পশ্চিমবঙ্গে সহিংসতা থামছে না

পশ্চিমবঙ্গে কয়েক দিন ধরে চলছে সহিংসতা
ছবি: এএনআই

অশান্ত পশ্চিমবঙ্গে এক সপ্তাহ ধরে সহিংসতা চলছে। আজ সোমবারও হুগলি জেলার কোন্নগড়ে গন্ডগোল হয়েছে। আজ অবশ্য প্রধানত পুলিশের সঙ্গে বিজেপি সমর্থকদের মারপিট হয়। তবে গতকাল রোববার বড় ধরনের সংঘর্ষ হয়েছে হুগলি জেলারই রিষড়া পৌরসভা অঞ্চলে। এখন পর্যন্ত অন্তত ১০ জনকে রিষড়ার ঘটনায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে, ২৪ ঘণ্টা ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়েছে এবং হুগলি জেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় জমায়াতের ওপরে নিষেধাজ্ঞা (১৪৪ ধারা) জারি করা হয়েছে।

হিন্দু দেবতা রামের জন্মদিন উপলক্ষে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন স্থানে গত ৩০ মার্চ মিছিল ও শোভাযাত্রা হয়। সেই শোভাযাত্রা চলাকালে ও পরে সংঘর্ষ শুরু হয় কলকাতাসংলগ্ন হাওড়া জেলার শিবপুরে। আরও একাধিক জায়গায় ছোটখাটো গন্ডগোল হয়। তবে বড় সংঘর্ষ হয় উত্তরবঙ্গে। উত্তরবঙ্গের দক্ষিণ দিনাজপুরের ডালখোলা অঞ্চলে গত বৃহস্পতিবারের সংঘর্ষে অন্তত এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে এবং অনেকে আহত হয়েছেন।

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গে গন্ডগোলের চেষ্টা করা হচ্ছে এবং এই চেষ্টা আরও বড় আকার ধারণ করতে পারে ৬ এপ্রিল। ওই দিন অপর হিন্দু দেবতা হনুমানের জন্মদিন। ইতিমধ্যে কলকাতা হাইকোর্ট রামনবমীকে কেন্দ্র করে গন্ডগোলের যাবতীয় রিপোর্ট রাজ্য প্রশাসনের কাছে চেয়ে পাঠিয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস বলেছেন, গুন্ডামি বরদাস্ত করা হবে না। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গত বৃহস্পতিবার রাজ্যপালের সঙ্গে ফোনে কথা বলে পশ্চিমবঙ্গের অবস্থা নিয়ে বিস্তারিত জানতে চেয়েছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।

আজ সকালে রাজ্যের হুগলি জেলার রিষড়া এলাকায় যেতে গিয়ে পুলিশের বাধার মুখে পড়েন পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। তাঁকে ঘটনাস্থলে পৌঁছতে পুলিশ বাধা দেওয়া হয় বলে বিজেপির অভিযোগ। কলকাতাসংলগ্ন জিটি রোডের বিশালাক্ষীতলায় তাঁর গাড়ির বহর আটকানো হয়, বিজেপি কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের হাতাহাতি শুরু হয়। এই ঘটনা গতকাল রিষড়ায় যে প্রবল সংঘর্ষ হয়, তারই জের। বিজেপি কর্মীরা আহত হন বলে অভিযোগ। মজুমদার আহত কর্মীদের দেখতে যাচ্ছিলেন।

গতকাল রোববার রিষড়ার বাঙুর পার্ক এলাকা থেকে রামনবমীর মিছিল বের করেছিল বিজেপি। মিছিলে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন সাবেক রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষসহ বিজেপি নেতারা। মিছিল রিষড়ার ওয়েলিংটন জুট মিলের কাছে পৌঁছাতেই অশান্তি শুরু হয়। ইটবৃষ্টি, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটে। বিজেপির এক এমএলএ বিমান ঘোষ আহত হয়ে হুগলির এক হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। পরে চন্দননগরের পুলিশ কমিশনারের নেতৃত্বে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। আজ রিষড়ায় পরিস্থিতি শান্ত কিন্তু থমথমে। দোকানপাট বন্ধ। বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। মাইকে শান্তি বজায় রাখার আবেদন জানাচ্ছে পুলিশ। আজ সারা দিন রিষড়াসহ কয়েক জায়গায় ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়েছে।

শ্রীরামপুরের সংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ‘রামনবমীর মিছিলের জন্য অনুমতি দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু সেখানে কোথাও বলা হয়নি, দিলীপ ঘোষ আসবেন। শ্রীরামপুর বা রিষড়ার কোনো লোক এই ঘটনায় যুক্ত নন, বাইরে থেকে প্রচুর লোক এনে গন্ডগোল করা হয়েছে। মিছিলে দিলীপ ঘোষ ছিলেন, কিন্তু ঝামেলা শুরু হওয়ার একটু আগে তিনি বেরিয়ে যান…তিনি এই পরিস্থিতি তৈরি করেছেন।’

বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেছেন, ‘গন্ডগোল বিজেপি শুরু করেনি, আমাদের কর্মীরা বোমাও ছোড়েননি। আত্মরক্ষার্থে পুলিশকে পাথর ছুড়তে হয়, কারণ, তাঁদের আক্রমণ করা হয়েছিল। পরে পুলিশের কাছে তৃণমূল নেতাদের ফোন আসে এবং তাঁরা ঘটনাস্থল ছেড়ে পালিয়ে যান।’

উল্লেখ্য, রামের জন্মোৎসব শেষ হওয়ার পাঁচ দিন পরও পশ্চিমবঙ্গে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা কমছে না। হাওড়া জেলায় যে গন্ডগোল শুরু হয়েছিল গত ৩০ মার্চ, তা হাওড়ার পরে হুগলিতেও ছড়াচ্ছে। দক্ষিণবঙ্গের পাশাপাশি উত্তরবঙ্গের বেশ কিছু অংশেও পরিস্থিতি উত্তেজনাপূর্ণ। এই উত্তেজনা আগামী কয়েক দিনে আরও বাড়বে বলেই মনে করছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

আজ পূর্ব মেদিনীপুরের খেজুরিতে একটি সরকারি অনুষ্ঠানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘আমি প্রশাসনকে ৬ এপ্রিল তারিখ সম্পর্কে সতর্ক করে দিচ্ছি। ওরা আবার দাঙ্গা করার পরিকল্পনা করতে পারে। সেটা যাতে না হয়, তা আমাদের দেখতে হবে।’ ওই দিন প্রধানত উত্তর ভারতের দেবতা হনুমানের জন্মদিন। এ কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে মমতা আরও বলেন, ‘আমরা সবাই বজরংবলীকে (হনুমানকে) শ্রদ্ধা করি কিন্তু দাঙ্গাবাজি সমর্থন করি না…হাওড়ায় অনুমতি ছাড়া সংখ্যালঘু এলাকায় ইচ্ছা করে মিছিল ঢোকানো হয়েছিল।’  

হিন্দু সম্প্রদায়ের উদ্দেশে মমতা বলেন, ‘আমি হিন্দু ভাইবোনদের বলব, সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা আপনাদেরই সুনিশ্চিত করতে হবে।’

পশ্চিমবঙ্গে সিপিআইএম দলের সাধারণ সম্পাদক মহম্মদ সেলিম গত কয়েক দিনের দাঙ্গার জন্য মুখ্যমন্ত্রীকেই দায়ী করে বলেছেন, তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে মানুষের অভিযোগ চূড়ান্ত আকার ধারণ করেছে এবং তাঁরা পথে নামছেন। যে সমস্যাগুলো নিয়ে মানুষ পথে নামছেন, তা থেকে দৃষ্টি ঘোরাতে, নিজেদের মধ্যে সমঝোতা করে তৃণমূল ও বিজেপি দাঙ্গার পরিকল্পনা করেছে, বলেছেন সেলিম।