ভারতের নতুন সংসদ ভবনের উদ্বোধন কেন রাষ্ট্রপতিকে দিয়ে করানো হচ্ছে না, কেন প্রধানমন্ত্রীই হয়ে উঠছেন সর্বেসর্বা, সেই প্রশ্ন উঠে গেল। সেই সঙ্গে শুরু হলো রাজনৈতিক জল্পনা, রাষ্ট্রপতিকে ব্রাত্য রাখায় বিরোধীরা কি উদ্বোধন অনুষ্ঠান বর্জন করবে?
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উদ্যোগে নতুন সংসদ ভবনের নির্মাণ শুরু হয়েছিল ২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বর। কোভিডের প্রবল দাপাদাপির সময় ‘সেন্ট্রাল ভিস্তা’র সৌন্দর্যায়নের অন্তর্গত নতুন সংসদ ভবনের শিলান্যাস হয়েছিল। শিলান্যাস করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। সে সময় রাষ্ট্রপতি ছিলেন রামনাথ কোবিন্দ। তাঁকে সেই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। তাঁকে দিয়ে শিলান্যাসও করানো হয়নি। ২০২২ সালের ১১ জুলাই সংসদ ভবনে জাতীয় প্রতীক সিংহের মূর্তি স্থাপনার সময়েও রাষ্ট্রপতি কোবিন্দকে ডাকা হয়নি। দায়িত্বে ছিলেন নরেন্দ্র মোদি।
এবার নতুন ভবনের উদ্বোধনও করবেন নরেন্দ্র মোদি। লোকসভা সচিবালয় জানিয়েছে, ২৮ মে প্রধানমন্ত্রী মোদি নতুন সংসদ ভবনে উদ্বোধন করবেন। ওই দিন হিন্দুত্ববাদের প্রবক্তা বিনায়ক দামোদর সাভারকরের জন্মদিন।
বিতর্কের সূত্রপাত ঘটিয়েছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। গত রোববার তিনি টুইট করে বলেন, ‘রাষ্ট্রপতিকে দিয়ে নতুন সংসদ ভবনের উদ্বোধন করা উচিত। প্রধানমন্ত্রী নন।’
রাহুল ওই দাবি তোলার পর অন্যান্য বিরোধী দলের নেতারাও সরব হন। প্রত্যেকেরই এক কথা, প্রতিবছর ভারতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশন শুরু হয় রাষ্ট্রপতির ভাষণের মধ্য দিয়ে। রাষ্ট্রপতিই দেশের প্রথম নাগরিক। সব দলমতের ঊর্ধ্বে তিনি। তিনিই সাংবিধানিক শীর্ষব্যক্তি। উদ্বোধন তো তাঁরই করা উচিত? অথচ সংসদ ভবন উদ্বোধনে তিনিই ব্রাত্য!
আজ সোমবার কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে একাধিক টুইটে এই প্রশ্ন তুলে ধরেন। এমনকি কংগ্রেস সভাপতি এ কথাও বলেন, ‘মনে হচ্ছে, মোদি সরকার রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে দলিত ও উপজাতিদের ব্যবহার করেছেন স্রেফ ভোটের স্বার্থে। না হলে নতুন সংসদ ভবনের শিলান্যাসের সময় রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দকে দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। এখন উদ্বোধনের দায়িত্বও দেওয়া হচ্ছে না রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুকে। অথচ সাংবিধানিক শীর্ষব্যক্তি রাষ্ট্রপতিই।’
খাড়গে লেখেন, ‘রাষ্ট্রপতিই সরকার, বিরোধী ও প্রতিটি নাগরিকের প্রতিনিধি। তিনিই দেশের প্রথম নাগরিক।’ তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও সাংবিধানিক ঔচিত্যবোধ রক্ষায় সরকার যে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, তার প্রমাণ মিলত যদি রাষ্ট্রপতিকে দিয়ে নতুন সংসদ ভবনের উদ্বোধন করানো হতো।
খাড়গে টুইট শেষ করেছেন এই বলে, ‘সাংবিধানিক ঔচিত্যবোধকে মোদি সরকার বারবার অশ্রদ্ধা করেছে। বিজেপি–আরএসএসের এই সরকার রাষ্ট্রপতির পদকে নিছক প্রতীকে পরিণত করেছে।’
তৃণমূল কংগ্রেস নেতা সুখেন্দু শেখর রায়ের প্রশ্ন ২৮ মে দিনটি নিয়ে। তিনি বলেন, ‘ভারতের সংবিধান দেশবাসীকে গণতন্ত্র উপহার দিয়েছে। এই বছরের ২৬ নভেম্বর সংবিধান ৭৫তম বর্ষে পদার্পণ করবে। নতুন সংসদ ভবন ওই দিন উদ্বোধন হতে পারত। কিন্তু হবে সাভারকরের জন্মদিনের দিন। কী এর প্রাসঙ্গিকতা?’
হায়দরাবাদের এআইএমআইএম নেতা ও লোকসভা সদস্য আসাদউদ্দিন ওয়েইসি বলেন, ‘কেন প্রধানমন্ত্রী? তিনি তো সরকারপ্রধান? আইনসভার নন? জনগণের টাকায় সংসদ ভবন তৈরি হয়েছে। অথচ প্রধানমন্ত্রী এমন ভাব করছেন, যেন তাঁর বন্ধুদের টাকায় এটা তৈরি!’
রাষ্ট্রীয় জনতা দলের নেতা মনোজ ঝায়ের প্রশ্ন, উদ্বোধনের জন্য রাষ্ট্রপতিই কি যোগ্যতম নন? তিনিই তো সংসদের অভিভাবক?
নতুন সংসদ ভবনের শিলান্যাস অনুষ্ঠান বর্জন করেছিল অধিকাংশ বিরোধী দল। সে সময় কৃষক আন্দোলন ছিল চরমে। তাঁদের উপেক্ষা করে ধুমধামে শিলান্যাস পর্ব করার প্রতিবাদ জানিয়েছিল বিরোধীরা। এবার রাষ্ট্রপতিকে উপেক্ষা করায় উদ্বোধন অনুষ্ঠান বর্জনের চিন্তাভাবনা শুরু হয়ে গিয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের রায় উপেক্ষা করে দিল্লি সরকারের ক্ষমতা করায়ত্ব করতে কেন্দ্রীয় সরকারের নতুন অর্ডিন্যান্স বর্জনের এই ভাবনা উসকে দিয়েছে।