বাংলাদেশের ঘটনাবলি নিয়ে গতকাল সোমবার রাতেই ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বৈঠক করেছিলেন লোকসভার বিরোধী নেতা রাহুল গান্ধীর সঙ্গে। আজ মঙ্গলবার সকালে সংসদের অধিবেশন শুরু হওয়ার আগে তিনি সর্বদলীয় বৈঠক করলেন।
বৈঠকের পর জয়শঙ্কর নিজেই বলেন, বাংলাদেশে ইতিকর্তব্য নিয়ে সবাই দৃঢ়ভাবে সরকারের সঙ্গে রয়েছেন। এ ছাড়া শেখ হাসিনাকে ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা ঠিক করার জন্য ভারত সরকার তাঁকে কিছুটা সময় দিতে রাজি। ইতিমধ্যে বিষয়টি তাঁকে জানানো হয়েছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মঙ্গলবারই তিনি বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে সংসদে বিবৃতি দেবেন। তার আগে বৈঠক নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি। তবে বিভিন্ন সূত্রের খবর, সর্বদলীয় প্রতিনিধিদের বৈঠকে তিনি বলেছেন, পরিস্থিতি এমন কিছু ঘোলাটে নয় যে সে দেশে অবস্থানকারী ১২–১৩ হাজার ভারতীয়কে ফেরত আনতে হবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, পরিস্থিতির ওপর তীক্ষ্ণ নজর রাখা হয়েছে।
মঙ্গলবারের বৈঠকে কংগ্রেস সভাপতি ও রাজ্যসভার বিরোধী নেতা মল্লিকার্জুন খাড়গে, লোকসভার নেতা রাহুল গান্ধীসহ অন্যান্য দলের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
জয়শঙ্কর বৈঠকে বলেন, কোটা আন্দোলন শুরু হওয়ার পর দফায় দফায় শিক্ষার্থীসহ প্রায় আট হাজার ভারতীয় দেশে ফিরে এসেছেন।
সরকারি সূত্র অনুযায়ী, জয়শঙ্কর বৈঠকে বলেন, শেখ হাসিনার সঙ্গে ভারত সরকারের কিছু আলোচনা হয়েছে। ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা ঠিক করতে ভারত সরকার তাঁকে কিছুটা সময় দিতে রাজি, তা তাঁকে জানানো হয়েছে।
গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় হাসিনা ভারতে এসে পৌঁছান। দিল্লির উপকণ্ঠ গাজিয়াবাদের কাছে হিন্দন বিমানঘাঁটিতে তাঁর সঙ্গে দেখা করেন ভারতের নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল। সোমবার রাতেই খবর রটে হাসিনা ভারত থেকে লন্ডনে যাবেন। সর্বদলীয় বৈঠকে জয়শঙ্করের মন্তব্য থেকে মনে করা হচ্ছে, লন্ডন যাত্রার দিনক্ষণ হয়তো এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
ভারতের একটি গণমাধ্যমের খবর, বৈঠকে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী বলেন, নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার আগে সে দেশে একটা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সম্ভবত গঠিত হতে চলেছে। কাজেই ভারতের দুটি পরিকল্পনা করে রাখা উচিত। একটি মাঝারি মেয়াদের, অন্যটি দীর্ঘ মেয়াদের।
রাহুল বৈঠকে বলেন, শিক্ষার্থীরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেতৃত্বে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে দেখতে আগ্রহী।
সূত্র অনুযায়ী, জয়শঙ্কর এর জবাবে বলেন, পরিস্থিতি এখনো টলমলে। ক্রমাগত রূপ বদলাচ্ছে। কাজেই দেখেশুনে পদক্ষেপ নিতে হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে জয়শঙ্কর বলেন, সে দেশের কোনো কোনো এলাকায় ভারতবিরোধী মনোভাব দেখা গেছে। তবে বাংলাদেশে যারাই সরকারে থাকুক, ভারত সরকার তাদের সঙ্গে কাজ করবে।
বৈঠক শেষে শিবসেনার প্রিয়াঙ্কা চতুর্বেদী বলেন, বাংলাদেশে যা–ই ঘটুক, তার প্রভাব ভারতের ওপর পড়ে। সেখানে নৈরাজ্য দেখা দিলে ভারতের পক্ষে তা মঙ্গলের হতে পারে না। সীমান্ত এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা দরকার। প্রয়োজনে ভারতীয়দের ফিরিয়ে আনতেও দেশকে প্রস্তুত থাকতে হবে।