কলকাতার আর জি কর হাসপাতালে ৯ আগস্ট নারী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনার পর থেকে কার্যত মুখে কুলুপ এঁটে ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর ভাইয়ের ছেলে সংসদ সদস্য অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে গতকাল বুধবার মুখ্যমন্ত্রী মৌনতা ভেঙে ঘোষণা দেন, এবার ধর্ষণের সাজা ফাঁসির বিধান রেখে নতুন আইন আনছে রাজ্য সরকার।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, আগামী সপ্তাহেই রাজ্য বিধানসভার বিশেষ অধিবেশন ডেকে এ–সংক্রান্ত আইন পাস করা হবে। আইন অনুযায়ী, ১০ দিনের মধ্যে হবে অপরাধের বিচার।
মেয়ো রোডের সভা শেষে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সচিবালয় নবান্নে মন্ত্রিপরিষদের এক সভায় ধর্ষণের সাজা ফাঁসির বিধান রেখে বিল আনার বিষয়টি পাস করিয়ে নেন। এ লক্ষ্যে রাজ্যের আইনমন্ত্রী মলয় ঘটক, মুখ্য সচিব বিপি গোপালিকা ও স্বরাষ্ট্রসচিব নন্দিনী চক্রবর্তীকে নিয়ে একটি কমিটি গড়ে আইনের খসড়া তৈরির নির্দেশ দেন তিনি।
মমতা বলেছেন, বিধানসভায় এ বিল পাস করে সেটি রাজ্যপালের কাছে পাঠাবেন তাঁরা। রাজ্যপাল ওই বিলে সম্মতি দিয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাবেন। কিন্তু রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস যদি বিলে সম্মতি না দেন, তবে নারীরা রাজ্যপাল ভবনের সামনে অবস্থান ধর্মঘটে বসবেন।
এ বিল পাসের লক্ষ্যে আগামী সোমবারই ডাকা হতে পারে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিধানসভার বিশেষ অধিবেশন। আর মঙ্গলবার পেশ হতে পারে খসড়া বিলটি।
যদিও রাজ্যের বিরোধীদলীয় নেতা ও বিজেপি বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন, এ আইন তৈরি করার জন্য বিশেষ অধিবেশন আয়োজন করার এখতিয়ার মমতার নেই। তিনি আরও বলেন, ধর্ষণের ফাঁসির সাজা নিয়ে আইন তো ভারতে বলবৎ আছে। মমতা কীভাবে এ–সংক্রান্ত আরেকটি বিল আইনে পরিণত করবেন?
তবে মমতা বলেছেন, বিধানসভায় এ বিল পাস করে সেটি রাজ্যপালের কাছে পাঠাবেন তাঁরা। রাজ্যপাল ওই বিলে সম্মতি দিয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাবেন। কিন্তু রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস যদি বিলে সম্মতি না দেন, তবে নারীরা রাজ্যপাল ভবনের সামনে অবস্থান ধর্মঘটে বসবেন। যত দিন তিনি ওই বিলে সম্মতি না দেন, তত দিন ধর্মঘট চলবে।
এর আগে ধর্ষকের ফাঁসির সাজার দাবিতে একটি বিল আনার বিষয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে আবেদন করেছিলেন মমতা। তাই গতকাল মমতার ভাইপো অভিষেকও হুংকার ছেড়েছেন, এ বিল নিয়ে তাঁরা দিল্লিতে আন্দোলন করবেন। তিনি ধর্ষণের শাস্তি ফাঁসি দাবি করে বলেন, ‘ওরা দাবি তুলেছে ‘‘দাবি এক, দফা এক, মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ।” আর আমরা আজ তুলছি, “দাবি এক, দফা এক, পাস হোক ধর্ষণবিরোধী আইন”।’
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, আগামী সপ্তাহেই রাজ্য বিধানসভার বিশেষ অধিবেশন ডেকে এ–সংক্রান্ত আইন পাস করা হবে। আইন অনুযায়ী, ১০ দিনের মধ্যে হবে অপরাধের বিচার।
চিকিৎসক ধর্ষণ–হত্যায় প্রতিবাদ অব্যাহত
আর জি কর হাসপাতালে চিকিৎসককে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় আজ বৃহস্পতিবারও পুরো ভারত প্রতিবাদের আগুনে জ্বলছে।
শুধু কি রাজনৈতিক দল, পশ্চিমবঙ্গের চিকিৎসক সমাজ, সাংস্কৃতিক সংগঠন, ক্রীড়াবিদ ও ক্রীড়া সংগঠন, চলচ্চিত্র তারকা, আইনজীবীসহ সমাজের সর্বস্তরের মানুষ এই প্রতিবাদে শামিল হয়েছেন। প্রতিদিনই চলছে প্রতিবাদ।
এদিকে ওই হত্যকাণ্ডকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ভূমিকা নিয়ে রাজ্যের তৃণমূল বাদে সব বিরোধী দল সোচ্চার। মুখ্যমন্ত্রী মমতা হত্যাকাণ্ডটিকে অন্য রূপ দিতে নানা ছলের আশ্রয় নিয়েছেন বলে অভিযোগ অনেকের। ইতিমধ্যে ওই ঘটনার তদন্তে নিয়োজিত সিবিআইয়ের বিরুদ্ধে এক হাত নিয়েছেন মমতা ও সংসদ সদস্য অভিষেক।
আর ওই ঘটনাকে হাতিয়ার করে বিজেপি মাঠে নেমে পড়েছে। তাদেরই অনুপ্রেরণায় ‘পশ্চিমবঙ্গ ছাত্রসমাজ’ নামে নতুন একটি সংগঠনের ব্যানারে ‘নবান্ন অভিযান’–এর ডাক দেওয়া হয় গত মঙ্গলবার। এ অভিযান নিয়ে রাজ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের।
এ সংঘর্ষের পরিপ্রেক্ষিতে বিজেপি গতকাল বুধবার রাজ্যে ১২ ঘণ্টার বন্ধের ডাক দেয়। বন্ধ্ ঠেকাতে গতকাল তৃণমূলের একদল কর্মী–সমর্থক মাঠে নামেন। তাঁদের সঙ্গেও বিজেপির বন্ধ্ সমর্থনকারীদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয় রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে। হয়েছে বোমাবাজিও। পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন বিজেপির দুই শতাধিক কর্মী–সমর্থক। গতকালই আবার ছিল কংগ্রেস ও তৃণমূল কংগ্রেসের ছাত্রসংগঠন টিএমসিপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।
অন্যদিকে গতকাল ভারতের চিকিৎসকদের সর্বোচ্চ সংগঠন আইএমএ বা ইন্ডিয়ান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন এক নোটিশে আর জি কর হাসপাতালের সাবেক অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের সদস্যপদ বাতিল করার কথা জানিয়েছে।