মোহাম্মদ মুইজ্জু মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের যে টানাপোড়েন শুরু হয়েছিল, তা কাটিয়ে উঠতে শুরু করেছে দুই দেশ। বলা যায়, ভারত–মালদ্বীপ সম্পর্কের বরফ গলতে শুরু করেছে। মুইজ্জু ক্ষমতায় আসার পর এই প্রথম দুই দেশের প্রতিরক্ষা সচিবেরা বৈঠকে বসেছেন। মালদ্বীপ থেকে ভারতের ‘সেনা অপসারণের’ পর এই প্রথম প্রতিরক্ষা–সংক্রান্ত সহযোগিতার প্রশ্নে দুই দেশ কাছাকাছি এল।
গত শুক্রবার দিল্লিতে ‘প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা’ নিয়ে আলোচনায় বসেন ভারতের প্রতিরক্ষাসচিব গিরিধর আরামানে ও মালদ্বীপের প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রধান ইব্রাহিম হিলমি।
দুই দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতার ক্ষেত্রে এটি ছিল পঞ্চম বৈঠক। চতুর্থ বৈঠকটি হয়েছিল সাবেক প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম সোলিহ যখন ক্ষমতায় ছিলেন।
বৈঠকের পর ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা নিয়ে বিভিন্ন বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে চলমান প্রকল্পগুলোর দ্রুত রূপায়ণের বিষয়ও।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, দুই দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। যেমন সরকারের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদের আসা–যাওয়া এবং দক্ষতা বৃদ্ধি–সংক্রান্ত প্রকল্পগুলোর রূপায়ণ। আসন্ন দ্বিপক্ষীয় সামরিক মহড়ায় যোগদানের বিষয়টিও আলোচনায় উঠে আসে।
এই বৈঠককে ‘ফলপ্রসূ’ আখ্যা দিয়ে ভারতের বিবৃতিতে বলা হয়, এতে দুই দেশের স্বার্থই সংরক্ষিত হবে। ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলও স্থিতিশীল ও সমৃদ্ধিশালী হয়ে উঠবে।
গত বছরের নভেম্বরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট পদে চীনপন্থী হিসেবে পরিচিত মোহাম্মদ মুইজ্জুর জয়ের পর থেকে ভারত–মালদ্বীপ সম্পর্কে অবনতি দেখা দেয়। নির্বাচনে মুইজ্জুর প্রধান স্লোগান ছিল ‘ইন্ডিয়া আউট’। ভারতবিরোধী স্লোগান তুলে নির্বাচনে জয়ের পর প্রথমেই তাঁর সরকার সেনা অপসারণের দাবি তোলে।
সোলিহর আমলে মালদ্বীপকে ভারত দুটি হেলিকপ্টার ও একটি ডর্নিয়ার বিমান উপহার দিয়েছিল। চিকিৎসা ক্ষেত্রে রোগী পরিবহন ও বিপর্যয়ের সময় জরুরি পরিষেবা দেওয়ার কাজে সেগুলো ব্যবহার করা হতো। বিমান ও হেলিকপ্টার রক্ষণাবেক্ষণের কাজে নিযুক্ত ছিলেন সেনাবাহিনীর ৮৮ জন সদস্য।
মালদ্বীপ সরকারের দাবি মেনে ভারত সেই সেনাদের পর্যায়ক্রমে দেশে ফিরিয়ে আনে। রক্ষণাবেক্ষণের কাজে সে দেশে পাঠানো হয় বেসামরিক বিশেষজ্ঞদের।
চলতি বছরের ১০ মে শেষ সেনা চলে আসার পর মালদ্বীপের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মুসা জমির ভারতে এসেছিলেন। পরের মাসে নরেন্দ্র মোদির তৃতীয় দফার প্রধানমন্ত্রিত্বের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে প্রথমবার দিল্লি সফরে যান প্রেসিডেন্ট মুইজ্জু।
গত আগস্টে মালদ্বীপ সফরে যান ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। সেই সফরে জয়শঙ্কর মালদ্বীপকে ‘ভারতের প্রতিবেশী প্রথম নীতির এক গুরুত্বপূর্ণ শরিক’ হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, মালদ্বীপের স্বার্থ রক্ষা ভারতের অগ্রাধিকার। আড়ষ্টতা কাটিয়ে সম্পর্কের শীতলতা দূর করার সেই শুরু।
ভারতের কর্মকর্তারা মনে করছেন, এবার বন্ধ থাকা প্রতিরক্ষাসচিবদের বৈঠক দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে। তবে সহযোগিতার ক্ষেত্রগুলো কী কী, সে বিষয়ে ভারতের পক্ষ থেকে অবশ্য কিছু জানানো হয়নি।