পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস
পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস

পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপালের প্রহরীরা আটকে রেখেছিলেন, অভিযোগ সেই নারী কর্মীর

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ তোলা সেই নারী কর্মী বলেছেন, তাঁকে রাজভবনের তিনজন কর্মী মিলে একটি কক্ষে আটকে রেখেছিলেন। শুধু তা–ই নয়, তাঁর মুঠোফোন এবং ব্যাগও ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছিল। ওই নারী যেন পুলিশের কাছে অভিযোগ না জানাতে পারেন, সে চেষ্টা করা হচ্ছিল। পুলিশ সূত্রে এসব তথ্য জানতে পেয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফ।

অভিযোগকারী নারী পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপালের কার্যালয় রাজভবনের চুক্তিভিত্তিক কর্মী। ২ মে ওই নারী অভিযোগ করেন, রাজ্যপাল দুবার তাঁর ওপর যৌন নিপীড়ন চালিয়েছেন। সূত্র বলেছে, ইতিমধ্যে পুলিশ তাঁর বিস্তারিত জবানবন্দি নিয়েছে।

ওই নারী রাজভবনের অন্তত তিনজন কর্মীর নাম উল্লেখ করেছেন, যাঁরা তাঁকে আটকে রেখেছিলেন। তাঁরা হলেন বিশেষ দায়িত্বে থাকা অবসরপ্রাপ্ত এক আইএএস কর্মকর্তা, একজন খাবার সরবরাহ কর্মী এবং অপরজন চাপরাশি (অফিস সহকারী)। তবে ওই তিন কর্মীর নাম প্রকাশ করেনি পুলিশ।  

তদন্তসংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা দ্য টেলিগ্রাফকে বলেন, কয়েকজন কর্মীর বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট করে ওই নারীকে একটি কক্ষে আটকে রাখার চেষ্টা চালানোর অভিযোগ আছে। তাঁরা ওই নারীর মালামাল ছিনিয়ে নিয়েছিলেন এবং তিনি যেন পুলিশকে বিষয়টি না জানাতে পারেন, তার জন্য ভবনের ভেতরে আটকে রাখার চেষ্টা করছিলেন।

ওই নারী বলেন, কর্মকর্তার নির্দেশে খাবার সরবরাহ কর্মী এবং পিয়ন তাঁকে আটকানোর চেষ্টা করেন। তাঁর অভিযোগ, ওই কর্মকর্তা তাঁকে এপিবিএক্স কক্ষে আটকে রাখেন এবং সে সময় তিনি মাকে ফোন করার চেষ্টা করলে ফোন ছিনিয়ে নেন। তিনি ওই কক্ষ থেকে পালানোর চেষ্টা করলে একজন তাঁর ব্যাগ টেনে ধরেন এবং তা ছিনিয়ে নেন।

ওই তিন কর্মীর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের ব্যাপারে জানতে দ্য টেলিগ্রাফের পক্ষ থেকে আনন্দ বোসকে খুদে বার্তা পাঠানো হয়েছিল। রাজ্যপালের সরকারি ই–মেইল আইডিতেও ই–মেইল পাঠানো হয়েছিল। গতকাল সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনো ধরনের সাড়া পাওয়া যায়নি।

ওই নারী পুলিশকে বলেছেন, সহায়তা চেয়ে চিৎকার শুরু করার পর তাঁকে জিনিসপত্রগুলো ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছিল।

তদন্তসংশ্লিষ্ট এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা গতকাল বলেন, পুলিশ এখনো রাজভবন থেকে কোনো সিসিটিভি ফুটেজ পায়নি। তদন্তের অংশ হিসেবে এখন পর্যন্ত রাজভবনের কর্মচারীদের কাউকে তলব করা হয়নি।

পশ্চিমবঙ্গের সাবেক অ্যাডভোকেট-জেনারেল জয়ন্ত মিত্র দ্য টেলিগ্রাফকে বলেন, রাজ্যপাল যদি রাজভবনের কর্মীদের পুলিশকে সহযোগিতা না করার জন্য নির্দেশ দিয়েও থাকেন, তবু কর্মীরা তাদের নিজস্ব সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে স্বাধীন। তাই রাজভবনের কর্মীদের বিরুদ্ধে তদন্ত চালানোর ক্ষেত্রে পুলিশের কোনো আইনি বাধা নেই।

জ্যেষ্ঠ আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য মনে করেন, পুলিশ যদি মনে করে রাজভবনের কর্মীদের বিরুদ্ধ মামলা করা দরকার, তবে তা তারা করতে পারে। তিনি বলেন, ‘আমি যতটা বুঝি, রাজ্যপাল শুধু ফৌজদারি মামলা থেকে দায়মুক্তি পেতে পারেন। তবে সে মামলার প্রশ্ন তো আরও অনেক পরের কথা। তদন্ত করতে তো পুলিশের বাধা নেই।’

অভিযোগ ওঠার পর কোচিতে চলে গিয়েছিলেন আনন্দ বোস। গতকাল তিনি কলকাতায় ফিরেছেন। তাঁর অভিযোগ, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ‘নোংরা রাজনীতি’ করছেন।

আনন্দ বোস বলেন, ‘রাজ্যপালের রাজনীতি থেকে দূরে থাকার কথা। আমার আক্ষেপ হলো, মুখ্যমন্ত্রী আমাকে রাজনীতিতে টেনে এনেছেন, বিশেষ করে এমন সময়ে যখন কি না নির্বাচন চলছে।’