জম্মু-কাশ্মীরসহ ভারতের একাধিক পর্যটন এলাকা ভ্রমণের বিষয়ে নিজ দেশের নাগরিকদের বিভিন্ন মাত্রায় সতর্ক করেছে যুক্তরাষ্ট্র। অঞ্চলভেদে জারি করা হয়েছে সর্বোচ্চ ‘৪’ বা লেভেল ফোর মাত্রা ও ‘৩’ বা লেভেল থ্রি মাত্রার সতর্কতা। গত মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কনস্যুলার অ্যাফেয়ার্স বিভাগ এই সতর্কতা জারি করে।
জম্মু-কাশ্মীর ছাড়াও উত্তর-পূর্ব ভারতের মণিপুর, ভারত-পাকিস্তান সীমান্তের ১০ কিলোমিটার পর্যন্ত অঞ্চল, মধ্য ও পূর্ব–ভারতের মাওবাদী–অধ্যুষিত অঞ্চলে ৪ মাত্রার সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
তবে উত্তর-পূর্ব ভারতের অন্য রাজ্যে সতর্কতা ৪ থেকে কমিয়ে ৩ মাত্রায় আনা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে আসাম, নাগাল্যান্ড, অরুণাচল, সিকিম ও ত্রিপুরা। এসব রাজ্য থেকে সম্প্রতি সহিংসতার কোনো খবর পাওয়া যায়নি। কিন্তু উত্তর-পূর্ব ভারতে মাঝেমধ্যে জাতিভিত্তিক জঙ্গি হামলা হয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে সতর্কবার্তায়।
ভারতের যেসব পর্যটন অঞ্চলে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে জম্মু-কাশ্মীর সবচেয়ে বেশি তাৎপর্যপূর্ণ। সেখানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এসেছে বলে বারবার দাবি করে আসছিল ভারত সরকার। সরকারের এমন দাবির পর সেখানে দেশি-বিদেশি অনেক শিল্প সংস্থা জমি কেনার আবেদন করেছে। তাদের জমি দেওয়ার প্রক্রিয়াও শুরু করেছে কেন্দ্রীয় সরকার।
সরকারি সূত্রে জানা যায়, ৩ জুলাই পর্যন্ত ৬ হাজার ৯০৯টি দেশি-বিদেশি শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে জম্মু-কাশ্মীরে জমি দেওয়ার জন্য বাছাই করা হয়েছে। জমি দেওয়ার কাজ দ্রুত শেষ করা হচ্ছে। অথচ একটা সময় পর্যন্ত সেখানে স্থানীয় লোকজন ছাড়া কেউ জমি কিনতে পারত না।
কিন্তু মার্কিন প্রশাসন এখন জম্মু-কাশ্মীর ভ্রমণের বিষয়ে নিজ নাগরিকদের সতর্ক করায় সেখানে জমি বিক্রির কাজে ধীরগতি দেখা দেবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, জম্মু-কাশ্মীরের কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে সন্ত্রাসী হামলা ও সহিংস নাগরিক অস্থিরতা তৈরি হতে পারে। এই রাজ্যে (অঞ্চলে) ভ্রমণ করবেন না। (পূর্ব লাদাখ ও এর রাজধানী লেহ এই সতর্কতার বাইরে থাকবে)। এখানে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর বিক্ষিপ্ত সহিংসতার ঘটনা ঘটছে। এই ধরনের ঘটনা কাশ্মীর উপত্যকার পর্যটনকেন্দ্র যেমন শ্রীনগর, গুলমার্গ ও পাহলগামেও ঘটতে পারে।
মণিপুর সম্পর্কে বলা হয়েছে, রাজ্যটিতে ঘৃণাজনিত সহিংসতা ও অপরাধের হুমকি আছে। এখানে চলমান জাতিভিত্তিক গৃহযুদ্ধের ফলে ব্যাপক সহিংসতা ও স্থানীয় মানুষের বাস্তুচ্যুতির খবর পাওয়া গেছে। ভারত সরকারের স্থাপনার ওপর নিয়মিত হামলা হচ্ছে। তাই ভারতে ভ্রমণকারী মার্কিন সরকারি কর্মচারীদের মণিপুরে যাওয়ার আগে অনুমোদন প্রয়োজন। তবে উত্তর-পূর্ব ভারতের অন্যান্য রাজ্য ভ্রমণের জন্য আপাতত নিরাপদ।
ভারতের অন্যান্য স্থানেও নানা ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও সহিংসতার আশঙ্কা রয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সতর্কবার্তায়। এতে বলা হয়েছে, ভারতীয় কর্তৃপক্ষের মতে, দেশটিতে ধর্ষণ দ্রুত বাড়তে থাকা অপরাধগুলোর অন্যতম। যৌন নির্যাতনের বিষয়টি পর্যটন ও অন্যান্য জায়গায় সামনে এসেছে। সামান্য বা কোনো সতর্কতা ছাড়াই সন্ত্রাসীদের হামলারও আশঙ্কা আছে। সন্ত্রাসীরা পর্যটন ও পরিবহন কেন্দ্র, বাজার বা শপিং মল ও সরকারি স্থাপনাতে হামলা চালাতে পারে।
পূর্ব–মহারাষ্ট্র, মধ্য ও উত্তর–ভারতের একাংশ থেকে পূর্ব–ভারতের পশ্চিমবঙ্গ পর্যন্ত অঞ্চলে মাওবাদী হামলার আশঙ্কা প্রকাশ করে সেখানে ৪ মাত্রার সতর্কতা জারি করেছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর।