সি-পুতিনের না থাকা মোদির জন্য পরীক্ষা

এই দুই নেতার অনুপস্থিতির মানে, দেশ দুটির একটিও সম্ভবত যৌথ ঘোষণায় একমত হতে চায় না।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন (বামে), ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (মাঝে) ও চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং (ডানে)

ভারতে নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠেয় জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের অংশ না নেওয়াটা অনুমিতই ছিল। তবে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের অংশ না নেওয়ার ঘোষণা এই সম্মেলনের জন্য বড় ধাক্কা হিসেবেই দেখা হচ্ছে।

যখন বিশ্বের শক্তিশালী দেশগুলোর নেতারা এ সপ্তাহের শেষে নয়াদিল্লিতে মিলিত হতে যাচ্ছেন, তখন ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা ঘিরে গভীর ও গেঁড়ে বসা বিভক্তি খাদ্যনিরাপত্তা, ঋণসংকট এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে বৈশ্বিক সহযোগিতার মতো ইস্যুতে অগ্রগতিকে ঝুঁকিতে ফেলেছে।

এ বছর জি-২০-এর সভাপতির দায়িত্বে রয়েছে ভারত। ইউক্রেন যুদ্ধের বিষয়ে অনড় অবস্থানের কারণে গত শীর্ষ সম্মেলন কিংবা ভারতের সভাপতিত্বে মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনগুলোতে একটি যৌথ ঘোষণার বিষয়েও মতৈক্য হয়নি। এখন যদি সম্ভব হয়, একটি উপায় খুঁজে বের করাটা নেতাদের ওপরই বর্তায়।

সম্মেলনে সির পরিবর্তে চীনের প্রতিনিধিত্ব করবেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াং। অন্যদিকে পুতিনের অংশগ্রহণ না করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে মস্কো। এর মানে, দেশ দুটির একটিও সম্ভবত কোনো ধরনের মতৈক্যে পৌঁছাতে চায় না।

ফলে নয়াদিল্লিতে ৯ সেপ্টেম্বর শুরু হতে যাওয়া দুই দিনের এই সম্মেলনে পশ্চিমা দেশগুলো ও তাদের মিত্রদেরই আধিপত্য থাকবে।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, একটি ব্যর্থ শীর্ষ সম্মেলন পশ্চিমা ও অ-পশ্চিমা শক্তিগুলোর মধ্যে সহযোগিতার সীমাবদ্ধতাকেই প্রকাশ্যে আনবে। এতে দেশগুলো যেসব গোষ্ঠীর সঙ্গে থাকতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে, সেগুলোর সঙ্গেই আরও বেশি ঘনিষ্ঠ হবে।

ওয়াশিংটনের উইলসন সেন্টারের সাউথ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, ‘বৈশ্বিক হুমকি মোকাবিলার বিষয়টি বিবেচনায় নিলে পশ্চিম ও অ-পশ্চিম পক্ষে বিভক্ত হওয়াটা আপনার চাওয়া হতে পারে না।’

শক্তিশালী অর্থনৈতিক কেন্দ্র ও বৈশ্বিক দক্ষিণের (গ্লোবাল সাউথ) নেতা হিসেবে নয়াদিল্লির অবস্থানকে শক্তিশালী করতে জি-২০-এর সভাপতির পদ ব্যবহার করছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। কিন্তু সম্মেলনে ঐকমত্য তৈরি করতে ব্যর্থ হলে তাঁর কূটনৈতিক সক্ষমতার ভাবমূর্তিও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

কুগেলম্যান বলেন, ‘নেতাদের শীর্ষ সম্মেলন ব্যর্থ হলে নয়াদিল্লি, বিশেষ করে মোদি একটি বড় ধরনের কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হবেন।’

ভারত এখন পর্যন্ত ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের নিন্দা জানায়নি। আয়োজক দেশ হিসেবে যৌথ ঘোষণার বিষয়ে জোটের সদস্যদের রাজি করাতে হবে দেশটিকে। অন্যথায় ২০০৮ সালের পর এই প্রথম কোনো যৌথ ঘোষণা ছাড়াই শীর্ষ সম্মেলনটি শেষ হবে।

গত বছর ইন্দোনেশিয়ায় অনুষ্ঠিত জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনের বিষয়টি উল্লেখ করে একজন জ্যেষ্ঠ ভারতীয় কর্মকর্তা বলেন, বালি শীর্ষ সম্মেলনের পর থেকে (পক্ষগুলোর) অবস্থান কঠিন হয়েছে। ওই সম্মেলনের পর থেকে রাশিয়া ও চীন নিজেদের অবস্থান আরও কঠোর করেছে। মতৈক্যে পৌঁছানোটা কঠিন হবে।