পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভার বিশেষ অধিবেশন
পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভার বিশেষ অধিবেশন

ধর্ষণের দায়ে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভায় আইন পাস

ধর্ষণের শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভায় উত্থাপিত বিলটি সর্বসম্মতিক্রমে পাস হয়েছে। আজ মঙ্গলবার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন সরকারের উদ্যোগে ‘দ্য অপরাজিতা উইমেন অ্যান্ড চাইল্ড বিল ২০২৪’ (ওয়েস্টবেঙ্গল ক্রিমিনাল ল’জ অ্যামেন্ডমেন্ট বিল ২০২৪) বিলটি পাস হয়। এর মধ্য দিয়ে পশ্চিমবঙ্গই ভারতের প্রথম কোনো রাজ্য, যারা ধর্ষণ, দলবদ্ধ ধর্ষণ ও শিশুদের যৌন নিপীড়নবিরোধী কেন্দ্রীয় আইনে সংশোধনীর উদ্যোগ নিয়েছে।

সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় আর জি কর হাসপাতালে নারী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিলটি পাসের উদ্যোগ নেওয়া হয়। বিলটি এখন অনুমোদনের জন্য রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের কাছে পাঠানো হবে। তিনি অনুমোদন দেওয়ার পর এটি ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর কাছে পাঠানো হবে। রাষ্ট্রপতি অনুমোদন করলে তা আইনে পরিণত হবে।

আজ পশ্চিমবঙ্গে রাজ্য বিধানসভার বিশেষ অধিবেশনে রাজ্যের আইনমন্ত্রী মলয় ঘটক ধর্ষণের শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে বিলটি উত্থাপন করেন। এরপর বিধানসভায় এ নিয়ে আলোচনা হয়। ইন্ডিয়া টুডে–এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিধানসভায় বিরোধী দলের নেতা শুভেন্দু অধিকারীর প্রতি অনুরোধ করেছেন, তিনি যেন বিলটি অনুমোদন করতে রাজ্যপালকে আহ্বান করেন।

মমতা বলেন, ‘এ বিলের মধ্য দিয়ে কেন্দ্রীয় আইনে থাকা ফাঁকফোকরগুলো বন্ধ করার চেষ্টা করেছি আমরা। ধর্ষণ হলো মানবতাবিরোধী এক অভিশাপ। এ ধরনের অপরাধ ঠেকাতে সামাজিক সংস্কার প্রয়োজন।’

ইতিমধ্যে রাজ্য বিজেপি বিলটিকে স্বাগত জানিয়েছে। আজ বিধানসভায় আলোচনা করতে গিয়ে রাজ্যের বিরোধী দলের নেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, তিনি সাতটি সংশোধনী এনেছেন। তিনিও চান এই  বিল পাস হোক। আইনে পরিণত হোক। আলোচনার পর শুভেন্দু অধিকারী আর জি কর কাণ্ড নিয়ে বিচারের দাবিতে স্লোগান দেন।

পাস হওয়া নতুন সংশোধনী বিলে ধর্ষণের শাস্তি আমৃত্যু কারাদণ্ড কিংবা মৃত্যুদণ্ড এবং জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। ধর্ষণের শিকার হয়ে মৃত্যু কিংবা কোমায় চলে যাওয়ার ঘটনায় ধর্ষকের শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড ও জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় আমৃত্যু কারাদণ্ড বা মৃত্যুদণ্ড ও জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। যিনি ধর্ষণের শিকার হয়েছেন, তাঁর নাম প্রকাশ, ধর্ষণ মামলায় অনুমতি ছাড়া বিচারপ্রক্রিয়ার বিবরণ প্রকাশ হলে তিন থেকে পাঁচ বছর কারাদণ্ড ও জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।

১৬ বছরের কম বয়সী নারীকে ধর্ষণ করলে ন্যূনতম সাজা ২০ বছর কারাদণ্ড কিংবা আমৃত্যু সশ্রম কারাদণ্ড ও জরিমানার কথা বলা হয়েছে। ১২ বছরের কম বয়সী কাউকে ধর্ষণ করলে ন্যূনতম ২০ বছর কিংবা আমৃত্যু সশ্রম কারাদণ্ড ও জরিমানা কিংবা মৃত্যুদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে বিলে। আর ১৮ বছরের কম বয়সী নারী দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হলে তাঁর সাজা হবে আমৃত্যু কারাদণ্ড ও জরিমানা অথবা মৃত্যুদণ্ড।

৯ আগস্ট কলকাতার আর জি কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে এক শিক্ষানবিশ নারী চিকিৎসককে ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগে কার্যত রাস্তায় নেমেছিল প্রায় গোটা শহর। রাজ্যের নানা প্রান্তসহ ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে এই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। আর জি কর হাসপাতালে চিকিৎসককে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় আজও ভারতজুড়ে প্রতিবাদ হচ্ছে।

গতকাল আর জি কর হাসপাতালের অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষসহ আরও তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা (সিবিআই)। এই  তিনজন হলেন সন্দীপ ঘোষের দেহরক্ষী আফসার আলী এবং অধ্যক্ষের ঘনিষ্ঠ দুই ব্যবসায়ী সুমন হাজরা ও বিপ্লব সিংহ। আজ দুপুরে তাঁদের কলকাতায় সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতে হাজির করা হয়।