ভারতের সরকারি প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরো (পিআইবি) একটি বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে যে গতকাল মঙ্গলবার মণিপুরের তিন প্রধান জনগোষ্ঠী—কুকি-জো-হামর, মেইতেই ও নাগারা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে এক বৈঠকে মিলিত হয়।
পিআইবি আরও জানিয়েছে, সর্বসম্মতিক্রমে সহিংসতার পথ পরিহার করার জন্য সব সম্প্রদায়ের কাছে আবেদন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বৈঠকে, যাতে ভবিষ্যতে নিরপরাধ নাগরিকেরা আর মারা না যান।
তবে পিআইবির এই কয়েক লাইনের বিবৃতি থেকে যেটা স্পষ্ট নয়, তা হলো, এই বৈঠকে মণিপুরের সমস্যার সমাধানের লক্ষ্যে আদৌ কোনো দিকনির্দেশনা পাওয়া গেছে কি না। অবশ্যই তিন প্রধান সম্প্রদায়ের নেতাদের একত্রে আনাটা ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও কেন্দ্রীয় ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর (আইবি) প্রধান সাফল্য; কিন্তু তার বাইরে কি কোনো উল্লেখযোগ্য সাফল্য এই বৈঠকে মিলেছে?
দিল্লি ও মণিপুরের পত্রপত্রিকা জানাচ্ছে, কোনো উল্লেখযোগ্য সাফল্যের সূত্র এই বৈঠকে মেলেনি।
প্রথমত, দক্ষিণ দিল্লির খান মার্কেটে আইবির দপ্তরে সব সম্প্রদায়ের যৌথ মিটিং মাত্র ১০ মিনিট চলেছে বলে জানিয়েছে উত্তর–পূর্ব ভারতের প্রচারমাধ্যম। এই বৈঠকে ভারত সরকারের প্রতিনিধি এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা শুধু মেইতেইদের সঙ্গে মিলিত হন।
আদিবাসী সমাজের বিভিন্ন অংশের সঙ্গে তাদের নিজেদের আলাপ-আলোচনা এখনো শেষ হয়নি বলে জানিয়ে কুকি-জো নেতৃত্ব বলেন যে তাঁরা আপাতত মেইতেইদের সঙ্গে বৈঠকে বসতে চান না। নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা সেরে তবেই তাঁরা সার্বিক বৈঠকে বসতে চান বলে আদিবাসী নেতৃত্ব সরকারি প্রতিনিধিদের জানান। সরকারপক্ষ তাঁদের বক্তব্য মেনে নেয়।
কিন্তু এর আগে, দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে দুই ঘণ্টা কুকি এমএলএদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন ভারত সরকারের প্রতিনিধিরা। ভারতের তরফে সরকারের প্রতিনিধি এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের দায়িত্বে থাকা ওডিশার নেতা সম্বিত পাত্র বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের দায়িত্বে থাকা অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা এ কে মিশ্র এবং মণিপুরের দায়িত্বে থাকা অজিত গোপচাঁদ।
কুকিদের তরফে মণিপুরের একাধিক মন্ত্রী ও এমএলএ আলোচনায় অংশ নেন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন মণিপুরের বীরেন সিং মন্ত্রিসভার আদিবাসী উন্নয়নমন্ত্রী বিজেপির লেটপাও হাওকিপ; বিজেপির এক নারী মন্ত্রী নেমচা কিপজেন এবং বিজেপির তিন এমএলএ—এন সানাটে, হাওখালেত কিপজেন ও লেৎজামাং হাওকিপ। ভারতের পত্রপত্রিকা জানিয়েছে, তাঁদের প্রত্যেকের ওপরই চাপ ছিল নির্দিষ্টভাবে পার্বত্য ও আদিবাসী অঞ্চলে অতীতের দাবি তুলে ধরতে। কুকি-জো সম্প্রদায় দেড় বছর ধরে পৃথক কেন্দ্রশাসিত ও স্বায়ত্তশাসিত প্রশাসনিক অঞ্চলের দাবি করছে। তাদের বক্তব্য, মেইতেই শাসিত মণিপুরে তাদের পক্ষে শান্তিতে থাকা সম্ভব নয়। এই দাবি তারা গতকালও তুলেছে বলে জানা গেছে।
ভারতের একটি সংবাদমাধ্যম দ্য প্রিন্ট সূত্রকে উদ্ধৃত করে বলেছে, ভারত সরকারের পক্ষে মেইতেই ও নাগাদের সঙ্গে পৃথক বৈঠক হয়। এই বৈঠকে বিজেপির মেইতেই সদস্য সত্যব্রত সিং, বিশ্বজিৎ সিং, বসন্ত সিং ও অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। নাগা এমএলএদের তরফে ছিলেন রাম মুইভা আওয়াংবাও নিউমাই ও এল ডিকোহ।
এমন অবস্থায় এই আলোচনা অসম্পূর্ণ থাকলেও একে বড় সাফল্য হিসেবে দেখছে সব পক্ষই। কারণ, অন্তত সাধারণ মানুষের প্রাণহানি যাতে না হয়, তা নিশ্চিত করতে সব পক্ষের কাছে আবেদন করা গেছে।