পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সচিবালয় অভিমুখে পদযাত্রা ‘নবান্ন অভিযান’–এর ডাকে রাজনীতিতে উত্তেজনার পারদ এখন তুঙ্গে। আজ মঙ্গলবার দুপুরে শুরু হওয়া এ অভিযান ঠেকাতে প্রস্তুত ছয় হাজার পুলিশ, র্যাফ, ইএফআর ও স্ট্রাকো বাহিনী। সঙ্গে আছে জলকামান ও কাঁদানে গ্যাসের শেল।
অভিযান নিয়ে রাজ্যবাসীর মনে দুশ্চিন্তা ভর করেছে। শান্তিপূর্ণভাবে অভিযান হবে তো? আন্দোলনকারীদের মিছিল নবান্ন ভবন পর্যন্ত পুলিশ কি পৌঁছাতে দেবে, নাকি আটকে দেবে কলকাতা-হাওড়ার বিদ্যাসাগর সেতু আর সাঁতরাগাছিতে।
গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় পশ্চিমবঙ্গের এডিজি (দক্ষিণবঙ্গ) সুপ্রতিম সরকার ও এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) মনোজ বর্মা কলকাতায় এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, এ অভিযান বেআইনি। অভিযানকারীরা পুলিশের অনুমতি নেননি। তবে গতকাল দুটি সংগঠনের তরফ থেকে ই-মেইল করে নবান্ন অভিযানের কথা বলা হলেও অনুমতি চায়নি।
রাজনৈতিক দলের ব্যানারহীন এ অভিযানে নামছেন মূলত রাজ্যের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। আরও নামছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মীরা।
পুলিশ কর্মকর্তারা আরও বলেন, অভিযান ঠেকাতে রাজ্য পুলিশ পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিয়েছে। আজ সকাল আটটা থেকে পুলিশ অভিযানকে ঘিরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে। অভিযানের ১৯টি যাত্রাপথে প্রতিবন্ধক বসাবে পুলিশ। থাকবে পুলিশ, র্যাফ, ইএফআর ও স্ট্রাকো বাহিনী। আরও থাকবেন উপকমিশনার পদমর্যাদার ২৬ পুলিশ কর্মকর্তা। এ ছাড়া নবান্ন ভবনজুড়ে জারি থাকছে ১৪৪ ধারা আর নাগরিক সুরক্ষা আইনের ১৬৩ ধারা।
এ অভিযান হচ্ছে অরাজনৈতিকভাবে ‘পশ্চিমবঙ্গ ছাত্রসমাজ’–এর ডাকে। অভিযানকে সমর্থন দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ।
গতকাল পশ্চিমবঙ্গ ছাত্রসমাজ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, অভিযান হবে শান্তিপূর্ণ। মিছিল শান্তিপূর্ণভাবে এগিয়ে যাবে নবান্ন অভিমুখে। কেউ দলীয় পতাকা নিয়ে তাতে যোগ দিতে পারবেন না। আসতে পারবেন শুধু জাতীয় পতাকা নিয়ে।
ছাত্রসমাজের নেতারা এ অভিযানে যোগ দিতে সব রাজনৈতিক দলের প্রতিও আহ্বান জানিয়েছেন। বিজেপি এতে সায় দিয়েছে। জানা গেছে, বিজেপির বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতা–কর্মীরা অভিযানে শামিল হবেন। তৃণমূলের কেউ কেউ অভিযানে অংশ নিতে যাচ্ছেন বলে দাবি করা হয়েছে আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে। কিন্তু এ দাবি গতকালই প্রত্যাখ্যান করেছেন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের রাজ্য সভাপতি তৃণাঙ্কুর মুখোপাধ্যায়।
এদিকে অভিযানে বাম ছাত্রসংগঠন যোগ না দিলেও তারা নারী চিকিৎসক ধর্ষণ-হত্যাকাণ্ড ও আর জি কর হাসপাতালের দুর্নীতি নিয়ে রাজ্যজুড়ে আন্দোলনে থাকবে। কংগ্রেসও একইভাবে আন্দোলনে নামতে পারে। তবে বিজেপি প্রকাশ্যে ওই অভিযানে সমর্থন জানিয়ে বলেছে, মুখ্যমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অপসারণ ছাড়া এ রাজ্যে শান্তি ফিরবে না। রাজ্য হত্যা, দুর্নীতির চাদরে ঢেকে যাবে।
নবান্ন অভিযান নিয়ে রাজ্য পুলিশ যেমন তৎপর, তেমনি বিজেপির রাজ্য নেতৃত্বও অভিযানকে সার্থক করতে পরোক্ষভাবে মাঠে নেমেছে। বিজেপির নেতারা ঠিক করেছেন, অভিযানে কেউ আহত হলে তাঁদের অ্যাম্বুলেন্সসহ চিকিৎসার যাবতীয় ব্যবস্থা নেবে তারা, থাকবেন সংগঠনের চিকিৎসকেরা।
অভিযানের দিন আজ বিজেপির রাজ্য সভাপতি ও কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী, সংসদ সদস্য সুকান্ত মজুমদার কলকাতার মুরলীধর সেন লেনে বিজেপির প্রধান কার্যালয়ে থাকবেন। আর রাজ্যের বিরোধীদলীয় নেতা ও বিজেপির বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী থাকবেন হাওড়ার সাঁতরাগাছিতে। দুই নেতা দুই জায়গা থেকে অভিযান দেখভাল করবেন।
রাজনৈতিক দলের ব্যানারহীন এ অভিযানে নামছেন মূলত রাজ্যের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। আরও নামছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মীরা।
রাজ্য বিধানসভার বিরোধীদলীয় নেতা শুভেন্দু অধিকারীর দাবি, মুখ্যমন্ত্রী আর জি কর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নারী চিকিৎসক ধর্ষণ-হত্যাকাণ্ডের দায় নিয়ে অবিলম্বে পদত্যাগ করুক। কারণ, রাজ্যের মানুষ বুঝে ফেলেছেন, এ হত্যাকাণ্ডকে আড়াল করতে চাইছেন তিনি। তাই রাজ্যজুড়ে মমতার পদত্যাগের দাবি জোরালো হয়েছে। এক দফার এ দাবিতেই আজ বেলা দুইটার দিকে নবান্ন অভিযানে নামছে রাজ্যের ছাত্রসমাজ, সঙ্গে সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ।
এ অভিযান বন্ধের দাবিতে কলকাতা হাইকোর্টে দায়ের হওয়া একটি জনস্বার্থ মামলায় আদালত ইতিমধ্যে জানিয়ে দিয়েছেন, অভিযানে হস্তক্ষেপ করবেন না আদালত।
এর আগে ছাত্রসমাজের নেতারাও কলকাতা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়ে দিয়েছেন, সোমবারের মধ্যে (গতকাল) মুখ্যমন্ত্রী মমতা পদত্যাগ করলে তাঁরা এ অভিযান নিয়ে নতুন সিদ্ধান্ত নেবেন। তাঁরা আরও জানান, আজ দুপুর ১২টার দিকে কলেজ স্কয়ার ও সাঁতরাগাছিতে জমায়েত হবেন ছাত্ররা। এরপর মিছিল নিয়ে নবান্ন অভিযানে নামবেন।