দেশে দেশে ভারতীয় জাতীয়তাবাদী চেতনা ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে হিন্দি ভাষাকে বিশেষ প্রাধান্য দিতে চাইছে বিজেপি সরকার। আর এটি এমন সময়ে করা হচ্ছে, যখন ভারতে ‘গণতন্ত্রহীনতা, সংখ্যালঘু নির্যাতন ও মানবাধিকার লঙ্ঘন’ নিয়ে বিজেপি সরকারের মনোভাব নানা দেশে সমালোচিত হচ্ছে।
এই সমালোচনাকে মোকাবিলায় দ্বিমুখী কৌশল গ্রহণ করেছে ভারত সরকার। সমালোচনাকে সরাসরি ভারতের গণতন্ত্র ও সার্বভৌমত্বের ওপর হামলা বলে আখ্যায়িত করছে তারা। পাশাপাশি ভারতীয় জাতীয়তাবাদের প্রসারে পরিকল্পিতভাবে তুলে ধরা হচ্ছে হিন্দি ভাষাকে।
‘হিন্দি, হিন্দু, হিন্দুস্তান’—পুরোনো এই স্লোগানকে ভারতীয় জাতীয়তাবাদী চেতনার উন্মেষে নতুনভাবে মেলে ধরছে বিজেপি। সম্প্রতি ফিজি দ্বীপপুঞ্জে বিশ্ব হিন্দি সম্মেলনের তিন দিনের আসরেও এটা বোঝানো হয়েছে যে ভারতীয় জাতীয়তাবাদ ও হিন্দি একে–অন্যের পরিপূরক।
হিন্দি সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। সেখানে তিনি বলেন, পশ্চিমা ভাষা ও ঐতিহ্যকে অন্ধের মতো অনুসরণ করার দিন শেষ। হিন্দি ভাষাকে সর্বব্যাপী করে তুলতে হবে। সে ক্ষেত্রে এই সম্মেলন সহায়ক হিসেবে কাজ করবে।
ভারতের স্বাধীনতার সময় থেকে দেশটিতে হিন্দিকে সরকারিভাবে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেওয়ার চেষ্টা চলছে। কিন্তু বিভিন্ন অঞ্চল, বিশেষ করে দক্ষিণ ও উত্তর-পূর্ব ভারতের বাধায় তা সম্ভব হয়নি। ভারত সরকারও হাল ছাড়েনি। ইংরেজি, রুশ, স্প্যানিশ, চীনা, আরবি ও ফরাসি ভাষার মতো হিন্দিকেও জাতিসংঘ স্বীকৃত ভাষার মর্যাদা দিতে চেষ্টার ত্রুটি রাখছে না তারা।
সরকারের সেই লক্ষ্যে অবশ্য কিছুটা অগ্রগতি হয়েছে। উর্দু ও বাংলার পাশাপাশি জাতিসংঘ গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ বিজ্ঞপ্তি ও বার্তা হিন্দিতেও প্রচার শুরু করেছে। বিভিন্ন দেশে হিন্দি সম্মেলনের আয়োজন করাও বিজেপির লক্ষ্যের একটা অংশ। ফিজিতে জয়শঙ্কর তারই ইঙ্গিত দিয়ে বলেছেন, ‘বিশ্ব হিন্দি সম্মেলন একসময় হিন্দি মহাকুম্ভ হয়ে উঠবে। আমাদের লক্ষ্য হিন্দিকে বৈশ্বিক ভাষা করে তোলা।’
এদিকে বিভিন্ন দেশে ভারতীয় বংশোদ্ভূতদের মধ্যে ‘ভারতপ্রেমী’ সংগঠন গড়ে তুলতে উৎসাহ দিচ্ছে বিজেপি সরকার। যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচনের সময় এমন সংগঠনগুলোকে বিশেষ ভূমিকা নিতে দেখা গেছে। সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থন দিতে দেশটিতে ভারতীয় বংশোদ্ভূত নাগরিকদের প্রভাবিত করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এমনকি বিশাল এক জনসমাবেশে ট্রাম্পের হাত ধরে তিনি ‘আসছে বার ট্রাম্প সরকার’ স্লোগানও দিয়েছিলেন।
এতে বিজেপির রাজনৈতিক লাভও হচ্ছে। সম্প্রতি দলটিকে নিয়ে বিবিসির তথ্যচিত্র সম্প্রচারের পর যুক্তরাজ্যে বসবাসকারী ভারতীয় বংশোদ্ভূত একাংশ বিক্ষোভ করেছিলেন। বলা চলে, ভারতীয় জাতীয়তাবাদের সঙ্গে হিন্দি ও হিন্দু যে সমার্থক, বিজেপি কৌশলে সেটাই বুঝিয়ে দিতে চাচ্ছে। হিন্দিকে বিশ্বজনীন করে তুলতে মোদি তাই এত আগ্রহী।