ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার আর জি কর হাসপাতালে নারী চিকিৎসককে ধর্ষণ-হত্যাকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা জুনিয়র চিকিৎসকদের আন্দোলন তিনটি ধারায় ভাগ হয়ে পড়েছে।
ধারাগুলো হলো পশ্চিমবঙ্গ জুনিয়র চিকিৎসক ফ্রন্ট, পশ্চিমবঙ্গ জুনিয়র চিকিৎসক অ্যাসোসিয়েশন ও প্রোগ্রেসিভ জুনিয়র ডক্টরর্স অ্যাসোসিয়েশন।
আর জি কর হাসপাতালে গত আগস্ট ধর্ষণ-হত্যার শিকার হন নারী চিকিৎসক। এ ঘটনায় একমাত্র আসামি সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়কে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এরপর তাঁর বিরুদ্ধে প্রথম অভিযোগপত্র দেয় ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা-সিবিআই।
যদিও চিকিৎসকেরা একজনের বিরুদ্ধে দেওয়া অভিযোগপত্রকে মেনে নিতে পারছেন না। তাঁদের দাবি, এই হত্যাকাণ্ড একজন ঘটাতে পারেন না। জড়িত থাকতে পারে আরও অনেকে। এখন অন্যদের আড়াল করা হচ্ছে। তাই চিকিৎসকেরা দাবি তুলেছেন, অবিলম্বে সব অপরাধীর নাম প্রকাশ করে আবার অতিরিক্ত অভিযোগপত্র দিক সিবিআই।
এই ঘটনায় এক জোট হয়ে আন্দোলনে নামেন জুনিয়র চিকিৎসকেরা। তাঁরা প্রতিবাদ মিছিল, মশালমিছিল, রাতজাগা কর্মসূচি, পুলিশ হেডকোয়ার্টার লালবাজার ও সল্টলেকের সিবিআই দপ্তর সিজিও কমপ্লেক্স অভিমুখে যাত্রা, কলকাতার ধর্মতলায় অনশন মঞ্চ বানিয়ে আমরণ অনশন করেন।
১০ দফা দাবিতে চলে জুনিয়র চিকিৎসকদের আন্দোলন। এর মধ্যে অন্যতম রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণ স্বরূপ নিগমের অপসারণ। যদিও পশ্চিমবঙ্গ সরকার তা মেনে নেয়নি।
এরপর ভুক্তভোগী চিকিৎসকের মা–বাবার অনুরোধে ১৭ দিন পর অনশন প্রত্যাহার করেন আন্দোলনরত চিকিৎসকেরা। তবে তাঁরা বলে দেন, সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।
‘পশ্চিমবঙ্গ জুনিয়র চিকিৎসক ফ্রন্টের’ ব্যানারে রাজ্যজুড়ে চলে আন্দোলন। হুমকি দেওয়ার কারণে আর জি কর হাসপাতালে ‘থ্রেট কালচারের’ সঙ্গে যুক্ত ৫১ জন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্মকর্তার তালিকা করেন তাঁরা। সেই তালিকা ধরে ৫১ জনকে বিভিন্ন শাস্তি দেয় হাসপাতালের মেডিকেল কাউন্সিল।
৫১ জন কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেন। শাস্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত। তাঁরা আবার গড়ে তোলেন নতুন প্ল্যাটফর্ম ‘পশ্চিমবঙ্গ জুনিয়র চিকিৎসক অ্যাসোসিয়েশন’। তবে তাঁদের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ থাকায় রাজ্যের ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেস অস্বস্তিতে পড়ে যায়।
গতকাল মঙ্গলবার তৃণমূলের সমর্থন নিয়ে নতুন আরেকটি প্ল্যাটফর্ম যাত্রা শুরু করেছে। নাম ‘প্রোগ্রেসিভ জুনিয়র ডক্টরর্স অ্যাসোসিয়েশন’। তৃণমূলপন্থী জুনিয়র চিকিৎসকেরা এর নেতৃত্বে রয়েছে।
এর ফলে কলকাতার আর জি কর নারী চিকিৎসক ধর্ষণ-হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা আন্দোলন তিন ধারায় ভাগ হয়ে পড়ল। যদিও এখনো আন্দোলনে জুনিয়র চিকিৎসক ফ্রন্টের ভূমিকা অগ্রগণ্য। তারা আজ বুধবার সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সের সিবিআই দপ্তর অভিমুখে প্রতিবাদী মিছিল করে।
এদিকে জ্যেষ্ঠ চিকিৎসকদের সংগঠন ‘জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অব ডক্টরর্সের’ উদ্যোগে গত সোমবার ন্যায়বিচারের দাবিতে নতুন করে ৮০টি সংগঠন নিয়ে গড়া হয়েছে ‘অভয়া মঞ্চ’। তাদের মূল দাবি, নারী চিকিৎসক ধর্ষণ-হত্যাকাণ্ডে প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে জড়িত ব্যক্তিদের নাম সিবিআইকে প্রকাশ করতে হবে। একই সঙ্গে তদন্ত শেষ করে সব দোষীকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
অভয়া মঞ্চের উদ্যোগে আজ কলকাতার সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সে থাকা সিবিআই দপ্তর অভিমুখে মিছিল করা হয়। দাবি জানানো হয় দ্রুত তদন্ত ও বিচারের।