আট দেশের সংগঠন সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের (এসসিও) বহর বাড়ল। নবম সদস্য হলো ইরান। মঙ্গলবার ভারতের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এসসিও শীর্ষ নেতাদের ভার্চ্যুয়াল সম্মেলন হয়। সেখানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সংগঠনের সদস্য হিসেবে ইরানের অন্তর্ভুক্তির কথা ঘোষণা করেন।
রাশিয়ার ঘনিষ্ঠ দেশ বেলারুশও এই সংগঠনের সদস্য হতে চলেছে। এ জন্য ইতিমধ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ ‘মেমোরান্ডাম অব অবলিগেশন’-এ সই করেছে তারা।
সম্মেলন শেষে মঙ্গলবার ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিনয় কোয়াত্রা সংবাদ সম্মেলনে জানান, সবকিছু ঠিক থাকলে বেলারুশ আগামী বছর এসসিওর পূর্ণ সদস্যের মর্যাদা পাবে। তিনি বলেছেন, বর্তমানে ১৪টি দেশ এসসিওর ‘ডায়ালগ পার্টনার’। তা ছাড়া তিনটি দেশ রয়েছে পর্যবেক্ষক হিসেবে। ইরান ১৫ বছর আগে এই সংগঠনের সদস্য হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছিল।
সদস্য হওয়ায় ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি ও ইরানি জনগণকে অভিনন্দন জানিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি। ২০১৮ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার মোকাবিলা করে চলা ইরানের কাছে এসসিওর সদস্য হওয়া ভূরাজনৈতিক জোটবদ্ধতার দিক থেকে যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ।
প্রায় সাত মাস আগে এসসিওর সভাপতিত্ব পায় ভারত। এর পর থেকে এই সম্মেলনে সদস্যদেশের শীর্ষ নেতাদের দিল্লিতে উপস্থিত করানোর চেষ্টা করতে থাকে। কিন্তু কেন তা হলো না, শীর্ষ সম্মেলনে শেষ পর্যন্ত সবাই ভার্চ্যুয়ালি যোগ দিল কেন, সে রহস্য রয়েই গেল।
ভারতের পরররাষ্ট্রসচিবও এ প্রসঙ্গে নির্দিষ্ট কোনো কারণ না দেখিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, অনেকগুলো বিষয় থাকলেও তা না হওয়া কোনোভাবেই সম্মেলনের গুরুত্বকে খাটো করে না। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী মোদি বারবার বলেছেন, শান্তি, সমৃদ্ধি ও আঞ্চলিক উন্নয়নের প্ল্যাটফর্ম হিসেবে এসসিও নিজেকে তুলে ধরেছে। নতুন নতুন সদস্যের অন্তর্ভুক্তি বুঝিয়ে দিচ্ছে, এই সংগঠনের গুরুত্ব কতখানি।
শীর্ষ সম্মেলনে ভারত, চীন, রাশিয়াসহ সব শীর্ষ নেতাই নিজেদের রাষ্ট্রীয় স্বার্থ বিবেচনায় বক্তব্য দেন। প্রধানমন্ত্রী মোদির ভাষণে যেমন বারবার উঠে আসে সন্ত্রাসবাদ। চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের উপস্থিতিতে মোদি টেনে আনেন সন্ত্রাসের প্রসঙ্গ।
পাকিস্তানের নাম উল্লেখ না করে নরেন্দ্র মোদি বলেন, কিছু দেশ সীমান্তপাড়ে সন্ত্রাসের নিরাপদ ঘাঁটি হয়ে উঠেছে। এসসিওর লক্ষ্য, আঞ্চলিক শান্তি স্থাপনের মধ্য দিয়ে বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও দৃঢ় করা। কিন্তু আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক শান্তি প্রতিষ্ঠার সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে সন্ত্রাসবাদ। এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ঢিলেমি দেওয়া যায় না। সন্ত্রাস মোকাবিলায় দ্বিচারিতা থাকলে সংগঠনের মূল উদ্দেশ্য ব্যর্থ হবে।
চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংও আঞ্চলিক শান্তি স্থাপনের ওপর জোর দেন। চীনের সংবাদ সংস্থা সিনহুয়া জানায়, প্রেসিডেন্ট সি বলেছেন, সবার নিরাপত্তা রক্ষা সংগঠনের লক্ষ্য। অর্থনীতির বিশ্বায়ন, সুরক্ষাবাদের বিরোধিতা, একতরফা নিষেধাজ্ঞা জারি ও রাষ্ট্রীয় স্বার্থের ধারণার প্রসারণের সঠিক লক্ষ্যে চীন দৃঢ়ভাবে এগিয়ে যাবে।
সি বলেছেন, একটা দৃঢ় আঞ্চলিক নিরাপত্তাবলয় তৈরির পাশাপাশি চীন গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সমস্যাগুলোর রাজনৈতিক সমাধানের পক্ষপাতি।
রাশিয়ায় ভাগনার বিদ্রোহের পর এই প্রথম রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনকে কোনো আন্তর্জাতিক মঞ্চে দেখা গেল। এএফপির খবরে বলা হয়, সম্মেলনে পুতিন বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে পশ্চিমা দেশগুলোর জারি করা নিষেধাজ্ঞার মোকাবিলায় রাশিয়া জোরালোভাবে করে যাবে। এ নিয়ে সব ধরনের বাহ্যিক প্রতিরোধ, প্ররোচনা ও নিষেধাজ্ঞা সার্থকভাবে প্রতিহত করা হবে। ভাগনার বিদ্রোহের সময় রাশিয়ার পাশে থাকার জন্য এসসিও সদস্যদের ধন্যবাদ দেন পুতিন।
চীন, রাশিয়া, কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান ও তাজিকিস্তানকে নিয়ে ১৯৯৬ সালে গঠিত হয়েছিল সাংহাই ফাইভ। ২০০১ সালে উজবেকিস্তান যোগ দিলে নাম বদলে হয় এসসিও। রাশিয়ার উদ্যোগে ভারত সদস্য হয় ২০১৫ সালে। আঞ্চলিক ভারসাম্য রাখতে চীন সদস্য করে পাকিস্তানকে। এবার সদস্য হলো ইরান। সামনের বছর বেলারুশ সদস্য হলে ইউরেশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্য খর্ব করতে চীন-রাশিয়া-ইরান অক্ষ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।