উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ বলেছেন, রাজ্যে এখন থেকে কোনো মাফিয়া বা অপরাধী আর মুঠোফোনে শিল্পপতিদের হুমকি দিতে পারবেন না। উত্তর প্রদেশ একসময় দাঙ্গার জন্য ‘কুখ্যাত’ ছিল। রাজ্যের অনেক জেলার নাম শুনলেই আগে মানুষ ভয় পেত। এখন আর কারও ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। মঙ্গলবার লক্ষ্ণৌ ও হরদোই জেলায় টেক্সটাইল পার্কের অনুচুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। তিনি অবশ্য আতিক আহমেদ ও তাঁর ভাই আশরাফ আহমেদ হত্যা প্রসঙ্গ উল্লেখ করেননি।
গত শনিবার উত্তর প্রদেশের প্রয়াগরাজে (পুরোনো নাম এলাহাবাদে) পুলিশের সামনে প্রকাশ্যে আততায়ীর গুলিতে রাজ্যের সাবেক এমপি আতিক আহমেদ এবং তাঁর ভাই আশরাফ আহমেদ নিহত হন। এ হত্যাকাণ্ডের পর থেকে রাজ্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সমালোচনা চলছে। এর মধ্যে এ মন্তব্য করলেন মুখ্যমন্ত্রী।
তাঁর আমলে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আমূল পাল্টে গেছে উল্লেখ করে যোগী আদিত্যনাথ বলেন, ‘আগে উত্তর প্রদেশে দাঙ্গা ছিল নিত্যনৈমিত্যিক ব্যাপার। এখন পুরোপুরি বন্ধ।’ তাঁর পূর্বসূরি সমাজবাদী পার্টির অখিলেশ যাদবের সময়ের সমালোচনা করে আদিত্যনাথ বলেন, ‘২০১২ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে রাজ্যে ৭০০টি দাঙ্গা হয়েছিল। ২০১৭ সালের পরে একটা দাঙ্গা কোথাও হয়নি। এক জায়গাতেও কারফিউ জারি করা হয়নি। উত্তর প্রদেশ তাই বিনিয়োগের সেরা জায়গা।’
আতিক আহমেদ ও আশরাফের বিরুদ্ধে ছিল বহু অভিযোগ। খুন, অপহরণ, সম্পত্তি দখল ও রাজনীতির সাহচর্যে অপরাধের সাম্রাজ্য গড়ে তোলার অভিযোগে অনেক দিন ধরে তাঁরা বন্দী ছিলেন। উমেশ পাল হত্যায় তাঁরা যুক্ত বলে পুলিশের দাবি। আতিকের এক ছেলে দিন কয়েক আগে পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন।
গত শনিবার পুলিশের হেফাজতে হাতকড়া পরা অবস্থায় আতিক ও আশরাফকে গুলি করে হত্যা করে অস্ত্রধারী। এভাবে নিহত হতে পারেন বলে শঙ্কা আতিক আগেই করেছিলেন। তাই তিনি প্রধান বিচারপতি আর মুখ্যমন্ত্রী বরাবর একটি চিঠিও লিখে গিয়েছেন বলে দাবি করেছেন তাঁর আইনজীবী। এখন সবার আগ্রহ আর নজর ওই চিঠির দিকে।
আতিক তাঁর আইনজীবীকে বলেছিলেন, অস্বাভাবিক মৃত্যু হলে সেই চিঠি যেন তাঁদের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। মুখবন্ধ খামে লেখা সেই চিঠি তাঁদের ঠিকানায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেছেন আতিকদের আইনজীবী বিজয় মিশ্র। বিজয়ের দাবি, আতিক ওই চিঠি তাঁর হাতে দেননি। কী লিখেছেন তা–ও বলেননি।
আইনজীবী বিজয় মিশ্রর ভাষ্য, তাঁকে বলা হয়েছিল, চিঠিটি তৃতীয় কোনো ব্যক্তির কাছে সুরক্ষিত আছে। সেই ব্যক্তিকে বলা আছে, তিনি খুন হলে তা যেন ওই দুজনের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তিনি মঙ্গলবার পিটিআইকে বলেছেন, চিঠি দুটি গন্তব্যে পাঠানো হয়েছে। যদিও প্রাপ্তিস্বীকারের কোনো খবর এ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।
মৃত্যুর আগে আতিকের লেখা সেই চিঠি নিয়ে রহস্য ঘনীভূত হওয়ার মধ্যে বিজয় মিশ্রর আরও দাবি, আশরাফকে নাকি এক পুলিশ কর্মকর্তা দিন কয়েক আগে শাসিয়েও ছিলেন। বলেছিলেন, এ যাত্রায় বেঁচে গেলেও ১৫ দিনের মধ্যে খুন হতে হবে। কিন্তু পুলিশ কর্মকর্তার নাম আশরাফ তাঁকে বলেননি বলেই দাবি বিজয়ের।
আতিক ও আশরাফ হত্যাকাণ্ডসহ উত্তর প্রদেশে পুলিশের ‘এনকাউন্টারে’ নিহত হওয়ার ঘটনা তদন্তের ভার সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত কোনো বিচারপতিকে দেওয়ার একটি আবেদন সুপ্রিম কোর্ট মঙ্গলবার গ্রহণ করেছেন।
ইতিমধ্যে রাজ্য সরকার এ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। একটি তদন্ত বিচার বিভাগীয়, অন্যটি পুলিশ বিভাগীয়। পুলিশ বিভাগীয় তদন্ত তদারকিতে তৃতীয় এক কমিটিও গঠন করা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টে আবেদনকারীরা বলেছেন, রাজ্য পুলিশের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৭ সাল থেকে পুলিশের ‘এনকাউন্টারে’ ১৮৩ জন অপরাধীর মৃত্যু হয়েছে। রাষ্ট্রের হাতে এই ‘পরিকল্পিত খুনের’ প্রকৃত রহস্য উন্মোচন হওয়া প্রয়োজন।