মণিপুরে অস্ত্রাগার লুট, গুলিতে পুলিশকর্মী নিহত

মণিপুরের কুকি–জো সমাজের মানুষের ওপর হামলার প্রতিবাদ ও জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের দাবিতে বেঙ্গালুরুতে উনাও ট্রাইবাল ফোরামের সদস্যদের বিক্ষোভ। ১ আগস্ট
 ছবি: এএনআই

সহিংসতা শুরুর তিন মাস পর আবার উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে মণিপুর। নতুন করে সহিংসতা শুরু হয়েছে সেখানে। গত ২৪ ঘণ্টায় প্রধানত হিন্দু মেইতেই সম্প্রদায়ের মানুষের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় সরকারি অস্ত্রাগার থেকে প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র লুট হয়েছে। দুষ্কৃতকারীদের গুলিতে নিহত হয়েছেন অন্তত এক নিরাপত্তাকর্মী। আহত হয়েছেন আরও দুই ব্যক্তি। এই দুষ্কৃতকারীদের উপজাতীয় গোষ্ঠীর সদস্য বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।
গত ৩ মে মণিপুরে সংখ্যাগরিষ্ঠ মেইতেই সম্প্রদায়ের সঙ্গে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর দাঙ্গা শুরু হয়।

মণিপুরে অবস্থানরত ভারতীয় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা বাহিনীর এক সদস্য প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমান সহিংসতার সঙ্গে মাস কয়েক আগের সহিংসতার একটা বড় তফাত রয়েছে। অতীতে প্রধানত হিন্দু সম্প্রদায়ভুক্ত মেইতেইদের তথাকথিত প্রতিনিধিত্বকারী জঙ্গি সংগঠনের নেতৃত্বাধীন সমাজের সদস্যদের সঙ্গে মূলত উপজাতীয় কুকিদের নেতৃত্বাধীন জোমি-হামর-চিন প্রভৃতি সম্প্রদায়ের লড়াই হয়েছে। এখন দুই পক্ষই আক্রমণ করছে সামরিক বাহিনী, আধা সামরিক বাহিনী এবং স্থানীয় পুলিশের যৌথ বাহিনীকে লক্ষ্য করে।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মণিপুর পরিস্থিতি নিয়ে এখনো ভারতের সংসদে কোনো বিবৃতি দেননি। তবে বিজেপিবিরোধী দলের জোট বুঝতে পেরেছে, তিনি মণিপুর নিয়ে বিবৃতি দেবেন না। এর ফলে খানিকটা বাধ্য হয়েই মণিপুরের সহিংসতা বিষয়ে নরেন্দ্র মোদির বিবৃতির দাবি প্রত্যাহার করে তারা এখন বিষয়টি নিয়ে সংসদে বিশদ আলোচনা চায়।

২৪ ঘণ্টায় সহিংসতা বৃদ্ধি

গতকাল বৃহস্পতিবার মণিপুরের বিষ্ণুপুর জেলায় জাতিগত সহিংসতা নতুন করে শুরু হয়। বিষ্ণুপুর জেলা শহর থেকে ১২ কিলোমিটার উত্তরে রাজধানী ইম্ফলের লাগোয়া একটি গ্রাম নারানসেইনা। এই গ্রামে ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাটালিয়নের (আইআরবি) একটি ক্যাম্প রয়েছে। আইআরবির এই ক্যাম্পে হামলা চালায় দুষ্কৃতকারীরা। ৪০টির বেশি গাড়ি নিয়ে এসে তারা গোলাবারুদ লুট করে। অনেককে পায়ে হেঁটে এসে অস্ত্র ও গোলাবারুদ লুট করে নিয়ে যেতে দেখা যায়।

তিন মাস আগে জাতিগত ও সম্প্রদায়িক সহিংসতা শুরু হওয়ার পরে বারবার অস্ত্রাগারে হামলা হয়েছে। ভারতের ইংরেজি দৈনিক হিন্দুস্তান টাইমস জানিয়েছে, মোট চার হাজার অস্ত্র, পাঁচ লাখ গুলিসহ গোলাবারুদ লুঠ হয়েছে। অবশ্য অতীতে সরকারি সূত্রে বলা হয়েছিল, লুট হওয়া অস্ত্র ও গোলাবারুদের পরিমাণ আরও অনেক বেশি। পুলিশ প্রশাসন জানিয়েছিল, জুলাইয়ের শেষ নাগাদ কর্তৃপক্ষ প্রায় এক হাজার অস্ত্র উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে।

দুই পক্ষের সংঘর্ঘে এ পর্যন্ত ১৫০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। বাস্তুচ্যুত হয়েছে ৫০ হাজারের বেশি মানুষ।

বিষ্ণুপুর জেলার তোরবুং অঞ্চলে কুকি-জো সম্প্রদায়ের ৩৫ জনের মরদেহ গণকবর দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে গতকাল নতুন করে সহিংসতা শুরু হয়। মণিপুরের সুপ্রিম কোর্ট ও প্রশাসনের আপত্তির মুখে গত তিন মাসে সংঘর্ষে নিহত উপজাতীয় কুকি-জো সম্প্রদায় তাদের গণদাফন কর্মসূচি স্থগিত করে। এরপরও সংঘর্ষ শুরু হয় প্রধানত মেইতেই সম্প্রদায়, আধা সামরিক বাহিনী, আসাম রাইফেলস, র‌্যাপিড অ্যাকশন ফোর্সের (আরএএফ) মধ্যে। এ ঘটনার জেরে অস্ত্রাগার লুণ্ঠিত হয়। নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে অন্তত ২৫ নারী আন্দোলনকর্মীসহ অসংখ্য মানুষ আহত হন।

সরকারি বিবৃতিতে বলা হয়, ইম্ফলের পশ্চিমের সেনজাম চিরাং এলাকায় মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মণিপুর পুলিশের কর্মী তুরাংবাম ঋষিকুমার (৪৮) নিহত হন। নিহত পুলিশ সদস্য থৌবাল জেলার বাসিন্দা।

নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনীর সন্দেহ, সরকারি বাহিনীর ওপর হামলাকারীরা উপজাতীয় জঙ্গি। কারণ, পার্বত্য অঞ্চল থেকে পুলিশের ওপরে গুলি চালানো হয়। উপজাতীয় জঙ্গিরা জঙ্গলে ঘেরা মিয়ানমার সীমান্তবর্তী পার্বত্য অঞ্চলে অবস্থান করছে। পশ্চিম ইম্ফলের কাউতরুক এবং হারাওথেল নামের আরও দুটি পার্বত্য অঞ্চলে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে পাহাড়ের ওপরে অবস্থানরত জঙ্গিদের গোলাগুলি হয়। বন্দুকযুদ্ধে এক গ্রাম স্বেচ্ছাসেবক ও এক নারী আহত হন।