আট বছর দেশ শাসনের পরও নরেন্দ্র মোদির জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েনি। তাঁর নেতৃত্বাধীন সরকারের প্রতিও অধিকাংশের আস্থা অটুট। ইন্ডিয়া টুডে–সি ভোটারের নবতম সমীক্ষা জানাচ্ছে, এ মুহূর্তে ভোট হলে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট ২৮৪ আসন জিতবে। গত বৃহস্পতিবার রাতে এ সমীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে।
সমীক্ষা অনুযায়ী, কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ জোটও পায়ের তলার জমি শক্ত করছে। ভরসা বাড়ছে রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বের প্রতিও। এখনই ভোট হলে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ জোট পাবে ১৯১ আসন। কংগ্রেসের নিজস্ব আসনসংখ্যাও আগের জরিপের তুলনায় বাড়বে বলা হয়েছে। নেতা হিসেবে রাহুল গান্ধীর প্রতি জনগণের আস্থা ও ভরসাও বেড়েছে বলে জরিপের ইঙ্গিত। ২৯ শতাংশ মানুষ মনে করছেন, ভারত জোড়ো যাত্রা জনমনে ভালো মতো সাড়া ফেলেছে। ২৬ শতাংশ মনে করেন, দেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার যোগ্যতা রাহুলের রয়েছে।
লক্ষণীয়, পাঁচ মাস আগে, ২০২২ সালের আগস্ট মাসে, এই দুই সংস্থার জরিপ অনুযায়ী নরেন্দ্র মোদির বিপরীতে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে রাহুল গান্ধীর গ্রহণযোগ্যতা ছিল মাত্র ৯ শতাংশ। সেই সময় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মোদিই সেরা বলে মনে করতেন ৫৩ শতাংশ মানুষ। পাঁচ মাস পর ৬৭ শতাংশ জনতা মোদির শাসনে সন্তুষ্ট। সারা দেশে ১ লাখ ৪০ হাজার ৯১৭ জনের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলে এ জরিপ তৈরি করা হয়েছে বলে দুই সংস্থা দাবি করেছে।
পাঁচ মাস আগে মোদি সরকারের জনপ্রিয়তা তুলনামূলকভাবে কম ছিল। সেই জরিপে দেখা গিয়েছিল ৩৭ শতাংশ মানুষ সন্তুষ্ট নন। এবার অসন্তুষ্ট মানুষের সংখ্যা কমে হয়েছে ১৮ শতাংশ। জনপ্রিয়তা বাড়ার অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে জনতা মনে করছে করোনা পরিস্থিতির মোকাবিলা। ২০ শতাংশ মানুষ মনে করেন, করোনা পরিস্থিতির মোকাবিলা যে দক্ষতার সঙ্গে করা হয়েছে, সেটা এই সরকারের সবচেয়ে বড় সাফল্য। ১৪ শতাংশ মনে করে, সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদ করা সরকারের সেরা সাফল্য। ওই অনুচ্ছেদ জম্মু ও কাশ্মীরকে বিশেষ মর্যাদা দিয়েছিল। ১২ শতাংশ যদিও মনে করে, অযোধ্যার রামমন্দির তৈরিই সরকারের সেরা সাফল্য।
মোদি সরকারকে সমালোচনা বিদ্ধ করছে যে দুই বিষয়, সেই মূল্যবৃদ্ধি ও বেকারত্ব সমীক্ষায় বড় ভাবে উঠে এসেছে। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ২৫ শতাংশ মনে করছেন মূল্যবৃদ্ধি ঠেকাতে না পারা মোদি সরকারের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা, ১৭ শতাংশ সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন বেকারত্বকে।
পাঁচ মাস আগের সমীক্ষার তুলনায় বিজেপি জোটের সম্ভাব্য জয়ের আসনসংখ্যার সঙ্গে এবার বিশেষ হেরফের ঘটেনি। আসন কমেছে মাত্র দুটি। ২৮৬ থেকে ২৮৪। কংগ্রেস জোটের আসন সেখানে তুলনায় বেড়েছে অনেকটা। ১৪৬ থেকে বেড়ে হয়েছে ১৯১। সমীক্ষকদের মতে, এর একটা কারণ রাহুলের প্রতি আস্থা বাড়া, অন্য কারণ জেডিইউয়ের মতো দলের ইউপিএ জোটে যোগ দেওয়া।
লোকসভা ভোটের বাকি আর দেড় বছর। সরকার অভিন্ন দেওয়ানি বিধি প্রণয়নের পথে এগিয়ে চলেছে। বিভিন্ন বিজেপি শাসিত রাজ্য এ নিয়ে তৎপর। দেশে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি থাকা জরুরি কি না, সেই প্রশ্ন জরিপের অঙ্গ ছিল। ৬৯ শতাংশ মানুষ এর পক্ষে মতামত দিয়েছেন, ১৯ শতাংশ বিরোধিতা করেছেন। দেশজুড়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্টে বিচারপতি নিয়োগের ক্ষমতা নিয়ে। সুপ্রিম কোর্ট ‘কলেজিয়াম’ পদ্ধতি (বিচারপতিরাই বিচারপতি নিয়োগ করেন) আঁকড়ে থাকতে বদ্ধপরিকর, সরকার চায় সেই সিদ্ধান্তের শরিক হতে। এ নিয়ে বিচার বিভাগ ও সরকারের মধ্যে নিত্য চাপান উতোর চলছে। এ ক্ষেত্রে ৩৮ শতাংশ ‘কলেজিয়াম’ পদ্ধতি বহাল রাখার পক্ষে মত দিয়েছেন। ৩১ শতাংশ মনে করেন সরকার ও বিচার বিভাগের মিলেমিশে নিয়োগ করা উচিত।
দেশে হিন্দুত্ববাদের প্রসার কীভাবে ঘটছে, তার অন্য এক নিদর্শনও এই সমীক্ষায় উঠে এসেছে। ৫৭ শতাংশ মনে করছেন স্কুল–কলেজে হিজাব নিষিদ্ধ করা দরকার। বিরোধিতার সংখ্যা মাত্র ২৬ শতাংশ।