রাজ্যের দাবি আদায়ের জন্য আজ বুধবার সন্ধ্যায় প্রতিনিধিদল নিয়ে রাজধানী নয়াদিল্লি এসেছেন অন্ধ্র প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডু। দাবিদাওয়া নিয়ে আগামীকাল বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠক করবেন। মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর এটাই নাইডুর প্রথম দিল্লি সফর।
১০ বছর আগে রাজ্য বিভাজনের সময় থেকে যেসব প্রতিশ্রুতি অপূর্ণ রয়ে গেছে, সেসব দাবি আদায় করাই নাইডুর এই সফরের লক্ষ্য।
নরেন্দ্র মোদির পাশাপাশি অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, সড়ক পরিবহনমন্ত্রী নিতিন গড়কড়ি এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও বিজেপি সভাপতি জেপি নাড্ডার সঙ্গেও বৈঠক করার কথা রয়েছে অন্ধ্র প্রদেশের এই মুখ্যমন্ত্রীর। তাঁর সঙ্গে দিল্লি এসেছেন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী পায়াভুলু কেশব, পানিসম্পদমন্ত্রী নিমালা রামানাইডু এবং অবকাঠামো ও বিনিয়োগবিষয়ক মন্ত্রী বি সি জনার্দন রেড্ডি।
২০১৪ সালে অন্ধ্র প্রদেশ ভেঙে তেলেঙ্গানা ও অন্ধ্র প্রদেশ রাজ্য গঠিত হয়। অন্ধ্র প্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনের আগে চন্দ্রবাবু নাইডুর দল তেলেগু দেশম পার্টি (টিডিপি) জোট বাঁধে বিজেপি ও জনসেনা পার্টির সঙ্গে। লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচনে এই জোট বিপুল ভোটে জিতে ক্ষমতায় আসে। নির্বাচনী প্রচারে চন্দ্রবাবু নাইডু জানিয়েছিলেন, রাজ্য পুনর্গঠনের সময় থেকে যেসব কেন্দ্রীয় প্রতিশ্রুতি এখনো পূরণ করা হয়নি, তা আদায় করবেন তিনি।
সেই সব প্রতিশ্রুতির অন্যতম গোদাবরি নদের ওপর গড়ে তোলা পোলাভরম বাঁধ প্রকল্প। ২০০৪ সাল থেকে শুরু করা এই বিরাট বাঁধ প্রকল্পের কাজ এখনো পুরোপুরি শেষ হয়নি। ২০২৫ সালের মধ্যে তা যাতে শেষ হয়, সে জন্য মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু এই সফরে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে অনুরোধ জানাবেন। এর পাশাপাশি রয়েছে রাজ্যের নতুন রাজধানী অমরাবতী তৈরির কাজ। এ ছাড়া রাজ্যের জাতীয় সড়কগুলো নিয়েও বেশ কিছু দাবি তাঁর আছে। দিল্লি আসার আগে তিনি জানিয়েছেন, তাঁর আশা বন্ধু সরকারের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা তিনি পাবেন।
ভোটের ফল প্রকাশের পর থেকেই চন্দ্রবাবু এবং বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার তাঁদের রাজ্যের বিশেষ মর্যাদা দাবি করে আসছেন। দুটি দাবিই অবশ্য বহু পুরোনো। কিন্তু নরেন্দ্র মোদি সরকার দীর্ঘ ১০ বছরে সেই দাবি মানার কোনো ইঙ্গিত দেয়নি। চন্দ্রবাবুও বুঝেছেন, বিশেষ রাজ্যের মর্যাদা হয়তো পাওয়া যাবে না। কিন্তু সেই মর্যাদা থাকলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে করছাড় ও যেসব বাড়তি আর্থিক সহায়তা পাওয়া যায়, অন্যভাবে তিনি তা আদায় করতে উৎসুক। বৃহস্পতিবার সেই বিশেষ আর্থিক প্যাকেজ নিয়ে তিনি আলোচনা করবেন প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে। চন্দ্রবাবু নাইডুর এই সফর থেকে বোঝা যাবে আগামী দিনে অন্ধ্র প্রদেশ ও দিল্লির মধ্যে কেন্দ্র–রাজ্য সম্পর্ক কেমন হবে।
চন্দ্রবাবু নাইডু এর মধ্যে অন্য একটি কাজও করেছেন। তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী রেবন্ত রেড্ডিকে চিঠি লিখে রাজ্য বিভাজনের সময় থেকে অমীমাংসিত বিষয়গুলো নিষ্পত্তির জন্য বৈঠকের প্রস্তাব দিয়েছেন। রেবন্ত সেই প্রস্তাব সঙ্গে সঙ্গে গ্রহণ করে চন্দ্রবাবুকে বৈঠকে আমন্ত্রণ জানান। পাল্টা চিঠিতে তিনি লেখেন, মানুষের মঙ্গলের জন্য এ ধরনের বৈঠক হওয়া অত্যন্ত জরুরি। পারস্পরিক সহযোগিতাই জনগণকে ভালো রাখে।
চন্দ্রবাবু নাইডু দিল্লি থেকে হায়দরাবাদ ফিরলে আগামী শনিবার সেই বৈঠক হওয়ার কথা। গত চার বছর এই দুই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের মধ্যে এ নিয়ে কোনো বৈঠক হয়নি। কংগ্রেসে যোগ দেওয়ার আগে রেবন্ত রেড্ডি ছিলেন টিডিপির তেলেঙ্গানা শাখার কার্যনির্বাহী প্রেসিডেন্ট। ভোটের আগে এবং পরে কংগ্রেস কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও জানিয়েছিল, ক্ষমতায় এলে তারা অন্ধ্র প্রদেশকে বিশেষ মর্যাদা দেবে। একই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংও; কিন্তু নরেন্দ্র মোদি কর্ণপাত করেননি।
চন্দ্রবাবু নাইডু ও রেবন্ত রেড্ডির এই বন্ধুতা রাজনৈতিক দিক থেকে তাৎপর্যপূর্ণ। চন্দ্রবাবুর নেতৃত্বাধীন টিডিপি একসময় মোদি সরকারের সহযোগী দল ছিল। ২০১৮ সালে কেন্দ্রীয় অসহযোগিতার অভিযোগে তিনি এনডিএ জোট ছাড়েন। এবার ‘ইন্ডিয়া’ জোটে তাঁকে শামিল করার একটা চেষ্টাও হয়েছিল। চন্দ্রবাবু ও নীতীশ দুজনেই জানেন সরকারের স্থায়িত্ব তাঁদের সমর্থনের ওপর নির্ভরশীল। কাজেই চাপের রাজনীতি তাঁরা জারি রাখবেন। নীতীশ কুমারের উদ্যোগে তাঁর দল জেডিইউ ইতিমধ্যে বিহারকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়ার দাবিতে এক প্রস্তাব পাস করেছে। বৃহস্পতিবার দাবিদাওয়া পেশের মধ্য দিয়ে চন্দ্রবাবু নাইডুও শুরু করবেন রাজনৈতিক চাপ।