবে। তবে বলা হয়েছিল, কে কোন দলকে টাকা দিচ্ছে, সেই তথ্য গোপন রাখা হবে। সেসব তথ্য থাকবে রাষ্ট্রায়ত্ত স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার কাছে।
নির্বাচনী বন্ড যে শাসক দল ও সরকারের ‘পরিকল্পিত চাঁদাবাজি’, সেই অভিযোগ বিরোধীরা আগেই করেছিল। বন্ড সংগৃহীত অর্থের অর্ধেকের বেশি পেয়েছে বিজেপি। অভিযোগ, তিনভাবে বন্ডে টাকা আসত। ‘ক্যুইড প্রো কো’ অনুযায়ী কাজের বরাত কিংবা লাইসেন্স পাইয়ে দেওয়ার মধ্য দিয়ে পার্টি তহবিলে চাঁদা আদায়। দ্বিতীয়ত, ইডি, সিবিআই, আয়কর বিভাগের হানার ভয় দেখিয়ে বন্ড কিনতে বাধ্য করা। তৃতীয়ত, করপোরেটদের জন্য অনুকূল নীতি তৈরির বদলে বন্ড মারফত অনুদান। স্টেট ব্যাংকের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে এসব অভিযোগ উঠেছে।
সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছিলেন, নির্বাচনে আবার কালোটাকার রমরমা শুরু হবে। বন্ড প্রথা খারিজ হওয়ায় একদিন সবাইকে অনুশোচনা করতে হবে। এর পাল্টা কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর জবাব ছিল, এটা পৃথিবীর সবচেয়ে বড় তোলাবাজি (চাঁদাবাজি)। নরেন্দ্র মোদি তাঁর মূল চক্রী ও পান্ডা।