শিখ নেতা গুরপতবন্ত সিং পান্নুন
শিখ নেতা গুরপতবন্ত সিং পান্নুন

পান্নুন হত্যাচেষ্টা নিয়ে দিল্লিকে সতর্ক করলেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত পাঁচ মার্কিন কংগ্রেস সদস্য

ভারতীয় বংশোদ্ভূত পাঁচ মার্কিন কংগ্রেস সদস্য বলেছেন, গুরপতবন্ত সিং পান্নুন হত্যাচেষ্টার ষড়যন্ত্রের তদন্ত ঠিকমতো না করলে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের অবনতি ঘটতে পারে।  ভারতীয় বংশোদ্ভূত ওই পাঁচ মার্কিন প্রত্যেকেই শাসক ডেমোক্রেটিক পার্টির সদস্য। পান্নুন হত্যাচেষ্টার ষড়যন্ত্রের বিভিন্ন দিক নিয়ে মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকের পর গতকাল শুক্রবার তাঁরা এক বিবৃতিতে ওই কথা বলেন।

ওই পাঁচ সদস্য বিবৃতিতে বলেছেন, দুই দেশের সম্পর্ক দিন দিন উন্নত হচ্ছে। কিন্তু এ ঘটনার যথাযথ তদন্ত গুরুত্বের সঙ্গে না করলে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক খুবই খারাপ হয়ে যেতে পারে। তাঁদের দাবি, এমন ধরনের অভিযোগ ভবিষ্যতে যাতে না ওঠে, সে বিষয়ে ভারত সরকারকে আশ্বাস দিতে হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষের ওই পাঁচ নির্বাচিত সদস্য হলেন অ্যামি বেরা, রো খান্না, প্রমীলা জয়পাল, রাজা কৃষ্ণমূর্তি ও শ্রী থানেদার। তাঁরা প্রত্যেকেই কংগ্রেসের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কমিটির সদস্য।

যুক্তরাষ্ট্রের শিখ নাগরিক গুরপতবন্ত সিং পান্নুন, যিনি ‘শিখস ফর জাস্টিস’ সংগঠনের নেতা এবং স্বাধীন খালিস্তান গঠনের দাবিতে আন্দোলন করছেন, তাঁকে হত্যার ষড়যন্ত্র ও সেই অভিযোগে চেক প্রজাতন্ত্র থেকে ভারতীয় নাগরিক নিখিল গুপ্তকে গ্রেপ্তার সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসন ওই পাঁচ কংগ্রেস সদস্যকে সবকিছু জানান। তারপরই তাঁরা ভারতের উদ্দেশে ওই বিবৃতি দিলেন।

ভারতীয় বংশোদ্ভূত হওয়ায় ওই কংগ্রেস সদস্যরা নিজেদের ‘সমোসা গোষ্ঠী’ (সমোসা ককাস) বলে পরিচয় দিয়ে থাকেন। বিবৃতিতে তাঁরা বলেছেন, ‘মার্কিন কংগ্রেসের সদস্য হিসেবে আমাদের নিজেদের মানুষের নিরাপত্তা ও মঙ্গলচিন্তাই গুরুত্বপূর্ণ অগ্রাধিকার। যে অভিযোগ আনা হয়েছে (ভারতের বিরুদ্ধে), তা যথেষ্ট উদ্বেগজনক।’

যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ ভারত উড়িয়ে দেয়নি। অভিযোগ তদন্ত করে দেখতে কমিটিও গঠন করা হয়েছে। বিবৃতিতে পাঁচ কংগ্রেস সদস্য সে জন্য ভারতের উদ্যোগকে স্বাগতও জানিয়েছেন। তবে সেই সঙ্গে বলেছেন, ‘পূর্ণ তদন্ত করা জরুরি। তদন্ত শেষে দোষীর সাজা হওয়াও জরুরি। আরও জরুরি ওই ঘটনায় কোনো সরকারি কর্তা জড়িত থাকলে সেই দায় বর্তানো এবং ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি যে হবে না, তা নিশ্চিত করা।’

ওই পাঁচ কংগ্রেস সদস্য বলেন, দুই দেশের সম্পর্ক দেশ দুটির জনগণের জীবনযাত্রায় অর্থপূর্ণ প্রভাব ফেলেছে। তাঁদের চিন্তা ও অভিযোগ যথাযথভাবে বিবেচিত না হলে এ সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

পান্নুন হত্যা ষড়যন্ত্রে ভারতের জড়িত থাকার অভিযোগ যে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ, যুক্তরাষ্ট্র যে বিষয়ের নিষ্পত্তি দেখতে চায়, ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের ‘ব্রিফিং’ করার মধ্য দিয়ে তা স্পষ্ট। সেই কারণে ওই পাঁচ সদস্যের বিবৃতি ভারতের প্রতি একধরনের ‘হুঁশিয়ারি’ বলে মনে করা হচ্ছে।

পান্নুন হত্যাচেষ্টার অভিযোগে গ্রেপ্তার ভারতীয় নাগরিক নিখিল গুপ্তর পরিবার গতকাল ভারতের সুপ্রিম কোর্টে বিচারিক সহযোগিতা চেয়ে এক ‘হেবিয়াস কর্পাস’ আবেদন করে। বিচারপতি সঞ্জীব খান্না প্রথমে আবেদন গ্রহণে অস্বীকার করলেও পরে তা শুনানির জন্য ৪ জানুয়ারি দিন ধার্য করেছেন।

আবেদনে নিখিলের পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়, গ্রেপ্তার ব্যক্তি আদৌ এসবের সঙ্গে যুক্ত নন। তিনি দিল্লিনিবাসী। আইন মেনে চলা নিরীহ এক ভারতীয় নাগরিক। ব্যবসা করেন। স্ত্রী, দুই ছেলে ও মাকে নিয়ে থাকেন।

আবেদনে বলা হয়েছে, গত ৩০ জুন চেক প্রজাতন্ত্রের রাজধানী প্রাগ বিমানবন্দরে নামার পর তাঁকে কোনো কারণ না দেখিয়েই আটক করা হয়। জবরদস্তি করে একটা কালো গাড়িতে বসানো হয়। তাঁর ফোনে জোর করে কিছু একটা লাগানো হয়। ওই সব ব্যক্তি নিজেদের ‘আমেরিকান এজেন্ট’ বলে পরিচয় দেন এবং তাঁর ছবি তোলেন।

নিখিলের আবেদনে বলা হয়, জেলখানায় তাঁকে অপরাধের স্বীকারোক্তি দিতে জোর খাটানো হয়েছে। বলা হয়, অপরাধের স্বীকারোক্তি দিলেই তাঁকে স্ত্রী ও সন্তানদের সঙ্গে কথা বলতে দেওয়া হবে। অন্যথায় কোনো দিনই পরিবারের কাউকে দেখতে পাবেন না। কিন্তু তা সত্ত্বেও তিনি স্বীকারোক্তি দেননি। তিনি ন্যায়বিচার চান।

নিখিল বলেছেন, তিনি ধর্মপ্রাণ হিন্দু। নিরামিষভোজী। জেল কর্তৃপক্ষকে বারবার তা বলা সত্ত্বেও তাঁকে ১০ থেকে ১১ দিন জোর করে মাংস খাওয়ানো হয়েছে—গরু ও শুয়োরের মাংস। এতে তাঁর ধর্মীয় ও ব্যক্তি–অধিকার হরণ করা হয়েছে। আবেদনে তিনি বলেছেন, একটা সময় তাঁকে নির্জন কারাবাসে রাখা হয়। কারণ, তাঁর নাকি রক্তে সংক্রমণ ব্যাধি হয়েছে। অথচ তাঁকে কোনো স্বাস্থ্য পরীক্ষার রিপোর্ট দেখানো হয়নি।

নিখিল অভিযোগ করেন, বারবার অনুরোধ সত্ত্বেও প্রাগে ভারতীয় দূতাবাস থেকে কোনো সাহায্য তিনি পাননি। তিনি চান, ভারত সরকার তাঁকে আইনগত সহায়তা দিক।