আবগারি নীতি নিয়ে সিবিআইয়ের জেরার মুখোমুখি হওয়ার আগের দিন আজ শনিবার দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল বললেন, ‘আমি দুর্নীতিগ্রস্ত হলে পৃথিবীতে সাধু কে!’ রীতিমতো সংবাদ সম্মেলন ডেকে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী ও আম আদমি পার্টির নেতা বলেন, ‘সিবিআই যখন ডেকেছে, তখন কাল (রোববার) আমি নিশ্চয় যাব। বিজেপি যখন সিবিআইকে নির্দেশ দিয়েছে আমাকে গ্রেপ্তার করতে, ওরা তখন নিশ্চয় তা করবে।’
সংবাদ সম্মেলনের পর টুইট বার্তায় কেজরিওয়াল বলেন, ‘সিবিআই ও এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) আদালতে একের পর এক মিথ্যা অভিযোগ দাখিল করে আসছে। ওদের বিরুদ্ধে আমরা উপযুক্ত মামলা করব।’
সিবিআইয়ের তলবের পর এই বিষয়ে আলোচনার জন্য মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়াল আগামী সোমবার দিল্লি বিধানসভার এক বিশেষ অধিবেশন ডেকেছেন।
মদ বিক্রিসংক্রান্ত নতুন আবগারি নীতি নিয়ে দিল্লি সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্ত চালাচ্ছে সিবিআই ও ইডি। অভিযোগ, ওই নীতি প্রণয়নের সময় ‘আপ’ সরকার ১০০ কোটি টাকা ঘুষ নিয়েছিল। এই অভিযোগে দিল্লির সাবেক উপমুখ্যমন্ত্রী মনীশ সিসোদিয়া এই মুহূর্তে কারাগারে। তাঁর আগে দুর্নীতির অন্য অভিযোগে কারাগারে রয়েছেন আরও এক সাবেক মন্ত্রী সত্যেন্দ্র জৈন। এবার আবগারি নীতিসংক্রান্ত তদন্তে সাহায্যের জন্য সিবিআই ডেকে পাঠাল মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়ালকে। গতকাল শুক্রবার সেই সমন জারি হয়। আগামীকাল রোববার তাঁকে সিবিআই সদর দপ্তরে হাজির হতে বলা হয়েছে।
দুর্নীতির অভিযোগে ভারতের কোনো মুখ্যমন্ত্রীকে জেরা করার ঘটনা এই প্রথম। গুজরাট দাঙ্গার পর গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে অবশ্য বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল। তবে তা দুর্নীতিকেন্দ্রিক ছিল না।
সংবাদ সম্মেলনে কেজরিওয়াল বলেন, সিবিআই–ইডি প্রতিদিন কাউকে না কাউকে ধরছে। হুমকি দিচ্ছে। মানসিক–শারীরিকভাবে নির্যাতন করছে। আবগারি নীতি নিয়ে দিল্লির মন্ত্রীদের ফাঁসাতে তাঁদের বাধ্য করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘১০০ কোটি ঘুষ নেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। আমি প্রধানমন্ত্রীকে জিজ্ঞেস করতে চাই, এসব হচ্ছেটা কী? সিসোদিয়ার কাছ থেকে একটা টাকাও পায়নি অথচ তাঁকে আটকে রাখা হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘দিল্লি বিধানসভায় যেদিন দুর্নীতির বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছি, সেদিনই জানতাম আমাকেও ডাকা হবে।’
কেজরিওয়াল বলেন, ‘সিবিআইয়ের অভিযোগ, তথ্যপ্রমাণ মুছে দিতে নাকি ১৪টি মুঠোফোন নষ্ট করে ফেলা হয়েছে। এই ধরনের আজগুবি অভিযোগ স্বীকার করার জন্য সিবিআই সন্দেহভাজনদের ওপর অত্যাচার চালাচ্ছে। নানা রকম হুমকি দেওয়া হচ্ছে। বলা হচ্ছে, মেয়ে কী করে কলেজ যায়, দেখে নেব।’
দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ইডি–সিবিআই যখন তল্লাশি চালিয়ে কিছুই পেল না, তখন বলল, ঘুষের টাকা গোয়া নির্বাচনে খরচ করা হয়েছে। অথচ প্রমাণ নেই। তা ছাড়া থাকবেই–বা কী করে? সব পেমেন্ট তো চেকে হয়েছে! ১০০ কোটি টাকার মধ্যে একটা টাকারও হদিশ দিতে পারল না।
কেজরিওয়াল বলেন, ‘কোনো প্রমাণ ছাড়া আমি যদি বলি, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ১৭ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা সাতটায় এক হাজার কোটি টাকা দিয়েছি, তা হলে কি আপনি তাঁকে গ্রেপ্তার করবেন? আজ ওরা যে নীতিকে দুর্নীতিগ্রস্ত বলছে, সেই নীতিই পাঞ্জাবে চালু রয়েছে। তাতে রাজস্ব আদায় বেড়েছে ৫০ শতাংশ।’
আম আদমি পার্টি সম্প্রতি জাতীয় দলের মর্যাদা পেয়েছে। সেই উপলক্ষে কেজরিওয়াল দলীয় কর্মী–নেতাদের সতর্ক করে বলেছিলেন, কারাগারে যেতে সবাইকে প্রস্তুত থাকতে হবে। মুখ্যমন্ত্রীকে জেরার জন্য উপরাজ্যপালের অনুমতির প্রয়োজন ছিল। সেই অনুমতি পাওয়ার পরেই সিবিআই তাঁকে তলব করেছে।