ভারত থেকে মোট ৪১ কূটনীতিককে কানাডা প্রত্যাহার করে নিল। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে কানাডার পক্ষ থেকে এ কথা জানানো হয়েছে। কানাডার নাগরিক খালিস্তানি আন্দোলনের নেতা হরদীপ সিং নিজ্জরের হত্যাকাণ্ডে ভারতের হাত থাকার সন্দেহের কথা প্রকাশ্যে জানানোর পর দুই দেশের সম্পর্কের অবনতির জেরে কূটনীতিক প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়েছিল ভারত।
শুক্রবার, ২০ অক্টোবরের মধ্যে ৪১ কূটনীতিককে কানাডায় ফিরে যেতে বলা হয়েছিল। বৃহস্পতিবার রাতেই তা পালিত হয়েছে বলে জানান সে দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেলানি জলি। তিনি অবশ্য বলেছেন, ভারতের এ হুকুম ‘অনৈতিক’।
কানাডায় ভারতের মোট কূটনীতিক আছেন ২১ জন। তুলনায় ভারতের বিভিন্ন শহরে কানাডার কূটনীতিকদের সংখ্যা ছিল ৬২। সম্পর্কের অবনতির পর ভারত তাদের জানিয়েছিল, দুই দেশে কূটনীতিকদের অবস্থানে সামঞ্জস্য রাখতে হবে। সে জন্য ৪১ জনকে ২০ অক্টোবরের মধ্যে ফিরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। এর আগে কানাডা এক ভারতীয় কূটনীতিককে বহিষ্কার করেছিল। ভারতও পাল্টা কানাডার এক কূটনীতিককে বহিষ্কার করে। তার পরেই সংখ্যায় সামঞ্জস্য আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
খালিস্তান আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ভারত-কানাডার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বেশ কয়েক বছর ধরেই স্বাভাবিক নয়। কানাডার বিভিন্ন শহরে অবস্থিত শিখ সম্প্রদায়ের একাংশ ভারতে পৃথক খালিস্তান রাজ্য স্থাপনের আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত। ওই শিখ জনগোষ্ঠী কানাডার বিভিন্ন শহরে ভারতবিরোধী প্রচারে শামিল। তাঁরা ভারতবিরোধী বিক্ষোভের আয়োজন করেন। ইন্দিরা গান্ধীর হত্যাকারীদের গৌরবান্বিত করে শোভাযাত্রাও বের করেছিলেন। সবচেয়ে বড় কথা, নানা সময়ে তাঁরা সে দেশে বিভিন্ন শহরে অবস্থিত ভারতীয় দূতাবাসে হামলা চালিয়েছেন। খালিস্তানি পতাকা তুলেছেন। নিজ্জর হত্যার পর তাঁরা ভারতীয় কূটনীতিকদের ছবি দিয়ে সরাসরি তাঁদের বিরুদ্ধে প্রচার চালিয়েছিলেন। ভারত বারবার ওই প্রচারের বিরোধিতা করে কানাডা সরকারকে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বললেও কোনো লাভ হয়নি। কানাডার বক্তব্য, গণতান্ত্রিক দেশে গণতান্ত্রিকভাবে বিক্ষোভ দেখানো জবরদস্তি বন্ধ করা যায় না।
কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো গত সেপ্টেম্বরে পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে নিজ্জর হত্যায় ভারতের হাত থাকার সন্দেহের কথা প্রকাশ্যে ঘোষণা করেন। সেই থেকে দুই দেশের সম্পর্ক তলানিতে ঠেকেছে। ভারতের অভিযোগ, শিখদের সমর্থন না পেলে সংখ্যালঘু ট্রুডো সরকারের পতন ঘটবে। রাজনৈতিক স্বার্থেই তাই তিনি খালিস্তানিদের প্রশ্রয় দিচ্ছেন।
মেলানি জলি ৪১ কূটনীতিক প্রত্যাহারের কথা জানানোর পাশাপাশি বৃহস্পতিবার রাতে বলেন, ‘ভারত একতরফাভাবে এই অনৈতিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমরা পরিস্থিতি উত্তপ্ত করতে চাই না। তাই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা নিয়েছি। সে জন্য মুম্বাই, চণ্ডীগড় ও বেঙ্গালুরুতে কানাডার কনস্যুলেটগুলোর স্বাভাবিক কাজ স্থগিত রাখা হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার স্বার্থে কথাবার্তা চালানোর জন্য বেশি সংখ্যায় কূটনীতিকদের উপস্থিতি প্রয়োজন ছিল। তা না থাকা সত্ত্বেও সেই লক্ষ্যে ভারতের সঙ্গে কানাডা আলোচনা চালিয়ে যাবে। তাঁর মতে, একসঙ্গে ৪১ কূটনীতিকের রক্ষাকবচ প্রত্যাহারের ঘোষণা অভূতপূর্বই শুধু নয়, আন্তর্জাতিক আইনেরও পরিপন্থী।
নিজ্জর হত্যাকাণ্ডে তদন্তের স্বার্থে হাত বাড়াতে প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো ভারতকে অনুরোধ জানিয়েছিলেন। ভারত তার পাল্টা জানায়, অভিযোগের সমর্থনে তাদের হাতে যেসব তথ্যপ্রমাণ রয়েছে, তা ভারতকে দেওয়া হোক। কানাডার দাবি, ওই সব তথ্যপ্রমাণ পাওয়া গিয়েছে পাঁচ রাষ্ট্রের ‘ফাইভ আইজ’ জোটের পক্ষ থেকে। কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড ওই জোটের শরিক। প্রযুক্তিনির্ভর তথ্যের ভিত্তিতে ওই পাঁচ রাষ্ট্রের গোয়েন্দারা বিভিন্ন বিষয় তদন্ত করেন এবং তথ্যপ্রমাণ আদান-প্রদান করেন। কানাডার দাবি, নিজ্জর হত্যাকাণ্ডে ভারতের হাত থাকার বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্র তাদের নিশ্চিত করেছিল।