কংগ্রেসের সভাপতি পদে ত্রিমুখী লড়াইয়ের আভাস

দুই কংগ্রেস নেতা অশোক গেহলট ও শশী থারুর (ডানে)
 ছবি: ফেসবুক

কংগ্রেস সভাপতি নির্বাচনের দিন যত এগিয়ে আসছে, ততই প্রকট হচ্ছে পরিচিত সেই বাংলা প্রবাদ, ‘যার বিয়ে তার হুঁশ নেই, পাড়াপড়শির ঘুম নেই’। প্রবাদের লক্ষ্য অবশ্যই কংগ্রেস নেতা ও শতাব্দীপ্রাচীন এই দলটির সাবেক সভাপতি রাহুল গান্ধী।

‘ভারত জোড়ো যাত্রা’য় ব্যস্ত রাহুল এখনো বিন্দুমাত্র এমন কোনো ইঙ্গিত দেননি, যাতে মনে হতে পারে শেষ মুহূর্তে তিনি সভাপতি পদে প্রার্থী হয়ে মনোনয়নপত্র পেশ করবেন। আনুষ্ঠানিকভাবে দলের নেতৃত্ব দেওয়া নিয়ে ছিটেফোঁটা আগ্রহও তিনি দেখাচ্ছেন না। অথচ একের পর এক রাজ্যের প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব ‘রাহুলকেই চাই’ বলে প্রস্তাব পাস করিয়ে চলেছেন।

ইতিমধ্যেই রাজস্থান, ছত্তিশগড়, পশ্চিমবঙ্গ, গুজরাট, বিহার, মহারাষ্ট্র, ওডিশা, পদুচেরি ও জম্মু-কাশ্মীরের প্রদেশ নেতৃত্ব সভাপতি হিসেবে রাহুলের নামে সিলমোহরের ছাপ দিয়েছেন। মধ্যপ্রদেশ, কর্ণাটক, ঝাড়খন্ড, হিমাচল প্রদেশ, উত্তরাখন্ড, আসাম, কেরালা, তামিলনাড়ু প্রদেশ নেতৃত্বও ওই পথে হাঁটতে চলেছেন বলে খবর। গান্ধী পরিবারের প্রতি অন্ধ আনুগত্য দেখানোর এই সমবেত প্রচেষ্টা শেষ পর্যন্ত সফল হবে কি না, সেই প্রশ্নের মুখে চলেছে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রস্তুতি।

আপাতত দুটি নাম জল্পনার শীর্ষে। রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট এবং কেরালা থেকে নির্বাচিত লোকসভার সদস্য শশী থারুর। পাঞ্জাবের সাংসদ মনীশ তিওয়ারিও আগ্রহী বলে দলের অভ্যন্তরের খবর। তিনিও আসরে নামলে প্রতিযোগিতার চরিত্র হবে ত্রিমুখী।

গত সোমবার কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে শশী থারুরের সাক্ষাৎকারের পর কংগ্রেস শিবিরে এই ধারণা বদ্ধমূল হয়েছে যে দীর্ঘ ২২ বছর পর দলের সভাপতি পদে আরও একবার ভোটাভুটি হতে চলেছে। ২০০০ সালের সেই ভোটে সোনিয়া হারিয়েছিলেন উত্তর প্রদেশের প্রতিষ্ঠিত ব্রাহ্মণ নেতা জিতেন্দ্র প্রসাদকে। জিতেন্দ্র প্রসাদের পুত্র জিতিন প্রসাদ উত্তর প্রদেশের বিধানসভা ভোটের আগে কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়ে এখন মন্ত্রী।

কংগ্রেসে গণতন্ত্রকামী বলে পরিচিত ‘জি-২৩’ নেতাদের অন্যতম শশী থারুর কিছুদিন আগে নিজেই সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। সোমবার সোনিয়ার সঙ্গে দেখা করার উদ্দেশ্য ছিল যে সেই অনুমতি ভিক্ষা, তা–ও প্রচার হয়ে গেছে। না হলে কংগ্রেস মুখপাত্র জয়রাম রমেশ টুইট করে বলতেন না, ‘নির্বাচনী লড়াইয়ে যে কেউ স্বাগত। এটাই সোনিয়া-রাহুলের অবস্থান। ভোটে দাঁড়ানোর জন্য কারও অনুমতি গ্রহণের প্রয়োজন নেই।’ মজাটা হলো, শশী থারুর নিজের আগ্রহ গোপন না করলেও অশোক গেহলট এখনো তাঁর প্রার্থী পদ বা সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা নিয়ে রা কাড়েননি। বরং ‘রাহুলকেই চাই, তিনিই যোগ্য’ এই প্রচারের সূত্রধর তিনিই। তাঁর রাজ্য রাজস্থান সবার আগে এই দাবি জানিয়ে প্রস্তাব গ্রহণ করে। তারপর ছত্তিশগড় এবং একে একে অন্যরা।

নির্বাচন অনিবার্য হয়ে দাঁড়ালে গেহলটই যে গান্ধী পরিবারের প্রথম পছন্দ, তা স্পষ্ট। কিন্তু তাঁকে নিয়ে সংশয় ও জটিলতা রয়েছে। কারণ, দলের সভাপতি হলেও তিনি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রিত্ব ছাড়তে রাজি নন। দ্বৈত দায়িত্বে থেকে তিনি আগামী বছর রাজ্যের ভোট বৈতরণি পার হতে চান। একান্তই তা সম্ভবপর না হলে পছন্দের কাউকে মুখ্যমন্ত্রিত্ব দিতে চান। এই জটিলতার সমাধান সোনিয়া-রাহুল কীভাবে কাটাবেন, তা এখনো অজানা। রাজস্থান কংগ্রেসের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে প্রবীণ গেহলটের চ্যালেঞ্জার নবীন শচীন পাইলট। গান্ধী পরিবারের কথায় একবার বিদ্রোহ করেও তিনি দলত্যাগী হননি। শচীন জানেন গেহলট কংগ্রেস সভাপতি হলে রাজ্য রাজনীতিতে তাঁর উত্তরণের পথ মসৃণ হয়ে যাবে। কিন্তু তা না হলে? গান্ধী পরিবারের চিন্তাও তা নিয়ে।

২২ সেপ্টেম্বর কংগ্রেস সভাপতি নির্বাচনের বিজ্ঞপ্তি জারি হচ্ছে। ২৪ থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময়। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন ৮ অক্টোবর। ভোট গ্রহণ ১৭ অক্টোবর। ফল প্রকাশ হবে ১৯ তারিখে। শেষ ত্রিমুখী লড়াই হয়েছিল ১৯৯৭ সালে। শরদ পাওয়ার ও রাজেশ পাইলটকে হারিয়ে সেবার সভাপতি হয়েছিলেন সীতারাম কেশরী। তিন বছর পর ২০০০ সালে সীতারাম কেশরীকে হারিয়ে সভানেত্রী হয়েছিলেন সোনিয়া।