ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের ‘বাংলাদেশি’ বলে আক্রমণ কলকাতায়

এবার খোদ কলকাতায় ‘বাংলাদেশি’ বলে আক্রমণ করা হলো শতাব্দীপ্রাচীন ইস্টবেঙ্গল ফুটবল ক্লাবের সমর্থকদের। এ ঘটনাকে তাদের সমর্থকদের ওপরে ‘বিদ্বেষমূলক আক্রমণ’ বলে বর্ণনা করে ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের তরফে পুলিশে অভিযোগ করা হয়েছে। এক প্রেস বিবৃতিতে এ কথা জানিয়েছেন ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের সহসচিব রূপক সাহা।

গত সোমবার রূপক সাহা ক্লাবের তরফে লেখা প্রেস বিবৃতিতে বলেছেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে যুবভারতী স্টেডিয়াম (সল্টলেক স্টেডিয়াম)–সংলগ্ন কাদাপারা অঞ্চল এবং তৎসংলগ্ন আরও কয়েকটি অঞ্চলে প্রতিটি ডার্বি (শহরের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দল) ম্যাচ শেষে আমাদের সভ্য সমর্থকেরা বাড়িতে ফেরার পথে তাঁদের নানাভাবে হেনস্থা করা হচ্ছে।

গতকালের (৩ সেপ্টেম্বর) ম্যাচ শেষে সমর্থকেরা যখন বাড়িতে যাচ্ছিলেন, তখন তাঁদের ওপরে ইট, লাঠি, রড নিয়ে হামলা চালানো হয়। জোর করে ক্লাবের জার্সি খুলে ছিঁড়ে ফেলা হয়। যে ক্লাব পতাকাকে আমরা মাতৃরূপে পূজা করি, সেই ক্লাব পতাকা মাটিতে ফেলে সেটি পা দিয়ে মাড়ানো হয়। পাশাপাশি সমর্থকদের মাথা রক্তাক্ত করে দেওয়া হয়। রাস্তার পাশ থেকে সমর্থকভর্তি গাড়িতে কাচের বোতল, ইট ছুড়ে মারা হয়। আমরা এটাও শুনেছি, মহিলা সমর্থকদের অকথ্য ভাষায় আক্রমণ করা হয়।’

এরপর রূপক সাহা যোগ করেন যে দীর্ঘ সময় ধরে ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের সদস্য–সমর্থকদের ‘বাংলাদেশি’ বলে আক্রমণ করা হচ্ছে।

রূপক সাহা লিখছেন, ‘আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়, সেটি হলো বিদ্বেষমূলক আক্রমণ। বিশ্ব–ফুটবলের নিয়ামক সংস্থা বরাবরই এই বিষয়ে অত্যন্ত কঠোর, তারা এটিকে কখনোই প্রশ্রয় দেয় না। কিন্তু ফুটবল মাঠে এবং মাঠের বাইরে আমাদের সমর্থকদের “উদ্বাস্তু, কাঁটাতার, বাংলাদেশি” বলে প্রতিনিয়ত বিদ্বেষমূলক মন্তব্য করা হয়। এই সমস্ত বর্বরোচিত ঘটনার আমরা দীর্ঘদিন ধরেই তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে এসেছি। অতীতে আমরা সেখানকার বিধায়ককে (এমএলএ) জানিয়েছি, খেলার আগের দিন আমরা পুলিশকেও এই ব্যাপারে চিঠি দিয়ে জানিয়েছিলাম। কিন্তু দুর্ভাগ্য এগুলো এখনো বন্ধ হয়নি।’

পশ্চিমবঙ্গের তিনটি শতাব্দীপ্রাচীন ফুটবল ক্লাব রয়েছে, যার জনপ্রিয়তা কিছু বছর আগে সামান্য কমলেও সাম্প্রতিক সময়ে আবার বেড়েছে। এই তিন ক্লাব হল ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান, মোহামেডান স্পোর্টিং। আজ থেকে ঠিক ১০০ বছর আগে ১৯২০ সালের ১ আগস্ট ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের জন্ম হয়। ক্লাবের নাম ইস্টবেঙ্গল দেওয়া হয়। কারণ, এর প্রতিষ্ঠাতাদের প্রায় সবাই সে সময়ের পূর্ববঙ্গ থেকে এসেছিলেন। সমগ্র ভারত ও পশ্চিমবঙ্গের খ্যাতনামা খেলোয়াড় তো বটেই, বিভিন্ন পেশার অসংখ্য বিশিষ্ট মানুষ এই ক্লাবের সঙ্গে বিভিন্ন সময় যুক্ত হয়েছেন।

কিন্তু সেই ক্লাবের ওপরে হামলা হলো। বিষয়টি নিয়ে কলকাতার ক্রীড়ামহলে তো বটেই, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। কারণ, পশ্চিমবঙ্গের একটা বড় অংশের মানুষ পূর্ববঙ্গ থেকে এসেছেন এবং বরাবরই ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের সমর্থক। কিন্তু বর্তমানে ভারতে বাঙালিদের ওপরে নানান ধরনের আক্রমণ শুরু হয়েছে। বাঙালি হলেই অনেক ক্ষেত্রে ধরে নেওয়া হচ্ছে যে তাঁরা পূর্ববঙ্গ এবং বাংলাদেশ থেকে এসেছেন।

পশ্চিমবঙ্গের বাইরে অনেক সময় তাঁদের ‘বাংলাদেশি’ বলে আক্রমণ করা হচ্ছে এবং এমনকি গ্রেপ্তারও করা হচ্ছে। বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গ থেকে যে সমস্ত শ্রমিক ভারতের অন্যান্য রাজ্যে কাজ করতে যাচ্ছেন, তাঁদের ওপরে হামলা ক্রমে বাড়ছে। এবার আক্রমণ হলো ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের ওপরে, যাঁদের প্রায় সবাই হিন্দু এবং ভারতীয় এবং সেই আক্রমণ খোদ কলকাতায় হওয়ায় বিস্মিত শহরের মানুষ। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিষয়টি নিয়ে কয়েকবার মন্তব্যও করেছেন।

ক্লাবের শহর সচিব রূপক সাহা তাঁর বিবৃতিতে লিখেছেন, বিষয়টি তাঁরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রীকে জানাবেন। ইতিমধ্যেই বিষয়টি বিধাননগরের (সল্টলেক) পুলিশ কমিশনারকেও জানানো হয়েছে বলে লিখেছেন সাহা। সল্টলেক স্টেডিয়াম বিধাননগর পুলিশের প্রশাসনিক এখতিয়ারের মধ্যে পড়ে। সমর্থকদের যাঁরা আহত হয়েছেন, তাঁদের চিকিৎসার ব্যবস্থাও ক্লাব করবে বলে জানানো হয়েছে।