বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনার আকস্মিক পতন ভারতকে কঠিন পরিস্থিতির মুখে ফেলেছে। বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে গত সোমবার রাতে ভারতের মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা কমিটির একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। শেখ হাসিনা সরকারের পতন নয়াদিল্লির ওপর ব্যাপক কৌশলগত প্রভাব ফেলবে।
বাংলাদেশে উদ্ভূত রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার লক্ষ্যে ভারতের পার্লামেন্টে সর্বদলীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর জানিয়েছেন, ভারত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে। পাশাপাশি সেনাবাহিনীকে সতর্ক অবস্থানে রাখা হবে।
বৈঠকের পর জয়শঙ্কর বলেন, বাংলাদেশে ইতিকর্তব্য নিয়ে সবাই দৃঢ়ভাবে সরকারের সঙ্গে রয়েছেন। এ ছাড়া শেখ হাসিনাকে ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা ঠিক করার জন্য ভারত সরকার কিছুটা সময় দিতে রাজি। ইতিমধ্যে বিষয়টি তাঁকে জানানো হয়েছে।
ঢাকায় মারাত্মক বিপর্যয়ের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে ভারতে চলে যান শেখ হাসিনা। তিনি দিল্লির হিন্দন বিমানঘাঁটিতে অবতরণ করেন। দিল্লিতে অবস্থান করে তিনি হয়তো তৃতীয় কোনো দেশে রাজনৈতিক আশ্রয় চাইতে পারেন। যুক্তরাজ্য, বেলারুশ, ফিনল্যান্ড, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ বেশ কয়েকটি দেশের নাম শোনা যাচ্ছে। তবে কোন দেশে তিনি শেষ পর্যন্ত আশ্রয় পাচ্ছেন, সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। দিল্লি বলে দিয়েছে, যত দিন প্রয়োজন, তাঁকে দিল্লি রাখবে।
বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে যুক্তরাজ্য শুধু জাতিসংঘের নেতৃত্বে বিষয়টি তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে। তবে রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়ে কিছু বলেনি দেশটির সরকার।
ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। বিশেষ করে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে মোদি সরকারের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশটি কূটনীতিক দ্বিধার মধ্যে পড়েছে। ক্ষমতাচ্যুত এই নেতাকে প্রকাশ্যে আশ্রয় দিলে নতুন বাংলাদেশের নতুন সরকারের সঙ্গে সম্পর্কে জটিলতা তৈরি হতে পারে।
আবার ভারতের সঙ্গে শেখ হাসিনার সম্পর্কের ইতিহাসও গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে যখন সপরিবার হত্যা করা হয়, তখন শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দিয়েছিল ইন্দিরা গান্ধীর সরকার।
রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় ধর্মীয় সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর ওপর সহিংসতার খবর পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নিরাপত্তাহীনতার আশঙ্কায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বড় একটি অংশ ভারতে পালিয়ে যেতে পারে। বিশেষ করে উত্তর–পূর্ব ও পশ্চিমবঙ্গে শরণার্থী সংকট তৈরি হতে পারে। এমন আশঙ্কায় এরই মধ্যে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়েছে।
ঢাকায় রাজনৈতিক অস্থিরতায় ভূরাজনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখেও পড়তে পারে ভারত। আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের ক্ষমতা হারানোর পর ভবিষ্যতে কোন দল ক্ষমতায় আসবে, সেদিকে অত্যন্ত সতর্ক নজর রাখছে ভারত। জামায়াতে ইসলামী ও বিএনপি অনেকটাই চীনঘেষা হতে পারে। আর ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে সব সুযোগই কাজে লাগাবে বেইজিং। এ অঞ্চলে ভারতের কৌশলগত অবস্থানের জন্য যা মোটেই ভালো খবর নয়।