উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে ২১ নভেম্বর এক জনসভায় ভাষণ দেন। শাহপুরা, জয়পুর
উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে ২১ নভেম্বর এক জনসভায় ভাষণ দেন। শাহপুরা, জয়পুর

রাজস্থানে বিজেপির নির্বাচনী প্রচারের অস্ত্র সেই বিভাজনের রাজনীতি

রাত পোহালেই আগামীকাল শনিবার ভারতের রাজস্থানে বিধানসভা নির্বাচন। ২০০ আসনের একটি বাদ দিয়ে ১৯৯ আসনে ভোট গ্রহণ শুরু হবে সকাল সাতটায়। চলবে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত। এরই মধ্যে সেখানে ভোটের প্রচার-প্রচারণা শেষ হয়েছে। কিন্তু গোটা প্রচারে বিজেপির নেতারা মুসলিম সম্প্রদায়কে আক্রমণ করে বক্তব্য দিয়েছেন বলে জানিয়েছে দেশটির দুটি মানবাধিকার সংস্থা সিজেপি ও হিন্দুত্ব ওয়াচ।

গত নির্বাচনে ২০১৮ সালে ১০০ আসন পেয়ে সরকার গড়েছিল কংগ্রেস, কিন্তু প্রাপ্ত ভোটের হিসাবে বিজেপির সঙ্গে কংগ্রেসের তফাত ছিল সামান্যই। কংগ্রেস পেয়েছিল ৩৯ দশমিক ৩০ শতাংশ আর বিজেপি ৩৮ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ ভোট। রাজস্থানে সাধারণত একই সরকার পরপর দুইবার ক্ষমতায় আসে না। তাই ধরে নেওয়া হচ্ছে, এবার বিজেপির পাল্লা ভারী। বিজেপিও বিষয়টি মাথায় রেখে পুরোদমে প্রচার চালিয়েছে।

আর এই প্রচার চালাতে গিয়ে সবচেয়ে পরীক্ষিত ও শক্তিশালী অস্ত্রই প্রয়োগ করেছে বিজেপি—ধর্মের ভিত্তিতে মেরুকরণ।

সিজেপি ও হিন্দুত্ব ওয়াচ তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, যাবতীয় নিয়মনীতি অগ্রাহ্য করে বিজেপি নেতারা ক্রমাগত সংখ্যালঘু সমাজকে আক্রমণ করেছে। এই আক্রমণ কতভাবে এবং কীভাবে করা হয়েছে, তার একটা খসড়া তৈরি করেছে সাম্প্রদায়িক বৈষম্য পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা।

সাংবিধানিক অধিকার সুরক্ষিত করতে ভারতে যেসব সংগঠন কাজ করে, তার অন্যতম সিটিজেনস ফর জাস্টিস অ্যান্ড পিস বা সিজেপি। সিজেপি প্রাথমিকভাবে এই তথ্য সংকলন করেছে। তার ভিত্তিতে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন সামাজিক মাধ্যম এক্সে তুলে ধরেছে হিন্দুত্ব ওয়াচ নামের একটি সংস্থা, যারা ভারতে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে ঘৃণাজনিত ভাষণ নথিবদ্ধ করে। সিজেপি ও হিন্দুত্ব ওয়াচের প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, বিজেপি বহু নির্বাচনী মিছিল ও সভা করেছে, যেখানে দলের কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য নেতারা একটি সম্প্রদায়কে আক্রমণ করে ঘৃণ্য ভাষণ দিচ্ছেন।

সিজেপি ও হিন্দুত্ব ওয়াচ একটি দীর্ঘ তালিকা দিয়েছে যে বিজেপির প্রধান নেতারা কে কবে কোথায় মুসলিম সম্প্রদায়কে আক্রমণ করে ভাষণ দিয়েছেন। এই ভাষণগুলোর নির্দিষ্ট অংশ ভিডিও সামাজিক মাধ্যম এক্স মারফত তুলে ধরা হয়েছে।

যেমন ১৯ নভেম্বর রাজস্থানের রাজধানী জয়পুরে বিজেপি নেতা গোপাল শর্মা ঘৃণ্য ভাষণ দেন। সেখানে তিনি উত্তর প্রদেশের মসজিদ নিয়ে কথা বলেন। তিনি ১৭ নভেম্বর জয়পুরেও একই ধরনের ভাষণ দেন।

আরেক নেতা শত্রুঘ্ন গৌতম আজমির থেকে প্রায় ৮০ কিলোমিটার দূরে কেক্রী শহরে ভাষণে ভোট মেরুকরণের লক্ষ্যে কাশ্মীরি পণ্ডিতদের ওপর অত্যাচারের ঘটনা তুলে ধরেন। হিন্দুত্ববাদের বিরুদ্ধে যারা কাজ করছে, তাদের আক্রমণ করতে হবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

এ ধরনের উদাহরণ অসংখ্য। রাজস্থানের কোটা জেলার পিপলদা অঞ্চলে উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ ১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ধ্বংসে তাঁর জড়িত থাকার বিষয়কে জোর দিয়ে প্রচার করেন। সাধারণভাবে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের সঙ্গে আদিত্যনাথের নাম যোগ করা হয় না। কারণ, নেতা হিসেবে তাঁর সে সময় কোনো অস্তিত্বই ছিল না, তাঁর বয়স ছিল ২২ বছর। কিন্তু এখন তিনি দাবি করতে শুরু করেছেন, ওই সময়ে মসজিদ ধ্বংসে তিনি বড় ভূমিকা রেখেছিলেন।

এই প্রসঙ্গে আজমিরের কংগ্রেস কর্মী রাজেন্দ্র সিনহা প্রথম আলোকে টেলিফোনে বলেন, একসময় ভারতে মনে করা হতো, বাবরি মসজিদ ধ্বংস যাঁরা করেছেন, তাঁরা ভিলেন। আজ সেই কাজের কৃতিত্ব নিতে চাইছেন নেতারা। বোঝাই যাচ্ছে, দেশ কোথায় পৌঁছেছে।

চলতি সপ্তাহের গোড়াতেই বিজেপির আরেক কেন্দ্রীয় নেতা সুধাংশু ত্রিবেদী রাজস্থানে হিজাব নিয়ে মন্তব্য করেন।

সিজেপি ও হিন্দুত্ব ওয়াচের প্রতিবেদনে আরও অনেক জায়গা এবং নেতার নাম উল্লেখ করে বলা হয়েছে, গোটা রাজস্থানেই নির্বাচনী প্রচারে এ ধরনের ঘৃণ্য বক্তব্য দেওয়া হয়েছে।  
রাজ্যের এই বিধানসভা নির্বাচনে ১ হাজার ৮৬২ জন প্রার্থী। মোট ভোটার সোয়া ৫ কোটি। তাঁদের এক-তৃতীয়াংশই (৩৩ শতাংশ) তরুণ প্রজন্মের। তাঁদের বয়স ৩০ বছরের নিচে।

শনিবারের নির্বাচনের পর পঞ্চম এবং শেষ পর্বে দক্ষিণ ভারতের তেলেঙ্গানা রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন হবে ৩০ নভেম্বর। পাঁচ রাজ্যের ফল একসঙ্গে প্রকাশ করা হবে ৩ ডিসেম্বর। এই পাঁচ রাজ্যের ফল দেখেই ভারতের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে তাদের রণকৌশল নির্ধারণ করবে বলে মনে করা হচ্ছে।