বিজেপি নেতা নরেন্দ্র মোদি টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করতে যাচ্ছেন। তবে এবার তাঁকে জোট শরিকদের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে
বিজেপি নেতা নরেন্দ্র মোদি টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করতে যাচ্ছেন। তবে এবার তাঁকে জোট শরিকদের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে

মোদি এখন আর ‘ইতিহাসের অদম্য কেউ নন’

ফলাফল ঘোষণার আগেই ভারতের সদ্য শেষ হওয়া লোকসভা নির্বাচনে বিরোধীদের শেষ দেখে ফেলা হলো। বুথফেরত জরিপে উপসংহার টানা হলো, ফলাফল অনেকটাই পূর্বনির্ধারিত। নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে যাচ্ছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। তবে শেষ পর্যন্ত পাশার দানা উল্টে গেল। একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়ে মোদির বিজেপিকে শরিকদের ওপর নির্ভর করে তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করতে হচ্ছে।

গতকাল মঙ্গলবার প্রকাশিত ফলাফল অনুযায়ী, বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট ২৯৩ আসন পেয়েছে। কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইন্ডিয়া জোট পেয়েছে ২৩৩টি আসন। বিজেপি একা সরকার গঠনের জন্য ২৭২ ম্যাজিক ফিগারের কাছে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়। দলটি পেয়েছে ২৪০ আসন। আর কংগ্রেস পেয়েছে ৯৯টি আসন।

প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপিকে আগের দুই মেয়াদে কারও দিকে তাকিয়ে থাকতে হয়নি। ২০১৪ সালে সরকার গড়েছিলেন ২৮২ আসন পেয়ে। পাঁচ বছর পর পান ৩০৩ আসন। তবে এবার তা নেমে এসেছে ২৪০টিতে। ম্যাজিক ফিগারের চেয়ে ৩২টি কম।

মোদির সমালোচক ও তাঁর বিরোধীরা বলে আসছিলেন, ভারত কার্যত দ্রুত একদলীয় শাসনের দিকে ধাবিত হচ্ছে। তবে ২০১৬ সালে ট্রাম্পের বিজয় এবং ব্রেক্সিটের মতো সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অনেক ‘অঘটন’ প্রমাণ করেছে, জনমত জরিপ এবং বিশ্লেষকদের কাছ থেকে প্রায়ই বড় ধরনের ভুল ভবিষ্যদ্বাণীও আসতে পারে।

এবার লোকসভা নির্বাচনে ৪০০ আসনের লক্ষ্য নিয়ে প্রচার চালান মোদি। কিন্তু মঙ্গলবার যখন একটু একটু করে ফলাফল আসতে শুরু করে, তাৎক্ষণিক এটা স্পষ্ট হয়ে যায় বিজেপি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাচ্ছে না; বরং এক দশক আগে ক্ষমতায় আসা মোদিকে সরকার গঠনে এবার প্রধান শরিক বিহারের নীতীশ কুমারের জেডি-ইউ ও অন্ধ্র প্রদেশের চন্দ্রবাবু নাইডুর দল তেলেগু দেশম পার্টির (টিডিপি) ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। এই দুই দলের সম্মিলিত আসন ২৮টি।

নির্বাচনের ফলাফলকে বহুত্ববাদের জয় হিসেবে অভিহিত করেছে বিরোধীরা। বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের দেশের ভোটাররা আংশিক হলেও মোদির হিন্দুত্ববাদী জনতুষ্টবাদী রূপকল্প প্রত্যাখ্যান করেছেন।

নিজেকে ‘ঈশ্বর প্রেরিত’ দাবি করা একজন নেতার জন্য এই ফলাফল মাঝারি মানের বলা যায়। জরিপে এগিয়ে থাকা দেখে সমর্থকেরা তাঁকে অপ্রতিরোধ্য বলে প্রশংসায় ভাসিয়েছিলেন।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানী প্রতাপ ভানু মেহতা মঙ্গলবার রাতে লিখেছেন, বিজেপির একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চিত করতে না পারাটা মোদির কর্তৃত্বকে অপ্রিয় বাস্তবতার মুখে ফেলেছে। তিনি বলেন, মোদি এখন আর ইতিহাসের অদম্য কেউ নন, তিনি আজ অন্য একজন রাজনীতিকের মতোই, যাঁর ক্ষমতার লাগাম টেনে ধরেছে জনগণ।