দেড় মাসেরও বেশি জেলে থাকার পর আজ শুক্রবার অন্তর্বর্তী জামিন পেলেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। আগামী ১ জুন লোকসভা নির্বাচন শেষ হলে পরের দিনই তাঁকে তিহার জেলে ফেরত যেতে হবে। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সঞ্জীব খান্না ও দীপংকর দত্ত দুই পক্ষের মতামত শোনার পর জামিন মঞ্জুর করেন।
এর অর্থ, নির্বাচনী প্রচারে কেজরিওয়াল অংশ নিতে পারবেন। দিল্লির ৭ লোকসভা কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ ২৫ মে। ১ জুন পাঞ্জাবের ভোট। ৪ জুন ভোটের ফল প্রকাশ। সুপ্রিম কোর্টের এই রায় আম আদমি পার্টিকে (আপ) ভোটের মুখে নতুনভাবে উজ্জীবিত করে তুলবে।
আবগারি (মদ) দুর্নীতি মামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে গত ২১ মার্চ এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) কেজরিওয়ালকে গ্রেপ্তার করে। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, কোনো তথ্য-প্রমাণ ছাড়াই তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দুর্নীতির একটি টাকাও তাঁদের কাছ থেকে পাওয়া যায়নি। উদ্দেশ্য পুরোপুরি রাজনৈতিক। নির্বাচনের আগে নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রীকে সরকার প্রচার করতে দিতে চায় না। তারা চায় আম আদমি পার্টিকে ছত্রভঙ্গ করে দিতে। সেই কারণে তারা ইডিকে ব্যবহার করেছে।
কেজরিওয়াল এই গ্রেপ্তারের বিরুদ্ধে আবেদন জানিয়ে মামলা করেছিলেন প্রথমে নিম্ন আদালতে। সেখানে তা খারিজ হওয়ার পর তিনি যান হাইকোর্টে। সেখানেও প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর সুপ্রিম কোর্টে। সর্বোচ্চ আদালত তাঁকে অন্তর্বর্তী জামিন মঞ্জুর করেন।
ইডি জামিনের বিরোধিতা করে এসেছে সব সময়। এমনকি গত বৃহস্পতিবারেও তারা একটি হলফনামা পেশ করে জামিনের বিরোধিতা করে বলে প্রচারের জন্য কোনো রাজনৈতিক নেতাকে জামিন মঞ্জুর করা যায় না। আইনের চোখে রাজনৈতিক নেতা ও সাধারণ মানুষের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। গত পাঁচ বছরে দেশে ১২৩ বার ভোট হয়েছে। প্রচারের জন্য রাজনৈতিক নেতাকে জামিন দেওয়া হলে কোনো রাজনীতিককেই আর জেলে বন্দি রাখা যাবে না। ইডি জানায়, এই যুক্তিতে জামিন দেওয়া হলে, তা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। ভুল নজির সৃষ্টি করা হবে।
ইডি তার হলফনামায় এ কথাও বলে, ভোটে দাঁড়ানো ও প্রচার রাজনৈতিক নেতাদের পেশার অন্তর্গত। প্রচারের জন্য কেজরিওয়ালের জামিন হলে কোনো কৃষক কিংবা ব্যবসায়ীও ওই যুক্তিতে জামিন চাইতে পারেন। কারণ, কৃষিকাজ বা ব্যবসা তাঁদের পেশা। তা ছাড়া ভোটে প্রচার করা সাংবিধানিক অধিকার নয়।
সুপ্রিম কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ অবশ্য ইডির যুক্তি মানতে চাননি। কেজরিওয়াল যে জামিন পেতে পারেন, সেই ইঙ্গিত বিচারপতি খান্না ও বিচারপতি দত্ত চলতি সপ্তাহে শুনানি চলাকালীনই দিয়েছিলেন। ইডিকে তাঁরা বলেছিলেন, কেজরিওয়াল নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রী। জনপ্রতিনিধি। দুই বছর ধরে তদন্ত চালানো হলেও ভোটের ঠিক আগে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তা ছাড়া তিনি স্বভাবগত অপরাধী নন। বিচারপতিরা এই প্রশ্নও ইডিকে করেছিলেন, কেন এই তদন্ত এত দীর্ঘায়িত হচ্ছে।
বিচারপতিরা এর আগে শুনানিতে অবশ্য জানিয়েছিলেন, জামিন মঞ্জুর করা হলেও কেজরিওয়াল সরকারি ফাইলে সই করতে পারবেন না। মুখ্যমন্ত্রীর কোনো দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না।