রিমান্ড শুনানির পর রাউস অ্যাভিনিউতে সিবিআই বিশেষ আদালতে অরবিন্দ কেজরিওয়াল। ২২ মার্চ
রিমান্ড শুনানির পর রাউস অ্যাভিনিউতে সিবিআই বিশেষ আদালতে অরবিন্দ কেজরিওয়াল। ২২ মার্চ

কেজরিওয়াল গ্রেপ্তার

মোদিবিরোধী ঐক্য কি এবার গড়তে পারবে ভারতের বিরোধী দলগুলো

  • আম আদমি পার্টির পক্ষ থেকে দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে।

  • কেজরিওয়ালকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে বিরোধী দলগুলো।

নির্বাচনের আগে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী ও আম আদমি পার্টির নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে গ্রেপ্তার করায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদির বিরুদ্ধে গণতন্ত্রকে গুঁড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টার নতুন অভিযোগ উঠেছে। দেশটির বিরোধী দলের প্রায় সব শীর্ষ নেতাই এর নিন্দা জানিয়েছেন। কেউ কেউ সতর্ক করে বলেছেন, নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে জনবিপ্লব তৈরি হবে।

ভারতের লোকসভার সাত ধাপের নির্বাচনের মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে ভারতে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ তদন্তের কেন্দ্রীয় সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি) কর্মকর্তারা গত বৃহস্পতিবার রাতে কেজরিওয়ালকে গ্রেপ্তার করেন। আবগারি (মদ) নীতি মামলায় দিল্লিতে এ পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালসহ আম আদমি পার্টির (এএপি) তিন শীর্ষ নেতা গ্রেপ্তার হয়েছেন। অপর দুজন হলেন এএপির এমপি সঞ্জয় সিং এবং দিল্লির সাবেক উপমুখ্যমন্ত্রী মনীশ সিসোদিয়া। এ মামলায় ভারত রাষ্ট্র সমিতির (বিআরএস) নেত্রী এবং তেলেঙ্গানার সাবেক মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাওয়ের মেয়ে কে কবিতাও এখন জেলে আছেন।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার সকালে ভারতের সবচেয়ে বড় বিরোধী দল কংগ্রেস নরেন্দ্র মোদি সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলে। কংগ্রেস জানায়, কংগ্রেস দলকে অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করে দিতে চাইছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সেই কাজ সরকার সুপরিকল্পিতভাবে করছে। কংগ্রেসকে তারা ভাতে মারতে চাইছে। জনগণের কাছ থেকে আদায় করা চাঁদা যাতে ব্যবহৃত না হয়, সেই চেষ্টা করে চলেছে। কংগ্রেসের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হচ্ছে। ব্যাংক থেকে জোর করে টাকাও তুলে নিচ্ছে সরকার।

কেজরিওয়ালকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় ভারতের রাজধানীতে অভূতপূ্‌র্ব সাংবিধানিক সংকট তৈরি হয়েছে। দিল্লিতে এই প্রথম ক্ষমতায় থাকাকালে কোনো মুখ্যমন্ত্রীকে গ্রেপ্তারের ঘটনা ঘটল। আম আদমি পার্টির একজন মুখপাত্র বলেছেন, ‘ভুয়া মামলা’ দিয়ে মোদির এটা ‘নোংরা রাজনীতি’। তিনি বলেন, গ্রেপ্তার হলেও কেজরিওয়াল পদত্যাগ করবেন না। তিনি কারাগারে থেকেই সরকার সামলাবেন।

কেজরিওয়ালের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের এই অভিযোগ আনা হয় দিল্লি সরকারের ২০২১-২২ সালের আবগারি নীতি ঘিরে। অভিযোগ ওঠে, ওই নীতিতে বেশ কিছু মদ ব্যবসায়ীকে সুবিধা দেওয়া হয়েছিল। পরে অবশ্য ওই নীতি বাতিল করা হয়েছিল। তদন্ত সংস্থা ইডির অভিযোগ, এই নীতি করে আম আদমি পার্টির নেতারা ১০০ কোটি টাকা নিয়েছিলেন।

৫৫ বছর বয়সী কেজরিওয়ালকে গ্রেপ্তারের আগে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নয়বার ডেকেছিল ইডি। কিন্তু তিনি হাজির হননি। ইতিমধ্যে আম আদমি পার্টির শীর্ষ সব নেতাকেই কারাগারে নেওয়া হয়েছে। এতে দলটির জন্য বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ তৈরি হচ্ছে। দলটি দিল্লি ও পাঞ্জাব রাজ্যে ক্ষমতায় রয়েছে।

আম আদমি পার্টির পক্ষ থেকে দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। মোদি সরকারের পক্ষ থেকে কোনো রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে।

দিল্লির স্বাস্থ্যমন্ত্রী সৌরভ ভরদ্বাজ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী যা খুশি তা–ই করতে পারেন। এখন পর্যন্ত তিনি দুজন মুখ্যমন্ত্রীকে গ্রেপ্তার করেছেন। তিনি সম্ভবত আরও মুখ্যমন্ত্রীকে গ্রেপ্তার করবেন।’

এর আগে ঝাড়খন্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সরেন পদত্যাগের পরপরই ইডির হাতে গ্রেপ্তার হন। তাঁর বিরুদ্ধেও দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়। সরেন ঝাড়খন্ড মুক্তি মোর্চা দেশটির অন্য বিরোধী দল আপ ও কংগ্রেসের সঙ্গে বিরোধী ইন্ডিয়া জোটের অংশ। এই জোট আগামী নির্বাচনে বিজেপির সঙ্গে টক্কর দেবে।

তবে বেশ কয়েকজন বিশ্লেষক মনে করছেন, বিরোধী দলের নেতাদের গ্রেপ্তারের বিষয়টি মোদি ও তাঁর দল বিজেপির জন্য রাজনৈতিকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। এতে বিরোধী নেতাদের প্রতি ভোটারদের সহানুভূতি তৈরি হওয়ার পাশাপাশি সব বিরোধী দলের মধ্যে ঐক্য মজবুত করতে পারে।

এদিকে ইন্ডিয়া ব্লক থেকে দূরে সরে যাওয়া অনেক দলও কেজরিওয়ালকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে। গ্রেপ্তারের কয়েক মিনিট পরেই রাহুল গান্ধী বলেন, ‘একজন ভীত স্বৈরশাসক একটি মৃত গণতন্ত্র তৈরি করতে চায়।’

পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল কংগ্রেস থেকেও এ ঘটনার নিন্দা জানানো হয়েছে। তৃণমূল নেতা ডেরেক ও ব্রায়েন বলেন, ‘নির্বাচনের কয়েক সপ্তাহ আগে যদি বিরোধী দলের নেতাদের ও মুখ্যমন্ত্রীদের গ্রেপ্তার করা হয়, তবে আমরা কীভাবে স্বচ্ছ নির্বাচন আশা করতে পারি?’ কেজরিওয়ালকে গ্রেপ্তারের নিন্দা জানিয়েছেন তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্টালিন, এনসিপির প্রধান শারদ পাওয়ার, সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরি, এসপির প্রধান অখিলেশ যাদব।