সুড়ঙ্গের ভেতরে একাধিক অ্যাম্বুলেন্সও নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আটকে পড়া শ্রমিকদের বের করে আনতে প্রস্তুত উদ্ধারকর্মীরা। উত্তরকাশী, উত্তরাখন্ড, ভারত, ২৮ নভেম্বর
সুড়ঙ্গের ভেতরে একাধিক অ্যাম্বুলেন্সও নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আটকে পড়া শ্রমিকদের বের করে আনতে প্রস্তুত উদ্ধারকর্মীরা। উত্তরকাশী, উত্তরাখন্ড, ভারত, ২৮ নভেম্বর

সুড়ঙ্গ খোঁড়া শেষ, যেকোনো মুহূর্তে উদ্ধার করা হবে শ্রমিকদের

দুই দিন আগেও যা নিয়ে ছিল ঘোর সংশয়, আচমকাই তা প্রবল আশার জন্ম দিয়েছে। ভারতের উত্তরাখন্ডের উত্তরকাশীতে একাংশ ধসে অবরুদ্ধ সুড়ঙ্গে আটকে পড়া ৪১ শ্রমিককে যেকোনো মুহূর্তে বাইরে বের করে আনা শুরু হবে।

রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পুস্কর সিং ধামি নিজেই আজ মঙ্গলবার দুপুরে এই সুখবর জানিয়ে বলেছেন, ‘সুড়ঙ্গ খুঁড়ে পাইপ বসানোর কাজ শেষ। ঈশ্বরের কৃপা ও কোটি কোটি ভারতবাসীর প্রার্থনা ও উদ্ধারকাজে নিযুক্ত কর্মীদের অক্লান্ত পরিশ্রমে পাইপ বসানোর কাজ শেষ হয়েছে। শিগগিরই আটকে পড়া শ্রমিকদের বের করে আনা হবে।’

মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘোষণার পর পাহাড়ের ওপর থেকে উল্লম্বভাবে মাটি খোঁড়ার কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। আটকে পড়া ৪১ শ্রমিকের জন্য ৪১টি অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সুড়ঙ্গের ভেতরে পর্যন্ত একাধিক অ্যাম্বুলেন্স পাঠানো হয়েছে। চিকিৎসকদের একটি দলও প্রস্তুত আছেন।

উত্তরকাশী জেলা হাসপাতালে একটি বিশেষ ওয়ার্ড খালি করে সেখানে পাতা হয়েছে ৪১টি বিছানা। সুড়ঙ্গ থেকে উদ্ধারের পর শ্রমিকদের সেখানেই নিয়ে যাওয়া হবে। শুরু হবে তাঁদের চিকিৎসা ও পরিচর্যা। হাসপাতালের কাছেই তৈরি হচ্ছে একটি হেলিপ্যাড, যাতে প্রয়োজনে কাউকে চট করে হৃষিকেশের অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সেস (এইমস) হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া যায়।

১২ নভেম্বর দেশের বিভিন্ন প্রদেশের ৪১ জন শ্রমিক ধসের কারণে ওই সুড়ঙ্গে আটকা পড়েন। সবকিছু ঠিকভাবে এগোলে ১৭ দিনের মাথায় তাঁরা মুক্ত হতে পারবেন বলে কর্তৃপক্ষের আশা।

যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি বিশেষ খননযন্ত্র ভেঙে যাওয়ার পর গতকাল সোমবার হাতের সাহায্যে সুড়ঙ্গ কেটে এগোনোর পরিকল্পনা করা হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী দক্ষ কর্মীদের দিয়ে শুরু করা হয় ‘র‌্যাট হোল মাইনিং’। ইঁদুর যেভাবে গর্ত খোঁড়ে ঠিক সেভাবে গাঁইতি, শাবল দিয়ে সুড়ঙ্গের বাধা সরিয়ে সমান্তরালভাবে মাটি কেটে এগোনো শুরু হয় গতকাল থেকে। তাতেই আসে অভাবিত সাফল্য।

মঙ্গলবার দুপুরে আটকে পড়া শ্রমিকদের কাছে পৌঁছে যান জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর (এনডিআরএফ) সদস্যরা। পাইপ পাতার কাজও শেষ হয়েছে। সেটা নিশ্চিত হওয়ার পরই মুখ্যমন্ত্রী ধামি সুখবরটি এক্স (সাবেক টুইটার) মারফত জানিয়ে দেন। তার পর থেকে শুরু হয়েছে উদ্ধারের প্রতীক্ষা।

আড়াই ফুট ব্যাসার্ধের পাইপের মধ্য দিয়ে ৬০ মিটার দূরত্ব হামাগুড়ি দিয়ে পেরোনো কঠিন। তা ছাড়া, পাইপের কিছু কিছু জায়গা ঝালাইয়ের জন্য ধারালো। এত দিন ধরে অবরুদ্ধ শ্রমিকদের পক্ষে ওই কষ্টসাধ্য পথ ধরে বের হয়ে আসা কতটা সম্ভব, উদ্ধারকারী দল তা খতিয়ে দেখছে। শ্রমিকদের সঙ্গেও কথা বলা হচ্ছে। বিকল্প উপায় হলো হুইল লাগানো স্ট্রেচারে শুইয়ে দড়ি ধরে তা টেনে বের করা। সে ক্ষেত্রে কী ধরনের সাবধানতা শ্রমিকদের অবলম্বন করতে হবে, তা উদ্ধারকারী দলের সদস্যরা তাঁদের বুঝিয়ে দেবেন।

সুড়ঙ্গের কাছে আটকে পড়া শ্রমিকদের পরিবারের সদস্যদেরও আনা হয়েছে। কয়েক দিন ধরে দিনে দুবার করে আটকে পড়া শ্রমিকেরা আত্মীয়ের সঙ্গে কথাও বলছেন। সবাই জানিয়েছেন, শ্রমিকেরা সুস্থ আছেন। পরিবারের লোকজনদেরও কর্তৃপক্ষ বিভিন্নভাবে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়েছে।