জরিপে জ্ঞানবাপি মসজিদের ক্ষতি হবে কি না, জানতে চান হাইকোর্ট

জ্ঞানবাপী মসজিদ
ফাইল ছবি: এএনআই

উত্তর প্রদেশের বারানসির জ্ঞানবাপি মসজিদ জরিপের কাজ আগামীকাল বৃহস্পতিবারও স্থগিত থাকবে। এলাহাবাদ হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি প্রীতিনকর দিবাকর আজ বুধবার বিকেলে এ নির্দেশ দেন।

প্রধান বিচারপতি বলেন, বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে তিনটায় এই মামলা ফের শোনা হবে। সমীক্ষা বা জরিপ চালালে মসজিদ চত্বরের কেন কোনো ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা নেই, তা ব্যাখ্যা করতে বলা হয়েছে আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়াকে (এএসআই)। সে জন্য সংস্থার কোনো কর্তাকে এজলাসে হাজির করার নির্দেশ দেন তিনি।

বারানসির জেলা আদালত মসজিদ জরিপের নির্দেশ জারি করেছিলেন। এএসআইকে সেই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। গত সোমবার সকালেই এএসআই সেই কাজ শুরু করে দেয়। এর বিরুদ্ধে মসজিদ প্রশাসন ‘অঞ্জুমান ইন্তেজামিয়া মসজিদ’ সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানান। সুপ্রিম কোর্ট মসজিদ জরিপের কাজ বুধবার বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত স্থগিত রাখার নির্দেশ জারি করে মসজিদ কর্তৃপক্ষকে এলাহাবাদ হাইকোর্টে আবেদন জানাতে বলেছিলেন।

সমীক্ষা বা জরিপের কাজে মসজিদের ক্ষতির আশঙ্কার কথা মঙ্গলবারের মতো আজ বুধবারও প্রধান বিচারপতির এজলাসে তোলা হয়। অঞ্জুমান ইন্তেজামিয়া মসজিদ কর্তৃপক্ষের আইনজীবী এস এফ এ নাকভি সেই শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, নিম্ন আদালতে আবেদনকারীরা স্বীকার করেছেন, মসজিদ চত্বরে হিন্দু দেবদেবীর মূর্তির উপস্থিতির কোনো প্রমাণ তাঁদের কাছে নেই। এএসআইকে সেই প্রমাণ খুঁজে দেওয়ার আরজি তাঁরা জানিয়েছেন। এটা করা যায় না। অন্য কাউকে প্রমাণ খুঁজে দেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া যায় না। এটা বেআইনি।

আইনজীবী বলেন, এএসআই তা করতে গিয়ে মসজিদ চত্বরে খোঁড়াখুঁড়ি করবে। তাতে এই পুরোনো মসজিদ ভেঙে পড়তে পারে। এই মসজিদ এক হাজার বছরের পুরোনো।

আইনজীবী নাকভির এই আশঙ্কার প্রত্যুত্তরে এএসআইয়ের পক্ষে অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল বলেন, আপাতত তাঁরা ‘গ্রাউন্ড পেনিট্রেটিং রাডার’ (জিপিআর) পদ্ধতিতে জরিপ করবেন। পরে প্রয়োজন হলে খোঁড়াখুঁড়ি করা হতে পারে। জিপিআর পদ্ধতি অনেকটা লন বা মাঠের ঘাস ছাঁটা যন্ত্রের মতো বলে এজলাসকে জানানো হয়।

জরিপের মধ্য দিয়ে এএসআই ঠিক কী করতে চাইছে এবং তাতে মসজিদের যেকোনো ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা নেই, সেই বিষয়ে প্রধান বিচারপতি নিশ্চিত হতে পারেননি। বরং ঘোরতর সন্দেহ প্রকাশ করেন। জানতে চান, তারা এমন ধরনের কাজ আগে করেছে কি না। করলে তার কোনো ছবি আছে কি না।

সংশয় দূর না হওয়ায় প্রধান বিচারপতি অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেলকে নির্দেশ দেন বিকেল সাড়ে চারটার মধ্যে বারানসি থেকে এএসআইয়ের কোনো কর্তাকে হাজির করাতে, যাতে তাঁর কাছে জরিপ পদ্ধতি ব্যাখ্যা করা হয়।
   
সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রুচূড়, বিচারপতি জি বি পর্দিওয়ালা ও বিচারপতি মনোজ মিশ্রর বেঞ্চ গত সোমবার এই মামলার শুনানির সময় মসজিদ কর্তৃপক্ষকে এলাহাবাদ হাইকোর্টে আবেদন জানাতে বলেছিলেন। সেই সঙ্গে মসজিদ জরিপের কাজ বুধবার বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত স্থগিত করে দেন।

মসজিদ কর্তৃপক্ষের তরফে আইনজীবী হুফেজা আহমেদি সুপ্রিম কোর্টকে বলেছিলেন, এএসআই সমীক্ষা করার সময় মসজিদ চত্বর খোঁড়াখুঁড়ি করবে। এক হাজার বছরের পুরোনো এই মসজিদ তাতে ভেঙে পড়তে পারে। যদিও এএসআইয়ের পক্ষে দাবি করা হয়েছিল, তারা যেভাবে সমীক্ষা করবে, তাতে মসজিদের কোনো ক্ষতি হওয়ার শঙ্কা নেই। সুপ্রিম কোর্টকে আশ্বস্ত করে সলিসিটর জেনারেল গত সোমবার জানিয়েছিলেন, একটি ইটও সরানো হয়নি। অন্তত এক সপ্তাহ কোনো খননকাজও করা হবে না।

বারানসির কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরের লাগোয়া জ্ঞানবাপি মসজিদ হিন্দু মন্দির ধ্বংস করে গড়ে তোলা হয়েছে বলে দাবি করছে হিন্দুত্ববাদীরা। সেই দাবির সত্যতা প্রমাণে তারা উন্মুখ। মসজিদের দেয়ালে হিন্দু দেবদেবীর মূর্তি রয়েছে বলে তাঁদের দাবি। সেই বিগ্রহের নিত্য আরাধানায় দাবিতে মামলাও চলছে।

মসজিদ চত্বরে ‘শিবলিঙ্গ’ পাওয়া গেছে বলে হিন্দুরা দাবি করেছেন। মুসলমানদের দাবি, সেটি মসজিদের ওজুখানার ফোয়ারার মুখ। ওই অঞ্চলটি আপাতত ঘিরে রাখা হয়েছে। হিন্দুরা ওই ‘শিবলিঙ্গের’ বয়স নির্ধারণের জন্য কার্বন ডেটিং পরীক্ষার দাবি জানিয়ে আসছেন।