অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে গ্রেপ্তারের পর ইডির কার্যালয়ে নেওয়া হয়। ২১ মার্চ, ২০২৪
অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে গ্রেপ্তারের পর ইডির কার্যালয়ে নেওয়া হয়। ২১ মার্চ, ২০২৪

দল বলছে কেজরিওয়াল কারাগার থেকেই মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করবেন, কতটা সম্ভব

দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী ও আম আদমি পার্টির (এএপি) প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়াল কারাগার থেকেই দায়িত্ব পালন করে যাবেন বলে তাঁর দলের পক্ষ থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে কেজরিওয়াল গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মিনিট পরই তারা এমন ঘোষণা দেয়। তবে আইনবিশেষজ্ঞ ও কারা সূত্র বলছে, এভাবে দায়িত্ব পালন করতে গেলে সাংবিধানিক সংকট তৈরি হবে।

ভারতে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ তদন্তের কেন্দ্রীয় সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি) কর্মকর্তারা আবগারি নীতি মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গতকাল রাতে কেজরিওয়ালের বাসভবনে যান। সেখান থেকেই তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এএপি নেতা অতিশী বৃহস্পতিবার রাতে বলেন, ‘কেজরিওয়াল দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী আছেন এবং থাকবেন...এ নিয়ে কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই। শুরুতেই আমরা স্পষ্ট করে বলে দিচ্ছি, প্রয়োজন হলে তিনি জেলে বসে দায়িত্ব পালন করবেন। তাঁকে এমনটা করা থেকে আটকানোর মতো কোনো আইন নেই। তিনি এখনো দোষী সাব্যস্ত হননি।’

ভারতে সাম্প্রতিক সময়ে কেজরিওয়ালই হলেন প্রথম কোনো মুখ্যমন্ত্রী, যিনি দায়িত্বে থাকা অবস্থায় গ্রেপ্তার হয়েছেন। সূত্র বলছে, কেজরিওয়াল যদি এখন জেল থেকেই তাঁর দায়িত্ব পালন করতে থাকেন, তবে তাতে সাংবিধানিক সংকট তৈরি হবে। এ ক্ষেত্রে লালু যাদবের প্রসঙ্গটি সামনে এনেছে সূত্র। তারা বলছে, বিহারের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে পশুখাদ্য কেলেঙ্কারি মামলায় লালু যাদব গ্রেপ্তার হলে তিনি তাঁর স্ত্রী রাবরি দেবীর হাতে দায়িত্ব দিয়েছিলেন।

গত জানুয়ারিতে জমিসংক্রান্ত একটি দুর্নীতির অভিযোগে ঝাড়খন্ডের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সরেনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গভর্নরের সঙ্গে দেখা করে পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার পরই সরেনকে নিরাপত্তা হেফাজতে নেয় ইডি।

সূত্র বলছে, কেজরিওয়াল পদত্যাগ না করলে এর ফল কী হতে পারে, তা খতিয়ে দেখছে ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কেজরিওয়াল যেহেতু সরকারি পদে আছেন, সে ক্ষেত্রে কেন্দ্র সরকার তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করতে পারে কিংবা পদ থেকে সরিয়ে দিতে পারে।

সূত্র বলছে, গ্রেপ্তার হওয়া সরকারি কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রে সাধারণত এ প্রক্রিয়াই অনুসরণ করা হয়। গ্রেপ্তার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
কেজরিওয়ালকে তিহার জেলে স্থানান্তর করা হতে পারে। সেখানকার একটি সূত্র বলছে, ওই কারাগার থেকে কারও মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনের নজির নেই। কারাগারটির পরিচালনাসংক্রান্ত নির্দেশিকায় এমন কিছু বলা নেই। আর কারাগারে যা কিছু হয়, তা ওই নির্দেশিকা মেনেই হয়।

দিল্লির আবগারি নীতিসংক্রান্ত মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গত নভেম্বর থেকে ৯ দফায় কেজরিওয়ালের বিরুদ্ধে সমন জারি করেছিল ইডি। তবে তিনি সেসব সমনে হাজির হননি। তবে সোমবার গ্রেপ্তার এড়াতে আইনি সুরক্ষা চেয়ে দিল্লির হাইকোর্টে আবেদন জানিয়েছিলেন কেজরিওয়াল। গত সোমবার তা খারিজ করে দেওয়া হয়। এরপর গতকাল গ্রেপ্তার হন কেজরিওয়াল। গতকালই কেজরিওয়ালের পক্ষ থেকে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করা হয়েছে। আজ আদালতে সে আবেদনের শুনানি হওয়ার কথা।

সম্প্রতি ইডির এক সংবাদ বিবৃতিতে বলা হয়, অরবিন্দ কেজরিওয়ালই এই মামলায় ‘মূল ষড়যন্ত্রকারী’। আর ভারত রাষ্ট্র সমিতির কে কবিতা, এএপির সঞ্জয় সিং এবং মনীশ সিসোদিয়া তাঁর সঙ্গে ষড়যন্ত্রে সম্পৃক্ত ছিলেন। ইডির অভিযোগ, এসব রাজনীতিবিদ ও কিছু ব্যবসায়ী মিলে যোগসাজশ করে ওই আবগারি নীতি করেছিলেন। তাতে কিছু ব্যবসায়ী সুবিধা পান এবং তার একটি অংশ রাজনীতিবিদদের হাতে যায়।

কয়েকজন অভিযুক্ত ও প্রত্যক্ষদর্শীর জবানবন্দির ভিত্তিতে কেজরিওয়ালকে অভিযুক্তের তালিকায় যুক্ত করা হয় বলেও উল্লেখ করেছে ইডি।
কারাগারে থাকা মনীশ সিসোদিয়ার দায়িত্বগুলো মন্ত্রিপরিষদের কয়েকজন নেতার মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়েছে।