দীর্ঘ প্রায় এক মাস পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যুক্তরাষ্ট্রের শিখ নেতা গুরপতবন্ত সিং পান্নুন হত্যাচেষ্টার ষড়যন্ত্রের অভিযোগ নিয়ে মুখ খুললেন। সেটাও তিনি করলেন অধিবেশন চলাকালে ভারতীয় সংসদকে এড়িয়ে, বাইরে। যুক্তরাজ্যের সংবাদপত্র ‘ফিন্যান্সিয়াল টাইমস’কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ভারত অবশ্যই যুক্তরাষ্ট্রের আনা অভিযোগ খতিয়ে দেখবে। আইনের শাসনের প্রতি ভারত দায়বদ্ধ।
যুক্তরাজ্যের এই সংবাদপত্র গত নভেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে পান্নুন হত্যা চক্রান্তের খবর প্রথম প্রকাশ করেছিল। তাদের খবরে বলা হয়েছিল, যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক শিখ নেতা ও স্বাধীন শিখ রাষ্ট্র খালিস্তানের সমর্থক গুরপতবন্ত সিং পান্নুনকে হত্যার চক্রান্ত করেছিল ভারত। সেই কাজে একজনকে নিয়োগও করা হয়েছিল। গোটা চক্রান্তে যুক্ত ছিলেন ভারতের একজন কূটনীতিক।
প্রতিবেদনে একথাও লেখা হয়েছিল, চক্রান্তের সঙ্গে যুক্ত এক ব্যক্তি যুক্তরাষ্ট্র ছেড়ে অন্য দেশে চলে গেছেন।
ওই প্রতিবেদন প্রকাশের কয়েক দিনের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্র আনুষ্ঠানিকভাবে পান্নুন হত্যায় ভারতের জড়িত থাকার অভিযোগ আনে। ভারতও তা ‘অবাস্তব ও কল্পনাপ্রসূত’ বলে উড়িয়ে না দিয়ে অভিযোগ খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নেয়। সে জন্য এক উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠনের কথাও সরকারিভাবে জানানো হয়।
এত দিন ধরে ওই মারাত্মক অভিযোগ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী মুখ খোলেননি। সংসদকেও তিনি এড়িয়ে গিয়েছেন। কিন্তু সাক্ষাৎকার দিলেন বিদেশি পত্রিকা ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে। সেই সাক্ষাৎকারের নির্যাস বিভিন্ন ভারতীয় গণমাধ্যমে আজ বুধবার প্রকাশিত হয়।
সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেন, ‘কেউ আমাদের কোনো তথ্য জানালে আমরা অবশ্যই তা খতিয়ে দেখব। আমাদের কোনো নাগরিক ভালো অথবা খারাপ কিছু করলে আমরা তার বিচারে প্রস্তুত। আমরা আইনের শাসনের প্রতি দায়বদ্ধ।’
পান্নুন ‘শিখস ফর জাস্টিস’ (এসএফজে) সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা। ওই সংগঠন ভারতে নিষিদ্ধ। ভারতের চোখে পান্নুন সন্ত্রাসী। পাঞ্জাবে তাঁর পরিবারের সম্পত্তিও বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে জাতীয় নিরাপত্তা আইনে মামলাও রয়েছে।
বিদেশে কিছু সন্ত্রাসী সংগঠনের কর্মকাণ্ডে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে ওই সাক্ষাৎকারে মোদি বলেন, বাক্স্বাধীনতার দোহাই দিয়ে এসব সংগঠনের সদস্যরা ভয়ের বাতাবরণ সৃষ্টি করেছেন। হিংসায় প্ররোচনা জোগাচ্ছেন।
প্রধানমন্ত্রী মোদি অবশ্য বলেছেন, এ ধরনের ঘটনা ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের পথে অন্তরায় হবে না। তিনি বলেন, দুই দেশের সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর। সম্পর্ক পরিণত ও স্থায়ী। নিরাপত্তা ও সন্ত্রাসবিরোধী সহযোগিতা এই সম্পর্কের একটা প্রধান দিক। এ ধরনের দু-একটি ঘটনার সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ককে জড়ানো উচিত নয়।
মোদি সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘এটা স্বীকার করতেই হবে, বহুত্ববাদের যুগে আমরা বাস করছি। আমরা সবাই একে অন্যের সঙ্গে যুক্ত এবং পরস্পরের প্রতি নির্ভরশীল। এই বাস্তবতাই বোঝায় যে সব বিষয়ে সবাই পুরোপুরি সহমত হবে, তা সম্পর্ক গড়ার শর্ত হতে পারে না।’
যুক্তরাষ্ট্র এই মারাত্মক অভিযোগ আনার পর জানাজানি হয়, তারা চেক প্রজাতন্ত্রে এক ভারতীয় নাগরিককে গ্রেপ্তার করেছে। ওই ব্যক্তির নাম নিখিল গুপ্ত (৫২)। পান্নুনকে হত্যার জন্য এক ভারতীয় কূটনীতিক (যাঁর নাম এখনো গোপন) তাঁকে নিযুক্ত করেছিলেন।
পান্নুনকে হত্যার জন্য নিখিল আরেকজনকে নিয়োগ করেন ও ১০ হাজার ডলার অগ্রিম দেন। নিখিল যাঁকে নিয়োগ দিয়েছিলেন তিনি ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের এক ‘আন্ডার কাভার’ গোয়েন্দা। সম্প্রতি নিখিল ভারতের সুপ্রিম কোর্টে তাঁর বিচারে সরকারের সহযোগিতার আরজি জানিয়ে আবেদন করেছেন। আগামী জানুয়ারিতে সেই আবেদনের শুনানি হবে।