মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

বাংলাদেশ নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে লেখার ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক করলেন মমতা

বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির নেতারা এমন অনেক কিছু সামাজিক মাধ্যমে লিখছেন, যা লেখা উচিত নয় বলে জানিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

আজ সোমবার বিকেলে সাংবাদিকদের সঙ্গে কয়েক মিনিটের আলাপে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের ঘটনায় সবাই উদ্বিগ্ন। কিন্তু সেটা নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে এমন কিছু বলবেন না বা লিখবেন না, যা বাংলাদেশ বা ভারতের জন্য সমস্যা হতে পারে। কারণ, বিজেপির লোকেরা এমন কিছু কথা সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, যা করা উচিত নয় বলে মনে করি।’

একই সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের দলের নেতা-কর্মীদেরও বাংলাদেশ নিয়ে কিছু লেখার বিষয়ে সাবধান করে দেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের নেতাদেরও বলব, কেউ কিছু লিখতে যাবেন না। আপনাদেরও (সাংবাদিকদের) বলব। সমাজের প্রত্যেক মানুষকে বলব। প্রতিবেশীর কিছু হলে পাশের রাজ্যে তার প্রভাব পড়ে। সে ক্ষেত্রে শান্ত থেকে পরিস্থিতি বিবেচনা করতে হবে।’

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতাদের একটা দায়িত্ব রয়েছে এবং তাঁদেরও এমন কিছু লেখা উচিত নয়, যা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জন্য সমস্যার হয়ে উঠতে পারে।

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বিষয়টা দেশের ওপর ছেড়ে দিন। দেশে সরকার আছে। কোনো রকম প্ররোচনামূলক বা হিংসাত্মক মন্তব্য করবেন না।

সাধারণ মানুষের কাছে মমতার আবেদন, তাঁরা যেন কোনো অবস্থাতেই সাম্প্রদায়িক কোনো আচরণ না করেন এবং আইন নিজের হাতে না নেন।

তৃণমূল নেত্রী বলেন, ‘আমাদের অনেকে ওখানে রয়েছেন। ভারত সরকার ও বাংলাদেশ সরকার অবশ্যই তাঁদের দেখে রাখবে। আমাদের (রাজ্য সরকারকে) ভারত সরকার যা বলবে, আমরা সেইভাবে কাজ করব।’

তাৎপর্যপূর্ণভাবে সপ্তাহ দু-এক আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, বাংলাদেশে বড় কোনো সমস্যা হলে এবং সেখানকার মানুষ পশ্চিমবঙ্গে এলে তাঁদের এখানে অবশ্যই আশ্রয় দেওয়া হবে। এই প্রসঙ্গে জাতিসংঘের একটি প্রস্তাবের উল্লেখ তিনি করেছিলেন।

বিষয়টি নিয়ে প্রবল বিতর্ক হয়। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্য নিয়ে তাঁদের আপত্তির কথা ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে জানান। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এই আপত্তির কথা স্বীকার করে বলেন, ভারতের পররাষ্ট্রবিষয়ক আচরণ কী হবে, এ প্রসঙ্গে কথাবার্তা বলার অধিকার একমাত্র ভারত সরকারের রয়েছে, রাজ্যের নেই।

রাজ্য সরকারের গোয়েন্দা আধিকারিকদের কয়েকজন আজ সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘সোমবারের ঘটনা দেখে আমাদের মনে হচ্ছে, মুখ্যমন্ত্রীকে আগেই বাংলাদেশের অবস্থা সম্পর্কে জানানো হয়েছিল। তিনি হয়তো আগেই বুঝতে পেরেছিলেন, সোমবার যে ঘটনা বাংলাদেশে ঘটল, তা ঘটতে চলেছে। অনেক সময় মুখ্যমন্ত্রী সব কথা চেপে রাখতে পারেন না এবং প্রকাশ্যে বলে ফেলেন। সেটাই হয়তো তিনি জুলাইয়ের সভায় বলে ফেলেছিলেন।’

রাজ্য সরকারের গোয়েন্দা সূত্র এই দিন জানায়, বাংলাদেশের পদত্যাগী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রথমে আগরতলা নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেখান থেকে তিনি দিল্লির উদ্দেশে যাত্রা করেন। তবে আগরতলায় সরকারি স্তরে এই বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি। পশ্চিমবঙ্গও সরকারি স্তরে আনুষ্ঠানিকভাবে এ নিয়ে কেউ মুখ খোলেননি।

ভবিষ্যতে দিল্লিতে শেখ হাসিনার স্থান হবে কি না, এই প্রশ্নের উত্তরে ভারতের এক সাবেক রাজ্যপাল প্রথম আলোকে বলেন, তিনি মনে করেন, ভারতে হাসিনার স্থান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাঁর আশা, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই বিষয়ে নির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত নেবে। তবে সব দিক বিবেচনা করেই তাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে।