আগামী ১৯ অক্টোবর ভারতের সবচেয়ে প্রাচীন রাজনৈতিক দল কংগ্রেসের সভাপতির নির্বাচন। রাহুল গান্ধী সভাপতি হতে না চাইলে ওই দিন গান্ধী পরিবারের বাইরে নতুন কাউকে দলটির নতুন সভাপতি হিসেবে দেখা যেতে পারে। কংগ্রেস সভাপতি গান্ধী পরিবারের থেকে কেউ হবেন না এটা ধরে নেওয়া হয়েছে। তবে সোনিয়া গান্ধী চাইছেন রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী দলের শীর্ষ নেতা অশোক গেহলট হোন নতুন সভাপতি। তবে কংগ্রেসের লোকসভার সংসদ সদস্য শশী থারুরের লেখা একটি কলামের পরই কংগ্রেসের নতুন সভাপতি নিয়ে নতুন করে চর্চা শুরু হয়েছে। খবর এনডিটিভি।
কংগ্রেস পরিচালনার পদ্ধতিতে রদবদল চেয়ে ২৩ জন জ্যেষ্ঠ নেতা ২০২০ সালের আগস্টে কংগ্রেস সভাপতি সোনিয়া গান্ধীকে একটি চিঠি লিখেছিলেন। তাঁদের জি-২৩ বলা হয়। এই ২৩ নেতাদের কয়েকজন দল ছেড়েছেন। জি-২৩-এর লেখা চিঠিতে সই করা গুলাম নবী আজাদ, কপিল সিব্বল ও জিতিন প্রসাদ কংগ্রেস ছেড়েছেন। ২৩ নেতাদের মধ্যে অন্যতম একজন শশী থারুর।
শশী থারুর কেরালা থেকে নির্বাচিত লোকসভার সদস্য। সেখানকার একটি সংবাদমাধ্যমে ‘মাতৃভূমি’ নিজের কলামে কংগ্রেসের সভাপতি পদে নির্বাচনের জন্য প্রার্থী কেমন হওয়া উচিত বা কীভাবে প্রাথী নির্বাচন হতে পারে, সব কথা তুলে ধরেছেন তিনি। মালয়ালম ভাষায় প্রকাশিত ওই পত্রিকায় লেখা প্রকাশের পরই নানা রাজনৈতিক আলোচনা চলছে। একাধিক প্রার্থীকে রেখে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবেই পরবর্তী সভাপতি বেছে নেওয়ার পক্ষে কথা বলেছেন তিনি। আর তিনি নিজেও প্রার্থী হতে চান, এমন কথা সরাসরি বলেননি।
শশী থারুর নিজে অবশ্য এখনই সভাপতি হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ্যে জানাননি। তবে তাঁর যে আগ্রহ আছে, তাই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। থারুর নিজের লেখায় উল্লেখ করেছেন, ইংল্যান্ডের ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির শীর্ষ নেতৃত্ব নির্বাচনের খবর যেভাবে বিশ্বকে আকৃষ্ট করেছে। ২০১৯ সালে থেরেনা মে’র উত্তরসূরি নির্বাচনেও এমনটা দেখা গেছে। তেমনই জাতীয় স্বার্থকে আরও বেশি গুরুত্ব দিয়ে কংগ্রেসেরও নতুন সভাপতি বেছে নেওয়া উচিত বলে মনে করছেন থারুর। এতে কংগ্রেসের প্রতি জনসমর্থনও বাড়বে বলেই তিনি আশা প্রকাশ করেন। থারুরের লেখায় উল্লেখ, ‘আমি আশা করি অনেকেই সভাপতি পদপ্রার্থী হতে এগিয়ে আসবেন। দলের এবং দেশের প্রতি নিজেদের (প্রার্থীদের) দৃষ্টিভঙ্গি মানুষের আগ্রহ বাড়ানোর পক্ষে সহায়ক হবে।’
কংগ্রেস সভাপতি চূড়ান্ত করার বিষয়ে থারুর নিজেও অনেক নেতার সঙ্গেই যোগাযোগ রাখছেন। তিনি সবার সঙ্গে নিয়মিত কথা বলছেন। তাঁর মতে, কংগ্রেসের সভাপতি পদে নির্বাচন হওয়া উচিত অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে। এতে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে যে শূন্যতা তৈরি হয়েছে, তা পূরণ হয়ে যাবে। দলের নেতৃত্বের কাছে কর্মীদের বার্তা পৌঁছানোর পথও তৈরি হবে এবং দলের কর্মী ও সাধারণ মানুষও কংগ্রেসের প্রতি আকৃষ্ট হবেন।
এবার যদি একাধিক প্রার্থী থাকেন, সে ক্ষেত্রে নির্বাচন হবে। আর এটা হলে ২২ বছর পর কংগ্রেস সভাপতি পদের জন্য নির্বাচন হবে। ২০০০ সালে জিতেন্দ্র প্রসাদ সভাপতি পদে সোনিয়া গান্ধীর বিরুদ্ধে লড়েছিলেন। সেবার সোনিয়া পেয়েছিলেন ৭ হাজার ৫৪২ ভোট, জিতেন্দ্র প্রসাদ পান মাত্র ৯৪টি ভোট। এর আগে ১৯৯৭ সালে সভাপতি নির্বাচনের ভোট হয়েছিল জমজমাট। সেবার সীতারাম কেশরীর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন শারদ পাওয়ার ও রাজেশ পাইলট।
জি-২৩-এর কয়েকজন নেতা কংগ্রেস ছেড়েছেন। এমন সময় থারুর লিখেছেন, দলের নীতি বা আদর্শের প্রশ্ন নিয়ে কারও চিন্তা বা সংশয় নেই। তবে নেতা-কর্মীদের মধ্যে দল পরিচালনার পদ্ধতি নিয়ে সংশয় রয়েছে। যদিও সবাই দেখতে চান পুনরুজ্জীবিত জাতীয় কংগ্রেস। দলকে দুর্বল করা বা বিভাজন তৈরি করতে কেউ চান না। দলকে শক্তিশালী ও পুরোনো ছন্দে ফেরানোই সবার লক্ষ্য। তবে ইতিবাচক পদক্ষেপ না নিলে যেভাবে বিভিন্ন নির্বাচনে কংগ্রেসের ভরাডুবি হচ্ছে, তাতে কর্মীদের মনোবল আরও ভেঙে পড়ার আশঙ্কাও প্রকাশ করেন থারুর।