প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ধর্মের নামে ভোট চাওয়ায় নির্বাচন কমিশন নোটিশ পাঠিয়েছে বিজেপি সভাপতি জে পি নাড্ডাকে। আজ শুক্রবার দ্বিতীয় দফার ভোট চলাকালে জানা যায়, সেই একই অভিযোগে মামলা করা হয়েছে বেঙ্গালুরু দক্ষিণের বিজেপি দলীয় সংসদ সদস্য ও প্রার্থী তেজস্বী সূর্যর বিরুদ্ধে। কর্ণাটকের মুখ্য নির্বাচন আধিকারিক আজ বিকেলে ‘এক্স’ হ্যান্ডেলে এই খবর দিয়ে জানান, গতকাল বৃহস্পতিবারে ওই মামলা করা হয়েছে। কারণ, লোকসভার সংসদ সদস্য ও প্রার্থী তেজস্বী সূর্য ধর্মের ভিত্তিতে ভোট চেয়ে এক ভিডিও পোস্ট করেছিলেন।
আজ লোকসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় দফায় ৮৮ আসনে ভোট হয়েছে। হওয়ার কথা ছিল ৮৯ আসনে। কিন্তু মধ্যপ্রদেশের বেতুল কেন্দ্রের বিএসপি প্রার্থীর মৃত্যু হওয়ায় সেখানে ভোট স্থগিত রাখা হয়। তৃতীয় দফায় সেখানে ভোট নেওয়া হবে।
প্রথম দফায় ভোটের হার বেশি ছিল না। সাকুল্য ভোট পড়েছিল ৬৩ শতাংশ। দ্বিতীয় দফায় যাতে বেশি মানুষ ভোট দিতে আসেন, সে জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি পর্যন্ত আবেদন জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে সক্রিয় ভূমিকা নেয় নির্বাচন কমিশন। বিকেল ৫টা পর্যন্ত ভোটের হার ৬০ শতাংশের মতো। অবশ্য সব রাজ্যে তা সমান নয়।
মহারাষ্ট্র, বিহার, মধ্যপ্রদেশ ও উত্তর প্রদেশে দ্বিতীয় দফায়ও আশানুরূপ ভোট পড়েনি। এই চার বিজেপিশাসিত রাজ্যে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ভোট পড়েছে ৫২ থেকে ৫৪ শতাংশ। কর্ণাটক ও কেরালায় ভোট পড়েছে ৬৪ শতাংশের মতো। যদিও মরুরাজ্য রাজস্থানে ওই সময় পর্যন্ত ভোটের হার ৬০ শতাংশেরও কম। প্রায় ৭২ শতাংশ ভোট পড়েছে পশ্চিমবঙ্গে, আসামে ৭১ শতাংশের কিছুটা কম। সবচেয়ে বেশি ভোট পড়েছে মণিপুর ও ত্রিপুরায়, ৭৬ শতাংশ। ছত্তিশগড়ে ভোট পড়েছে ৭২ শতাংশ। জম্মু-কাশ্মীরের জম্মু কেন্দ্রে বেলা ৩টা পর্যন্ত ভোটের হার ৬৭ শতাংশের বেশি।
আজ কেরালার ২০ আসনেই ভোট হয়। এই রাজ্য থেকেই লড়ছেন কংগ্রেসের রাহুল গান্ধী, শশী থারুর, কে সি বেনুগোপাল। বিজেপি আজ পর্যন্ত এই রাজ্যে একটিও আসন জেতেনি। এবার তারা দুজন হেভিওয়েট প্রার্থী দিয়েছে। দুই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রাজীব চন্দ্রশেখর ও ভি মুরলীধরন। রাহুলের বিপক্ষে তারা দাঁড় করিয়েছে রাজ্য সভাপতি কে সুরেন্দ্রনকে।
কেরালায় যারাই জিতুক, তাতে ‘ইন্ডিয়া’ জোটের পাল্লা–ই ভারী হবে। এই রাজ্যের অন্যতম আকর্ষণ বিজেপি একটি আসনও জিততে পারে কি না। একই রকম আকর্ষণ কর্ণাটকে। গতবারের ভোটে এই রাজ্যের ২৮টি আসনের মধ্যে বিজেপি ২৫টি জিতেছিল। আজ ওই রাজ্যে ভোট হলো ১৪ আসনে। দেখার এটাই যে রাজ্যে ক্ষমতাসীন কংগ্রেস কয়টা আসন পায় এবং বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়ে জেডিএস কোথায় দাঁড়ায়।
রাজস্থানে প্রথম দফায় ভোট হয়েছিল ১২ আসনে। আজ ভোট হয়েছে বাকি ১৩ আসনে। ২০১৪ ও ২০১৯ দুবারই বিজেপি ২৫ আসনেই বিপুল ভোটে জিতেছিল। এবার কংগ্রেস অন্তত ৯টি আসনে বিজেপির সঙ্গে ভালোই লড়াই করবে বলে ধারণা। এসব আসনের মধ্যে রয়েছে লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লার কোটা, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গজেন্দ্র সিং শেখাওয়াতের যোধপুর। বারমের, দউসা, সিকার, ঝুনঝুনু, নাগৌর ও চুরুতেও বিজেপি এবার ওয়াক ওভার পাবে না বলে মনে করা হচ্ছে। এই রাজ্যের সাবেক কংগ্রেস মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলটের ছেলে বৈভব এবার কংগ্রেসের প্রার্থী।
উত্তর প্রদেশ ও মহারাষ্ট্র রাজ্যে আজ ৮টি করে আসনে ভোট হয়েছে। আগেরবারের মতো এবারও ভোটের হার ভালো নয়। বিকেল ৫টা পর্যন্ত মহারাষ্ট্রে ভোট পড়েছে সাড়ে ৫৩ শতাংশ, উত্তর প্রদেশে সাড়ে ৫২। এই দুই রাজ্যের সঙ্গে বিহারে বিজেপিকে আগেরবারের মতো সঙ্গ না দিলে চার শ পার স্লোগান অধরা থেকে যেতে পারে।
ভোটের মধ্যে ইভিএম মামলার রায় দিলেন সুপ্রিম কোর্ট। আজ সেই রায় বিরোধীদের হতাশ করল। কারণ, সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দেন, নিছক সন্দেহের বশে একটা ব্যবস্থাকে ওলটপালট করা উচিত নয়। ইভিএমে দেওয়া ভোটের সঙ্গে ভিভিপ্যাটের স্লিপ ১০০ শতাংশ মিলিয়ে দেখার আরজিও সর্বোচ্চ আদালত খারিজ করে দিয়েছেন। বর্তমানে কেন্দ্রপিছু মাত্র ৫টি ভিভিপ্যাট মেশিনে পড়া ভোটার স্লিপ ইভিএমের সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হয়।
বিচারপতি সঞ্জীব খান্না ও বিচারপতি দীপংকর দত্ত এই মামলার শুনানির সময়েই জানিয়েছিলেন, ইভিএম বাতিল করে ব্যালটে ফেরা সম্ভব নয়। ব্যালটের যুগে কী হতো, তা সবার জানা।
আবেদনকারীদের যুক্তি ছিল, ইউরোপের দেশগুলো ইভিএম ছেড়ে পুরোনো ব্যালট প্রথায় ফিরে যাচ্ছে। ভারতেরও তাই করা উচিত।
বিচারপতিরা উত্তরে বলেছিলেন, সব সময় বিদেশের উদাহরণ খাটে না। এই রায়ের পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, বিরোধীরা এত দিন ধরে ইভিএম নিয়ে কান্নাকাটি করত। এবার তাদের ক্ষমা চাওয়া উচিত।