নিউইয়র্কে বসে তাঁরা ভাবেন, তাঁদের ইচ্ছেমতো পৃথিবী চলবে

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ও মার্কিন ধনকুবের জর্জ সোরেস
ছবি: এএফপি ফাইল ছবি

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সমালোচনা করায় মার্কিন ধনকুবের জর্জ সোরেসকে এবার একহাত নিলেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে এক আলোচনা সভায় জয়শঙ্কর বক্তব্যে জর্জ সোরেসকে ‘বুড়ো, ধনী, জেদি ও বিপজ্জনক’ আখ্যায়িত করে বলেন, ‘এ ধরনের মানুষ ভাবেন, তিনি যা মনে করেন, সেটাই ঠিক। সারা বিশ্ব সেই ভাবনাতেই চলবে।’

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘নিউইয়র্কে বসে থেকে এ ধরনের মানুষ ভাবেন, তাঁদের ইচ্ছেমতো পৃথিবী চলবে। সে জন্য এসব মানুষ প্রচুর অর্থ খরচ করেন। তাঁরা মনে করেন, যদি তাঁদের পছন্দমতো ব্যক্তিরা জেতেন, তা হলে নির্বাচন ভালো হয়েছে। আর তা না হলে সংশ্লিষ্ট দেশের গণতন্ত্র খারাপ। মজাটা হচ্ছে, তাঁরা বোঝাতে চান, খোলামেলা সমাজের স্বার্থে এসব করা হচ্ছে। এটা স্রেফ ভণ্ডামি।’

জয়শঙ্কর বলেন, ‘এ ধরনের কথাবার্তা আমাদের দুশ্চিন্তাগ্রস্ত রাখে। কারণ আমরা জানি, ঔপনিবেশিকতা কী। আমরা সেই অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গিয়েছি। বাইরের শক্তি নাক গলালে কী বিপদ হয়, তা আমাদের জানা।’

৯২ বছর বয়সী জর্জ সোরেস সম্প্রতি জার্মানির মিউনিখে এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে আদানি গোষ্ঠীকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা বিতর্ক নিয়ে কথা বলার সময় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সমালোচনা করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, আদানিকাণ্ডের ফলে ভারত সরকারের ওপর মোদির প্রভাব কমবে। আদানি শিল্পগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে শেয়ারবাজারে জালিয়াতি ও কারচুপির যেসব অভিযোগ উঠেছে, মোদিকে তার জবাবদিহি করতে হবে সংসদে ও বিনিয়োগকারীদের কাছে। ভারতে গণতন্ত্রের নবজাগরণ ঘটবে।

সোরেসের ওই মন্তব্যের পরপরই ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি কড়া ভাষায় তাঁর সমালোচনা করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, সোরেস ভারতবিরোধী চক্রান্তের সঙ্গে যুক্ত। তিনি ভারতীয় গণতন্ত্রকে ধ্বংস করতে চান। সোরেসকে উপযুক্ত জবাব দেওয়ার জন্য তিনি প্রত্যেক ভারতবাসীকে এক জোট হওয়ার অনুরোধ জানিয়েছিলেন। স্মৃতি ইরানির পর মুখ খুললেন জয়শঙ্কর। স্পষ্টতই বোঝা যাচ্ছে, বিদেশিদের যেকোনো সমালোচনা বিজেপি ও সরকার ভারতবিরোধী চক্রান্ত বলে মনে করছে। তারা এভাবে সমালোচনার মোকাবিলায় জাতীয়তাবাদকে হাতিয়ার করতে চাইছে।

সোরেস এর আগেও মোদি সরকারের সমালোচনা করেছিলেন। সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদের মধ্য দিয়ে জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহারের বিরুদ্ধে তিনি মতপ্রকাশ করেছিলেন। সিএএর সমালোচনাও করেছিলেন।

সোরেসের মন্তব্য এবং সরকার ও বিজেপির প্রতিক্রিয়া প্রসঙ্গে কংগ্রেস নেতা পি চিদাম্বরম শনিবার বলেন, ‘মার্কিন ধনকুবের এর আগেও যা বলেছিলেন, তার অনেক কিছুর সঙ্গে আমি সহমত হইনি, এখন যা বলছেন, তার অনেক কিছুর সঙ্গেও সহমত নই। কিন্তু তার পাল্টা হিসেবে তিনি ভারতের গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করতে চাইছেন, এই মন্তব্যও নিতান্তই শিশুসুলভ।’

শনিবার একাধিক টুইটে সাবেক অর্থমন্ত্রী এই মন্তব্য করে বলেন, ‘আমি জানতাম না মোদি সরকার এতটাই ঠুনকো যে ৯২ বছর বয়সী এক ধনী বিদেশির মন্তব্যে পড়ে যেতে পারে।’