বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার
বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার

মোদির জোট সরকার

চার মন্ত্রণালয়সহ যেসব বিষয়ে নীতীশ কুমারের দর–কষাকষি

বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার বিজেপির নেতৃত্বে জোট সরকার গঠনের জন্য অন্তত চারটি মন্ত্রণালয়, রাজ্যের আগাম বিধানসভা নির্বাচন, রাজ্যটির জন্য কেন্দ্রের বড় তহবিল ও বিহারের বিশেষ রাজ্যের মর্যাদার মতো বিষয় নিয়ে দর–কষাকষি করছেন বলে আলোচনা রয়েছে।

ভারতে সদ্য সমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনে এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় সরকার গঠনের জন্য বিজেপিকে নীতীশ কুমারের দল জনতা দল-ইউনাইটেডের (জেডি-ইউ) মতো মিত্রদের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। এবারের লোকসভা নির্বাচনে বিহারে জেডি-ইউ ১২টি আসনে জিতেছে।

দিল্লিতে এনডিএ নেতাদের বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে চন্দ্রবাবু নাইডু (মধ্যে) ও নীতীশ কুমার বিজয় চিহ্ন দেখাচ্ছেন। বুধবার নয়া দিল্লিতে

এ বিষয়ে অবগত ব্যক্তিরা বলছেন, বিজেপির নেতৃত্বাধীন নতুন সরকারে নীতীশ অন্তত চার থেকে পাঁচটি মন্ত্রণালয় চায়। নির্বাচনের ফল ঘোষণার আগে জেডি-ইউকে অন্তত তিনটি মন্ত্রণালয় ও একটি প্রতিমন্ত্রীর পদ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেডি-ইউর একজন নেতা বলেছেন, ‘জেডি-ইউ এখন দর–কষাকষির জন্য ভালো অবস্থানে রয়েছে। আমরা অন্তত চারটি মন্ত্রণালয় পাওয়ার আশা করছি। এ ছাড়া আরও একটি প্রতিমন্ত্রীর পদ চাওয়া হতে পারে।’

জেডি-ইউর এই নেতা বলেন, রেলওয়ে, গ্রাম উন্নয়ন এবং জলসম্পদের মতো মন্ত্রণালয়গুলোর বিষয়ে তাঁরা আগ্রহী। কারণ, তাঁরা বিহারে অবকাঠামো উন্নয়ন এগিয়ে নিতে চান। এই নেতার মতে, তাঁরা এমন সব মন্ত্রণালয়গুলো চান, যেগুলো তাঁদের হাতে থাকলে বিহারের দ্রুত উন্নয়ন হবে।

আগাম নির্বাচন

বিহারের বিধানসভার আগাম নির্বাচন নীতীশ কুমারের আরেকটি চাওয়া বলে জানা গেছে। বিহারে লোকসভার ৪০টি আসনের মধ্যে ৩০টিই পেয়েছে জেডি-ইউ ও এনডিএর জোট শরিকেরা। এই পরিবেশ থাকতে থাকতেই তিনি বিহারের পরবর্তী বিধানসভা নির্বাচন চান।

জেডি-ইউর আরেক নেতা বলেন, ‘আগাম নির্বাচন চাই। এটা আগামী ছয় মাসের মধ্যে হতে পারে। এ জন্য বিজেপি ও (এনডিএর) অন্য মিত্রদের সম্মত হতে হবে। আমরা এ জন্য শক্ত অবস্থান নিচ্ছি।’ তিনি বলেন, আগাম নির্বাচন হলে বিধানসভার ২৪৩ আসনের মধ্যে জেডি-ইউর আসন বাড়বে বলে তাঁরা মনে করছেন। বর্তমানে বিধানসভায় তাদের ৪৫ জন সদস্য রয়েছে।

তবে রাজ্যের বিজেপি নেতারা জেডি-ইউর আগাম নির্বাচনের দাবির বিরোধী। নিয়ম অনুযায়ী ২০২৫ সালের অক্টোবর-নভেম্বরে সেখানে পরবর্তী বিধানসভা নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে।

কেন্দ্রীয় তহবিল

নীতীশ কুমার বিহারের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে বড় ধরনের তহবিল চাইবেন। গত ফেব্রুয়ারিতে নীতীশের দল বিহারে ৯৪ লাখ দরিদ্র পরিবারকে দুই লাখ রুপি করে সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল। পাঁচ বছর–মেয়াদি এই প্রকল্পেই জন্য বিহারের মন্ত্রিসভা ইতিমধ্যে আড়াই লাখ কোটি রুপি বরাদ্দ অনুমোদন দিয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের আরও বেশি তহবিল পেতে বিহারের বিশেষ মর্যাদা ঘোষণার জন্যও একটি প্রস্তাব প্রস্তুত করেছে নীতীশের রাজ্য সরকার।

জেডি-ইউর আইনপ্রণেতা খালিদ আনোয়ার বলেন, তাঁরা বিহারের সার্বিক উন্নয়ন এবং জরিপে শনাক্ত দরিদ্র ব্যক্তিদের আর্থিক সহায়তা দিয়ে তাঁদের অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে চান।

জেডি-ইউর আরেক নেতা কে সি তিয়াগি মঙ্গলবার বলেন, তাঁরা বিহারের বিশেষ মর্যাদা চান। কেন্দ্রে এনডিএর শরিক হিসেবে জেডি-ইউ এই দাবি জোর দিয়ে উত্থাপন করবে।
সদ্য সমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি এককভাবে ২৪০ আসন পেয়েছে। সরকার গঠনের জন্য দরকার ২৭২ আসন। ফলে দলটি এককভাবে সরকার গঠন করতে পারবে না। সরকার গঠনের জন্য জোটের শরিকদের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে।

বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট মোট ২৯৩ আসন পেয়েছে। অন্যদিকে বিরোধী কংগ্রেস পেয়েছে ৯৯ আসন। আর কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ‘ইন্ডিয়া’ জোট পেয়েছে ২৩৩ আসন।