মোটামুটি দুই সপ্তাহ শান্ত থাকার পর আজ শুক্রবার সকালে একটি নতুন সহিংসতার ঘটনায় মণিপুরে অন্তত তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। নিহত ব্যক্তিরা স্থানীয় কুকি সম্প্রদায়ের। অপেক্ষাকৃতভাবে শান্তিপূর্ণ নাগা অধ্যুষিত জেলা উখরুলে এই ঘটনা ঘটেছে। উখরুল মণিপুরের উত্তর-পশ্চিমে মিয়ানমারঘেঁষা জেলা। এত দিন সহিংসতার ঘটনা ঘটছিল মণিপুরের কেন্দ্রে রাজধানী ইম্ফল এবং দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব সীমান্তের জেলাগুলোতে, উখরুল মোটামুটি শান্তই ছিল। একটি নতুন অঞ্চলে সহিংসতার ঘটনায় উদ্বিগ্ন প্রশাসন।
নিহত তিন ব্যক্তির নাম থাংখোকাই হাওকিপ, জামখোগিন হাওকিপ এবং হলেনসন বেইট। উখরুলের পুলিশ সুপার নিংশেম ভাসুম বলেছেন, নিহত ব্যক্তিরা গ্রাম পাহারার দায়িত্বে ছিলেন। মিয়ানমার-সংলগ্ন উখরুলের যে গ্রামটিতে তিনজনকে হত্যা করা হয়েছে, সেটি কুকিদের নিয়ন্ত্রণে ছিল।
গত সাড়ে তিন মাসে সহিংসতার ঘটনা প্রধানত লক্ষ করা গিয়েছিল, মেইতেই-অধ্যুষিত বিষ্ণুপুর, ইম্ফল পশ্চিম, ইম্ফল পূর্ব, কাকচিং এবং কুকি-জোমি অধ্যুষিত চুড়াচাঁদপুর এবং কাংপোকপি জেলায়। উখরুল প্রায় শান্তই ছিল। সেখানে এই নতুন সমস্যা যে উদ্বেগের, তা জানিয়েছেন পুলিশপ্রধান।
পুলিশ সুপার ভাসুম বলেন, প্রায় এক মাস আগে কামজংয়ের (উখরুলের পার্শ্ববর্তী আরেকটি নাগা জেলা) আরেকটি কুকি গ্রামে সহিংসতার আরেকটি ঘটনা ঘটেছিল। তবে উখরুল মোটামুটি শান্তই ছিল। আজকের ঘটনা রাজ্যে চলমান জাতিগত সমস্যার সঙ্গে সম্পর্কিত। কিছু সশস্ত্র দুষ্কৃতকারী গ্রামে প্রবেশ করে। যে তিন ব্যক্তি মারা গেছেন, তাঁরা গ্রাম পাহারা দিচ্ছিলেন। দুষ্কৃতকারীরা এই তিন ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা করেন। এলাকা এখন শান্ত, গুলিবর্ষণ বন্ধ হয়েছে, সেনাবাহিনী ও পুলিশ সমন্বিত নিরাপত্তা বাহিনী এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে।
মে মাস থেকে চলা সহিংসতায় এখন পর্যন্ত ১৬০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন, ৬০ হাজারের বেশি মানুষ গৃহহীন অবস্থায় উদ্বাস্তু শিবিরে রয়েছেন।
মণিপুরের নাগা সম্প্রদায় বর্তমান সংঘাত থেকে দূরত্ব বজায় রাখলেও, তাদের রাজনৈতিক নেতা এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা ইতিমধ্যেই বলেছেন যে সমস্যাটির রাজনৈতিক নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে অবশ্যই তাঁদের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত। কুকি-জোমি অঞ্চলগুলোতে পৃথক প্রশাসনের ব্যবস্থা করা হলে তা যেন নাগাদের প্রভাবিত না করে, তা মাথায় রাখা প্রয়োজন বলে সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। কুকি ও নাগাদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে সংঘাত চলেছে এবং বর্তমানেও চাপা উত্তেজনা আছে। যদিও সপ্তাহখানেক আগে, কুকি সমাজের পক্ষে ভারত-নাগা চুক্তির বিষয়ে নাগাদের পক্ষ নিয়ে বক্তব্য রাখা হয়েছে।
ইতিমধ্যে ভারত সফরকারী মার্কিন একটি প্রতিনিধিদলের নেতা রো খান্না মণিপুরের একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। দীর্ঘ সময় জেলে বন্দী ছাত্রনেতা উমর খালিদের বাবা সৈয়দ কাসিম রাসুল ইলিয়াসসহ ভারতের নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও দেখা করেছেন খান্না।
এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ছিল মোহনদাস গান্ধীর প্রপৌত্র তুষার গান্ধীর সঙ্গে খান্নার সাক্ষাৎ। সাক্ষাতের পরে তুষার গান্ধী সামাজিক মাধ্যমে লেখেন, মণিপুরের প্রতিনিধি এবং উমর খালিদের বাবার সঙ্গে দেখা করলেও, খান্নাকে রাহুল গান্ধীর সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হয়নি।
গান্ধী লিখেছেন, ‘জাতিগত ঘৃণা, বিভাজন এবং সহিংসতার মধ্যে নিক্ষিপ্ত হয়েছে। আমি ভারতের অবস্থা নিয়ে আমেরিকার কংগ্রেস সদস্য রো খান্নাকে আমার মতামত জানিয়েছি।’