ভারতের উত্তর প্রদেশে লোকসভা নির্বাচনে চমক দেখাতে যাচ্ছে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইন্ডিয়া জোট। রাজ্যের ৮০টি লোকসভা আসনের মধ্যে এখন পর্যন্ত ৪৫টিতে এগিয়ে আছে তারা। গত নির্বাচনে সেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন নিজেদের দখলে রেখেছিল ক্ষমতাসীন বিজেপি। এবার রাজ্যটিতে দলটির বিরোধীপক্ষের এগিয়ে থাকার পেছনে কয়েকটি কারণকে মুখ্য হিসেবে দেখা হচ্ছে।
বিজেপি–শাসিত উত্তর প্রদেশে প্রধান বিরোধী দল সমাজবাদী পার্টি (এসপি)। এবারের লোকসভা নির্বাচনে ইন্ডিয়া জোটের হয়ে ৩৭টি আসনে এগিয়ে রয়েছে দলটি। এই অগ্রগতির পেছনে তাদের একটি কৌশল কাজে দিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। সেটি হলো, এবার প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে যাদবদের চেয়ে অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণি (ওবিসি) বাইরের প্রার্থীদের বেশি গুরুত্ব দিয়েছে সমাজবাদী পার্টি।
এবার পাঁচজন যাদব প্রার্থীকে মনোনয়ন দিয়েছে সমাজবাদী পার্টি। তাঁরা সবাই দলটির প্রধান অখিলেশ যাদবের পরিবারের সদস্য। যাদব নয়, এমন ওবিসি সম্প্রদায়ের প্রার্থীরা মনোনয়ন পেয়েছেন ২৭ আসনে। উচ্চ বর্ণের প্রার্থীদের দেওয়া হয়েছে ১১টি আসন। দলটি থেকে চারটি আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন মুসলমান প্রার্থীরা। এ ছাড়া সংরক্ষিত আসনে ১৫ জন দলিত প্রার্থীকে মনোনয়ন দিয়েছে দলটি।
২০১৯ সালে শেষ লোকসভা নির্বাচনে বিএসপি ও আরএলডির সঙ্গে জোট করেছিল সমাজবাদী পার্টি। সেবার ৮০টি আসনের মধ্যে ৩৭টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল দলটি। ওই নির্বাচনে ১০ আসনে যাদব প্রার্থীদের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল। নির্বাচনে মাত্র পাঁচটি আসনে জয় পেয়েছিল সমাজবাদী পার্টি। বিএসপি পেয়েছিল ১০টি আসন। আর বিজেপি ৬২ আসন নিজেদের দখলে রেখেছিল।
উত্তর প্রদেশে সমাজবাদী পার্টির এই এগিয়ে থাকা নিয়ে দলটির জ্যেষ্ঠ এক নেতা বলেন, ‘যাদব ও মুসলমানদের সমর্থনের বিষয়ে নিশ্চিত ছিল আমাদের দল। তবে আমরা এই দুই সম্প্রদায়ের বাইরে যাদব নয়, এমন সম্প্রদায় ও দলিতদের কাছে পৌঁছাতে চেয়েছিলাম। এখন মনে হচ্ছে, তা কাজে দিয়েছে।’ এ ছাড়া কিছু এবারের নির্বাচনে আসনে প্রার্থীও পরিবর্তন করেছে সমাজবাদী পার্টি।
অপর দিকে এবার বিজেপি উত্তর প্রদেশে ৭৫টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে। রাজ্যের দলটির নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটের তিন মিত্র পেয়েছে বাকি পাঁচটি আসন। ৭৫ আসনের মধ্যে উচ্চ বর্ণের প্রার্থীদের ৩৪টি আসন দিয়েছে বিজেপি। ২৫টি আসন দিয়েছে অনগ্রসর সম্প্রদায়ের প্রার্থীদের। তাঁদের মধ্যে একজন যাদব রয়েছেন। বাকি ১৬টি সংরক্ষিত আসন।
এবার নির্বাচন ঘিরে উত্তর প্রদেশে এনডিএ ও ইন্ডিয়া জোটের প্রচার–প্রচারণায়ও বড় তফাৎ ছিল। নির্বাচনের আগে প্রচারের জন্য বড় বড় সভা–সমাবেশ করেছে বিজেপি। এসব আয়োজনে অংশ নিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। তবে ছোট শহর বা গ্রামের দিকে তাঁদের নজর ছিল কম।
অপর দিকে সমাজবাদী পার্টি ও কংগ্রেস তৃণমূলের মানুষের কাছে পৌঁছানোর বিষয়ে বেশি জোর দিয়েছে। যেমন কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াঙ্কা গান্ধী রায়বেরিলি ও আমেথি আসনে ব্যাপক প্রচারণা চালিয়েছেন। তবে বড় কোনো সমাবেশ করেননি। এর বিপরীতে প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ২০টির বেশি জনসচেতনতামূলক সভা করেছেন তিনি।
ভারতে বর্তমানে তৃতীয় বৃহত্তম রাজনৈতিক দল সমাজবাদী পার্টি। এবারের নির্বাচনে উত্তর প্রদেশের পশ্চিম, মধ্য ও পূর্ব—মোটামুটি সব অঞ্চলেই জয়ের পথে রয়েছে দলটি। বুন্দেলখন্দ অঞ্চলেও কয়েকটি আসনে জয় পেয়ে চমক দেখিয়েছে তারা। এই আসনগুলো ২০১৪ ও ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির দখলে ছিল।