ভারতের ছত্তিশগড় রাজ্যে ভারতে নিষিদ্ধ ও সশস্ত্র বামপন্থী সংগঠন কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়া-মাওবাদী (সিপিআই-এম) গেরিলাদের হামলায় অন্তত ৯ জন নিরাপত্তাকর্মী নিহত হওয়ার পর নতুন করে আলোচনা এসেছে নমাওবাদীরা। প্রায় দুই বছর পর ছত্তিশগড়ে নিরাপত্তাকর্মীদের এত বড় হামলা চালাল তারা।
এই প্রসঙ্গে ছত্তিশগড় থেকে টেলিফোনে জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক কমল শুক্লা প্রথম আলোকে বলেন, এ ধরনের ঘটনা যখন ঘটে, তখন সাধারণত দেখা যায় যে মাওবাদী অঞ্চলে নিরাপত্তা বাহিনীর ঘোরাফেরার জন্য যে নির্দেশাবলি (স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তৈরি করেছে, তা মানা হয়নি। এবার ঘটনার তদন্তের পর বোঝা যাবে, নির্দেশাবলি মানা হয়েছিল কি না।
এই সাংবাদিক বলেন, অনেক সময়ই দেখা যায়, হামলায় নিরাপত্তাকর্মীদের মৃত্যু নিয়ে সরকার খুব একটা মাথা ঘামায় না। কারণ, হিসেবে তিনি বলছেন, বস্তারের এই আদিবাসী–অধ্যুষিত অঞ্চলে সহিংসতায় পুলিশ ও মাওবাদীদের যাঁরা মারা যান, তাঁরা আদিবাসী এবং স্থানীয় মজুর বা কৃষকের সন্তান। কোনো উচ্চবিত্ত, উচ্চবর্ণের পরিবারের সদস্য বা রাজনীতিবিদের ছেলেমেয়েরা মাওবাদী অঞ্চলের সংঘর্ষে মারা যান না। ফলে পুলিশ বা মাওবাদী যেই মারা যাক—কেউই শেষ পর্যন্ত খুব একটা মাথা ঘামায় না।
ছত্তিশগড় রাজ্যে ২০২৪ সালে মোট ২১৯ জনকে মাওবাদী বলে চিহ্নিত করে হত্যা করা হয়েছে। যদিও এঁরা সবাই মাওবাদী কি না, তা নিয়ে মানবাধিকার কর্মীদের সন্দেহ আছে। এই ২১৯ জনের মধ্যে ২১৭ জন বস্তার রেঞ্জের বাসিন্দা ছিলেন।
ছত্তিশগড়ের উপমুখ্যমন্ত্রী অরুণ সাউ গতকাল সোমবারের ঘটনাকে মাওবাদীদের কাপুরুষতার আরেকটি প্রমাণ বলে উল্লেখ করে বলেছেন, ২০২৬ সালের মার্চের মধ্যে রাজ্যে মাওবাদ শেষ হবে।
উপমুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য প্রসঙ্গে কমল শুক্লা বলেন, ‘আমি ২৮-২৯ বছর ধরে শুনছি, এই বছরে বা সামনের বছরে মাওবাদ শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু এখনো হয়নি। কোনো শক্তপোক্ত বিচারধারাকে এভাবে বল প্রয়োগ করে শেষ করা সম্ভব নয় বলে আমি মনে করি। কংগ্রেস আমলেও বলা হতো, মাওবাদ আগামী বছর শেষ হয়ে যাবে। এখনো তাই বলা হচ্ছে। সাধারণ মানুষের অবস্থা বস্তারে ক্রমশ আরও খারাপ হচ্ছে।’
কমল শুল্কা আরও বলেন, ‘আগে কোনো বড় হত্যাকাণ্ডের পর আমরা অন্তত গ্রামের ভেতরে গিয়ে সামান্য খোঁজখবর করে প্রতিবেদন করে বাইরের বিশ্বকে জানাতে পারতাম। এখনো সেটা সম্ভব নয়; কারণ, গ্রামে ঢোকার সব রাস্তার ওপরে নিরাপত্তা বাহিনীর বড় বড় শিবির করে রেখেছে। তারা ছত্তিশগড়ের গ্রামে গিয়ে খোঁজখবর নিতে দেয় না। এই কারণে গ্রামে কী হচ্ছে, তা আজ বলা সম্ভব নয়।’
১৯৮০ সালের দিক থেকে ছত্তিশগড়ে মাওবাদী আন্দোলন চলছে। প্রধানত আদিবাসী, তফসিলি জাতির কৃষকেরা এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। শহরের শিক্ষিত সমাজ আগে এই নকশালপন্থীদের যতটা সমর্থন দিতেন, এখন আর তা দিচ্ছেন না বা দিতে পারছেন না। কারণ, এদের অনেককেই গত কয়েক বছরে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সশস্ত্র এই আন্দোলনের জেরে হাজার হাজার মানুষ অতীতে ছত্তিশগড়সহ মধ্য ও দক্ষিণ ভারতে মারা গেছেন এবং এখনো মারা যাচ্ছেন। এখন থেকে ২০ বছর আগে আন্দোলনের যে শক্তি ছিল, বর্তমানে তা খানিকটা কমলেও এই আন্দোলন এখনই শেষ হবে না বলে মনে করেন ভারতের মাওবাদের পর্যবেক্ষকেরা।